পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একে একে বেরিয়ে আসছে মেজর (অব) সিনহা হত্যা মামলার আসামি প্রদীপ কুমার রায় ও লিয়াকত আলীর অপরাধকান্ড। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে চাকরি করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নামে একের পর এক অপরাধ কান্ড ঘটিয়ে টাকা রোজগার করেছেন। ক্রসফায়ারের নামে মানুষ খুন করেছেন। গতকালও প্রদীপের নামে ক্রসফায়ার এবং লিয়াকতের নামে চাঁদাবাজির মামলা দাযের করা হয়েছে। এদিকে সিনহা হত্যাকান্ড ঘটনার প্রতয়ক্ষদর্শী এপিবিএন এক সদস্য আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম তদারক করছেন র্যাব প্রধান নিজেই। সে জন্যই র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এখন কক্সবাজার রয়েছেন বলে জানা গেছে । গত মঙ্গলবার তিনি কক্সবাজার এসেছেন। তদন্ত কার্যক্রম সরেজমিনে দেখাশোনা ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে র্যাব মহাপরিচালক কয়েকদিন কক্সবাজারে অবস্থান করবেন বলেও জানা গেছে। এসময় সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন র্যাব মহাপরিচালক। তদন্ত কার্যক্রমের সার্বিক অগ্রগতি ও মামলাটি কীভাবে সুন্দরভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, বাহিনীর প্রধান হিসেবে সেই পরামর্শ দেবেন তিনি।
এদিকে একাধিক সূত্র মতে, চাঁদাবাজি ও ইয়াবা বাণিজ্যে একটি সিভিল টিম পরিচালনা করতেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। অধিকাংশ সময় সিভিল ড্রেসে এই টিমের সদস্যরা মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে লোকজনকে ধরে নিয়ে আসত। আর সুযোগ বুঝে তারাই ইয়াবার বড় বড় চালানগুলো হাত বদল করে বাগিয়ে নিতেন কোটি কোটি টাকা। এই কাজে ব্যবহার করা হত রোহিঙ্গাদের এবং স্থানীয় কিছু মানুষকে। তবে মাঝে মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে তাদের ক্রসফায়ারে হত্যা করা হত।
প্রদীপের সিভিল টিমের সদস্যরা হলেন- এসআই স›দ্বীপ, ফকরুল, মিঠুন, সুদীপ ও ছাব্বির, এএসআই রাম ও নিজাম। দ্বিতীয় সিভিল টিমের সদস্যরা হলেন- এসআই রুবেল, নাজির, কামরুজ্জামান ও শাহিদ। এই টিমের একজন সদস্য ছিলেন সাগর। যিনি সিভিল টিমের সিভিল সদস্য ছিলেন। সূত্র মতে, সাগর ওসি প্রদীপের আত্মীয়। আর প্রদীপের ভাগিনা বলে পরিচয় দিতেন এএসআই মিঠুন। এরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ এরাই ছিল ওসি প্রদীপের সকল অপকর্মের সহযোগী। এদেরকেও আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানিয়েছেন এলাকার নির্যাতিত মানুষ।
সংশ্নিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশব্যাপী আলোচিত এ মামলায় যাতে কোনো ত্রæটিবিচ্যুতি না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন তদন্ত সংশ্নিষ্টরা। কে কী কারণে সিনহাকে গুলির ঘটনা ঘটাল, তা নিশ্চিত হতে আসামি ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনাটি তাৎক্ষণিক নাকি পরিকল্পিত তাও বের করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনও এই মামলার আসামিরা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। গুলি নিয়েও নাকি একাধিক ভাষ্য দিয়েছেন তারা।
এ দিকে সিনহাকে গুলি করার ঘটনাটি তাৎক্ষণিক, নাকি পরিকল্পিত, এর উত্তর পেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়, সে ব্যাপারে কমিটি সুনির্দিষ্ট মতামত তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরবেন। ৩১ আগস্টের মধ্যে সিনহা হত্যা ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দেয়ার কথা রয়েছে। তার আগে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন কমিটির সদস্যরা। এখন পর্যন্ত ৬৮ জনের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি।
ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দ দুলালকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব। তাদের চার দিনের রিমান্ড শেষ হবে শুক্রবার। আটক পুলিশের অন্য চার আসামির দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর হলেও তাদের এখনও হেফাজতে নেয়নি র্যাব।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় গত ৫ আগস্ট তার বোন শাহরিয়া শারমিন ফেরদৌস ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী ও নন্দ দুলাল রক্ষীতসহ পুলিশের ৯ সদস্যকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্ত সংস্থা র্যাব এখন আসামিদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
