Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লিয়াকত-নন্দকে ওসি প্রদীপের দোষারোপ

জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষী আরো ৪ দিনের রিমান্ডে : ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি আত্মগোপনে : লিয়াকতের এলোমেলো বক্তব্য

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামিদের দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব প্রথম দফায় আসামিদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ায় দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে আসামিদের দেয়া তথ্য খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে। এদিকে রিমান্ডে ওসি প্রদীপ মেজর (অব.) সিনহা হত্যার দায় লিয়াকত ও নন্দ দুলালের ওপর চাপিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। আর লিয়াকতও জিজ্ঞাসাবাদে এলোমেলো বক্তব্য দিচ্ছেন।
অন্যদিকে সিনহা হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ১৩ আসামির পর্যায়ক্রমে আলাদা করে সাত দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। র‌্যাব দ্বিতীয় দফায় সব আসামির আরো ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। এই ধারাবাহিকতায় গতকাল পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে আরো চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল বেলা সোয়া ১২টায় জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহ এ আদেশ দেন। এর আগে গত ২০ আগস্ট এ মামলার আসামিদের প্রথম দফায় ৭ দিনের রিমান্ড শেষ হয়।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে র‌্যাবের একটি দল টেকনাফের মারিশবুনিয়া এলাকা থেকে গত ৯ আগস্ট পুলিশের দায়ের করা মামলার এ তিন সাক্ষীকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন- টেকনাফের বাহারছড়ার মারশবুনিয়া এলাকার নাজিম উদ্দিন নাজুর পুত্র নুরুল আমিন, নজির আহমদের পুত্র নিজাম উদ্দিন ও জালাল আহমদের পুত্র মোহাম্মদ আয়াছ।
র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তার ১০ দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিল আদালত। এ ৩ আসামিকে গত ১৪ আগস্ট র‌্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত ২০ আগস্ট আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের আরো ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
ওসি প্রদীপসহ অন্যান্য আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, সেদিন চেকপোস্টে গুলি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন? এর জবাবে লিয়াকত দাবি করেছেন, তিন সোর্স তাকে জানিয়েছিল, যারা গাড়িতে আসছেন তারা ডাকাত। এটা বিশ্বাসও করেছিলেন তিনি। ঘটনার সময় নিজেকে নাকি অনিরাপদ! মনে করেন লিয়াকত। এ কারণে আগেই গুলি ছোড়েন। পরে বুঝতে পারেন সোর্স তাকে মিসগাইড করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তিন সোর্স নুরুল আমিন, মো. নাজিমুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।
তিনি আরো বলেন, লিয়াকত দাবি করেছে, তিন সোর্সের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর এসআই নন্দ দুলালকে নিয়ে দ্রুত এপিবিএনের চেকপোস্টে চলে আসেন। নন্দ দুলালের মোটরসাইকেলে সিভিল ড্রেসে তারা এসেছিলেন। এপিবিএনের সদস্যরা পরিচয় পেয়ে সিনহার গাড়ি ছেড়ে দিলেও চেকপোস্টের শেষ মাথায় ড্রাম ফেলে তা আটকে দেন লিয়াকত। এরপর ঘটে সেই নির্মম ঘটনা। গুলি করার ব্যাখ্যায় কিছুটা এলোমেলো তথ্য দিচ্ছেন লিয়াকত। কখনও কখনও বলছেন, তার মনে হয়েছে অপরপাশ থেকে এক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে। আবার বলছেন, মনে হয়েছে যে কোনো সময় তাদের ওপর গুলি করা হতে পারে। এটাও বলেছেন, ডাকাতের কাছে অস্ত্র থাকতে পারে- এমন আশঙ্কা ছিল তার। বলছেন, অস্ত্র তার দিকে তাক করা হয়েছিল। পুরো ঘটনাটি নিয়ে তার বোঝার ভুল ছিল বলে দাবি করেন লিয়াকত। এমনও বলছেন, এজাহারে যে বক্তব্য রয়েছে, সেটাই তার কথা। এদিকে মামলার এজাহারে পুলিশ দাবি করেছিল, মেজর পরিচয় দেয়া ব্যক্তি গুলি করতে উদ্যত হলে ৪ রাউন্ড গুলি করেন লিয়াকত।
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন রাত ৯টা ২৯ মিনিটের দিকে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এরপর লিয়াকত ফোন করেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে। ১০টা ৫ মিনিটের দিকে প্রদীপ ঘটনাস্থলে আসেন। প্রদীপ এসে এখানে সেখানে ফোন করেন। ঘটনাস্থল থেকে থানার যে দূরত্ব তাতে ওই সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ওসি প্রদীপ আগে থেকেই কাছে কোথাও ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি আত্মগোপনে : পুলিশের গুলিতে নিহত সিনহা হত্যার ঘটনায় বরখাস্ত টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি করণ বাসা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি কোতয়ালী থানার পাথরঘাটা লক্ষীকুঞ্জ বাসা থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
তবে গোয়েন্দা সূত্র মতে, তিনি চট্টগ্রাম মাদারবাড়িস্থ নালাপাড়ায় প্রদীপ কুমার দাশের বড় বোনের বাসায় রয়েছেন। এদিকে গত রোববার ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি করণের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত আয়ের অভিযোগে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দায়ের করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।



