Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মোটিভ এখনো অনুদ্ঘাটিত!

পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষীকে আবার রিমান্ডে ২৮ দিনে প্রদীপকে জিজ্ঞাসা বাদ করেতে পারেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

মেজর (অব.) সিনহা হত্যার তদন্ত কী একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে? র‌্যাব কর্মকর্তাদের ছোটাছুটি, অক্লান্ত পরিশ্রম, গোয়েন্দা ইউনিটের অব্যাহত তথ্য সহায়তা সত্তে¡ও তদন্ত ক্ষেত্রে দৃশ্যমান সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন না মনে করছেন দেশবাসী। কক্সবাজারের সর্বত্রই সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে চলছে আলোচনা-বিতর্ক। অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলছেন, শেষ পর্যন্ত সবকিছু থেমে যাবে না তো? কারণ ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে’ শব্দের মধ্যেই র‌্যাবের প্রেসব্রিফিং সীমাবদ্ধ থাকায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ছেন মামলা সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে হত্যাকান্ডের ২৮ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার অন্যতম প্রধান আসামী বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সাথে কথা বলতে পারেনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব তৃতীয় দফায় আরো তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে প্রদীপ-লিয়াকত ও নন্দ দুলালকে। এই কারণে ৩১ আগস্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। গতকাল পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষী নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মোঃ আয়াছকে আরো চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে র‌্যাব। এসব কারণে হত্যাকান্ডের যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করা গেলেও ‘ কেন এ হত্যাকান্ড’ সেই মোটিভ সম্পর্কে এখনো তদন্ত কর্মকর্তারা অন্ধকারে বলই মনে করা হচ্ছে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, তদন্ত কর্মকান্ডের সকল পয়েন্টে প্রভাবশালী কোন একজনের প্রভাব আর নানা কৌশলী ভূমিকার কারণে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তদন্ত। ঘটনার দিন ওসি প্রদীপের সঙ্গি হয়ে আর কারা কারা উর্ধ্বশ্বাসে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছেছিলেন তাদের তালিকাটা র‌্যাব কর্মকর্তাদের পেতে নাকি অনেক গলদঘর্ম করতে হয়েছে। ঘটনাস্থলে যাওয়া দুই সাব ইন্সপেক্টর ও এক কনস্টেবলকে তাৎক্ষণিক ভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে রহস্যজনকভাবে। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হলেও তারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।

ওদিকে টেকনাফ থানার সিসিটিভি ফুটেজ ও হার্ডড্রাইভ গায়েব হওয়াটাই সিনহা হত্যার মূল মোটিভ উদঘাটনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া ওসি প্রদীপ বা লিয়াকতের মতো কয়েকজনের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ এলেও তাদের বিরুদ্ধে এতদিন বড় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন জেলা পুলিশ, তদন্তে তাও বিবেচনায় এসেছে বলে জানা গেছে।

তিন সাক্ষীর আবার রিমান্ড সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষীকে আরো চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে র‌্যাব। গতকাল শনিবার কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে র‌্যাবের একটি দল তাদেরকে নিজেদের নিয়ে যায়। রিমান্ডে নেয়া তিন আসামী হলেন- টেকনাফ মারিশবনিয়া এলাকার নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মোঃ আয়াছ।

গত ২৫ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম তাদেরকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে তাদের সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন।

শুনানী শেষে দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক তামান্না ফারাহ্। এর আগে গত ২০ আগস্ট প্রথম দফায় তাঁদের সাত দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছিল। সিনহা খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে ১১ আগস্ট মারিশবনিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

৩১ জুলাই মেজর (অব.) সিনহা নিহত হওয়ার পর সিনহা ও তার সঙ্গে থাকা সিফাতের বিরুদ্ধে মাদক ও পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় মামলা করে পুলিশ। উপপরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিতের দায়ের করা ওই মামলায় এই তিন জনকে সাক্ষী দেখানো হয়েছিল।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ দিয়ে হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোঃ রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ৩টি মামলা হয়। ২টি মামলা হয় টেকনাফ থানায়। সরকারি কাজে বাধা দানের মামলার আসামি করা হয় সিফাতকে। হত্যাচেষ্টা মামলায় সিফাত ও নিহত সিনহাকে আসামি করা হয়। আপরদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রামু থানায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয় সিনহার অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে।