প্রবাসী মাহমুদুর হত্যার মামলা: জোরপূর্বক ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে পাঁচ লাখ টাকা নেয় ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ আসামিরা। আরো পাঁচ লাখ টাকা না দেয়ায় টেকনাফ মৌলভীপাড়ার মাহমুদুর রহমান নামে এক প্রবাসীকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করে আসামিরা। এমন অভিযোগে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার এজাহার দায়ের করা হয়েছে টেকনাফ থানায়।
গত বুধবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টেকনাফ ৩ আদালতে এজাহারটি দায়ের করা হয়। তবে বেলা ২টার দিকে শুনানী শেষে এজাহারটি রুজু না করে ওই ঘটনায় অন্য কোনো হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে কিনা তা জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নিহত মাহমুদুর রহমানের ভাই নুরুল হোসাইন বাদি হয়ে এই এজাহার দায়ের করেন। বাদি পক্ষের আইনজীবী ইনসাফুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
এজাহারে বাদি জানান, গত বছরের ২৮ মার্চ টেকনাফ মৌলভীপাড়া মিয়া হোসেনের পুত্র প্রবাসী মাহমুদুর রহমানকে থানার এসআই দীপকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। প্রথমে তাদের ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। পরে দীপক ও ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ক্রসফায়ার না দেয়ার শর্তে প্রবাসীর পরিবারের লোকজন থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। পরিবার নিরুপায় হয়ে পাঁচ লাখ দেন। কিন্তু আরো পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে পুলিশ। দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা না দেয়ায় ৩১ মার্চ রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারের প্রবাসী মাহমুদুর রহমানকে হত্যা করা হয়।
মামলার এজাহারে এসআই দীপককে প্রধান ও বহিস্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২নং আসামি করে মোট ২৩জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ১৮ জন পুলিশ সদস্য বাকি পাঁচজন চৌকিদারসহ স্থানীয় লোকজন। বাদি পক্ষের আইনজীবী ইনসাফুর রহমান বলেন, বাদির দায়ের করা ফৌজদারি এজাহারটি আদালত আমলে নেন। ওই কথিত বন্দুযুদ্ধ সংক্রান্ত মামলার এহাহারসহ সকল কাগজপত্র আসামি ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে দাখিল করার জন্য টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
লিয়াকতের চাঁদাবাজির মামলা: ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির অভিযোগ মেজর (অব.) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যার প্রধান আসামি টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও ৩ পুলিশ সদস্যসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন জসিমউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী। আদালত মামলা আমলে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। এসআই লিয়াকত ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাতকানিয়া থানার এসআই নজরুল, দাউদকান্দি থানার এসআই হান্নান, জিয়াউর রহমান, বিসনুপদ পালিত, কাজল কান্তি বৈদ্য ও এস.এম সাহাবউদ্দিন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৪ জুন ব্যবসায়ী জসিমকে একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসেন এস আই লিয়াকত। পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। ওই ব্যবসায়ী আড়াই লাখ টাকা দেয়ার পর তাকে একটি চুরি মামলায় আদালতে চালান দেয়া হয়। প্রায় ২০ দিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্ত হন ওই ব্যবসায়ী।
টেকনাফেও রয়েছে এই লিয়াকতের বিরুদ্ধে মানব পাচার, মাদক পাচার এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির অনেক অভিযোগ।
১৬৪ জবানবন্দি : সিনহা হত্যা মামলার আসামি ঘটনার প্রতয়ক্ষদর্শী এপিবিএন সদস্য কনস্টেবল আবদুল্লাহ আদালতে ১৬৪ ধারায় অর্থাৎ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে তিনি প্রায় পাঁচ ঘন্টা জবানবন্দি প্রদান করেন।
র্যাব সূত্র জানায়, ১৭ আগস্ট র্যাব টেকনাফ বাহার ছড়ায় ফাঁড়িতে দায়িত্বরত এপিবিএন এর ৩ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তারা হলো, এএসআই শাহজাহান, কনস্টেবল ফারুক ও আবদুল্লাহ। ১৮ আগস্ট আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ২৩ আগস্ট তাদের রিমান্ডের জন্য হেফাজতে নেয় র্যাব।
এপিবিএন’র এই তিনজন সদস্য শামলাপুর ঘটনাস্থল এপিবিএনের চেকপোস্টে দায়িত্বরত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।