 

Show all comments
  • Mr Md B Hussain ২৬ আগস্ট, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    র‍্যাব
    Total Reply(0) Reply
  • জুয়েল ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৩:১৩ এএম says : 0
    লিয়াকৎ নন্দ প্রদীপ 3 জন ই সমান অপরাধী
    Total Reply(0) Reply
  • কিশোর ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৩:১৩ এএম says : 0
    এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৩:১৪ এএম says : 0
    সব তো এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে। অনতিবিলম্বে তাদের শাস্তি দেওয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • দুলাল ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৩:১৫ এএম says : 0
    অনতিবিলম্বে ওসি প্রদীপ এর স্ত্রী চুমকি কে গ্রেফতার করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • আশরাফুল ইসলাম ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৩:১৬ এএম says : 0
    এই ঘটনা কেন ঘটেছে কারা ঘটিয়েছে কিভাবে ঘটিয়েছে সবকিছুই এখন দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল ইসলাম ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৩:১৭ এএম says : 0
    অনতিবিলম্বে এদের প্রত্যেককে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ধরনের কাজ করার চিন্তাও করার সাহস না পায়
    Total Reply(0) Reply
  • রিয়াজউদ্দিন ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৩:১৭ এএম says : 0
    এখনো এদেরকে জেকি জিজ্ঞাসাবাদ করে সেটাই আমার বুঝে আসেনা
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৩:১৮ এএম says : 0
    এই ঘটনার সাথে জড়িত প্রত্যেকের আয়ের হিসাব নেওয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • পাবেল ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৩:১৯ এএম says : 0
    শুধু পুলিশ নয় বড় বড় সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযান পরিচালনা করা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • Rs Rakib ২৬ আগস্ট, ২০২০, ১১:০৯ এএম says : 0
    এরা সবাইবাংলারদুশমন
    Total Reply(0) Reply
  • sakib ২৬ আগস্ট, ২০২০, ১১:৪২ এএম says : 0
    Sakkhi imam shoh, prottokkho onek sakkhi police gum korece.
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৬ আগস্ট, ২০২০, ১০:২৮ পিএম says : 0
    রিমান্ডে নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রদীপ বাবু, লিয়াকত মিয়ার দেয়া তথ্য বিষস্ত সূত্রে পাওয়া সংবাদে বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী বলাযায় মেজর (অবঃ) সিনহাকে পুলিশ হত্যা করেছে এই বিষয়টা পরিষ্কার। তবে প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই হত্যাকান্ড? এটাই বের করা বিশেষ প্রয়োজন বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন। নিন্দুকেরা মন্তব্য করেছেন যে, মেজর (অবঃ) সিনহার হত্যাকন্ডে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে সেটা হচ্ছে পুলিশ তাদের পকেট ভরার জন্যে পাগলা কুকুরের মত করে মানুষকে কামড়াতে থাকে। আরো একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে সেটা হচ্ছে থানার পুলিশেরা এভাবে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে উপেরর কর্মকর্তাদেরকেও অংশ দিয়ে থাকেন যে জন্যে থানার পুলিস যতই অপকর্ম করুকনা কেন সেটার কোন বিচার নেই। নিন্দুকেরা তাদের অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, এখন দেশের প্রশাসনিক প্রধানকেই এই বিষয়ের উপর নজর দিয়ে এই ঘুষ খাওয়ার পদ্ধতী বন্ধ করার জন্যে জাতীর জনকের সময় যেভাবে পুলিশকে জবাবদাহীর মধ্যে রেখে নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছিল সেইভাবেই আবার পুলিশদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাবস্থা করা দরকার। আল্লাহ্‌ বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে জনগণের কল্যাণে ন্যায় নীতির উপর ভিত্তি করে পুলিশের এসব অপকর্ম চিরতরে বন্ধ করার ক্ষমতা প্রদান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিনহা হত্যা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