একই ঘটনায় ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, থানার এসআই নন্দলাল রক্ষিতসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
পরের দিন ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এ মামলার অপর দুই আসামি এসআই টুটুল ও মো. মোস্তফা আদালতে হাজির হননি। পুলিশের দাবি, এই নামে জেলা পুলিশে কেউ নেই। তবে আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

সিনহা হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও টেকনাফ পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। আসামীদের র‌্যাব হেফাজত জিজ্ঞেসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। #



 

Show all comments
  • Asgar Alim ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৫ এএম says : 0
    আজব দেশের গজব তদন্ত, দুনিয়ার ইতিহাসে কি কোন খুনিকে তার খুনের স্পট দেখিয়ে দেখিয়ে তদন্ত করা হইছে? বিচারের নামে কেন এতো টালবাহানা?
    Total Reply(0) Reply
  • Abrar Zarif ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৮ এএম says : 0
    তনু হত্যা, সাগর-রুনি হত্যার বিচারের মতো সিনহা হত্যার বিচার কার্যক্রমও যেন দিন দিন ঝিমিয়ে না পড়ে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kawsar Shah ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৮ এএম says : 0
    মেজর সিনহা হত্যার বিচার কি আদৌও হবে??!!
    Total Reply(0) Reply
  • Biswajit Sarker ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৯ এএম says : 0
    তিন চোর একসাথে
    Total Reply(0) Reply
  • MH Murad ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৯ এএম says : 0
    তামাশা চলতেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rejaul Karim ৩০ আগস্ট, ২০২০, ১১:৫৩ এএম says : 0
    আজব দেশের আজব তদন্ত কমিটি ২৮ দিনে ও মোটিভ অনুদঘটিত ।।। তদন্তে যাহাই হোক আর যাহাই ঘটুক সবাই কে মনে রাখতে হবে পৃথিবীর কোন কিছুই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়।।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ৩০ আগস্ট, ২০২০, ১০:৩৭ পিএম says : 0
    এই খবরের এক যায়গায় বলা হয়েছে প্রভাবশালী কোন একজনের প্রভাবে মামলা বিপথে নেয়ার চেষ্টা চলছে। প্রভাবশালী বললে এখানে আমরা সাধারণত বুঝতে পারি পুলিশের দপ্তরের প্রভাবশালী কর্মকর্তা, কোন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা নাকি প্রশাসনিক দপ্তরের প্রভাবশালী কর্মকর্তা। এই তিন দিকের লোকজনই এধরনের মামলায় প্রাভাব বিস্তার করে মামলাকে তাদের ইচ্ছামত নাড়াচাড়া করে তাদের পক্ষে নিতে পারে। কাজেই এখানে সাংবাদিক কাদের প্রভাব সেটা পরিষ্কার করেননি, তবে সাংবাদিকের কথা খুবই সত্য যে, প্রভাবশালীর হস্তক্ষেপে মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এখানে আমার ব্যাক্তিগত একটা বিষয় মনে হচ্ছে সেটা হল র্যাংব এই মামলার তদন্তে কৃতকার্য্য হতে যাচ্ছে। তারা যেভাবে আগে পরে আসামীদের রিমান্ডে নিচ্ছে এতে মনে হচ্ছে একটার সাথে অপরটার মিলানো বা সামজস্য বের করার জন্যে র্যা।ব একটা সুন্দর পদ্ধতীতে এগুচ্ছে। আমি আল্লাহ্‌র দরবারে প্রার্থনা করছি আল্লাহ্‌ যেন র্যা বের এই তদন্তে সফলতা দান করেন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • শফিকুল ইসলাম গাজী ৩১ আগস্ট, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    অব মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ হত্যা মামলা আদৌ আলোর মুখ দেখে কিনা সন্দেহ হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahidur Rahman ৩১ আগস্ট, ২০২০, ৪:৫৮ পিএম says : 0
    যদি কোনো দুর্নীতিবাজ বেআইনীভাবে অপরাধীকে শাস্তির থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, সৃষ্টিকর্তা যেন তার কোল খালি করে তার দুর্নীতির শাস্তি দেন !!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিনহা হত্যা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