পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : হরিতকী গাছের ফুল দেখতে খুবই সুন্দর। হরিতকী গাছের ফল এক মহৌষধ। গ্রীষ্ম ও বর্ষার বৃষ্টিভেজা বনে-জঙ্গলের গাছে গাছে এই হরিতকী ফুল শোভা পায়। বড় বড় সবুজ লম্বাটে পত্রবহুল ডালপালার প্রান্তে ফুটে এসব ফুল। গাঢ় হলুদাভ সাদা ফুলের মঞ্জরি কবি মনকে দোলা দেয়। দৃষ্টি কাড়ে ভাবুক মানুষের। শ্রাবণের ঘন বরষায় হরিতকীর ফুল জঙ্গলের পরিবেশকে আন্দোলিত করে। সিল্কের মতো নরম সবুজ পাতার ওপর ফুলের মঞ্জরি এবং ওপর বৃষ্টির ফোঁটা আর মেঘ- রোদের খেলা জঙ্গলে এক অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা করে। জঙ্গলে সৃষ্টি হয় এক মোহময় আভা।
কিন্তু দেশের বর্তমান প্রজন্ম এই মহা মূল্যবান হরিতকীর ফুল চেনে না। চেনে না হরিতকী, জানে না হরিতকীর গুণাগুণ, বোঝে না হরিতকীর গুরুত্বও। দেশের ঔষধি ফলসমূহের মধ্যে হরিতকী হচ্ছে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ঔষধি ফল। বাংলাদেশ ও ভারত এর আদি জন্মভূমি।
স্বাধীনতা-পূর্বকালে দেশে বনে-জঙ্গলে প্রচুর হরিতকী গাছ ছিল। বর্ষা মৌসুম এলে গাছে গাছে ফুলে ফলে ভরে যেত। ঔষধি ফল হলেও এর ব্যাপক ফলন তথা প্রাচুর্যের কারণে জঙ্গলে উৎপন্ন হয়ে জঙ্গলেই মাটিতে মিশে যেত। গ্রাম্য কবিরাজ তথা গ্রামের সচেতন মানুষ ওষুধের প্রয়োজনে কিছু কিছু ফল সংগ্রহ করে শুকিয়ে রেখে দিত। শুকনো হরিতকী অনেক বছর ভালো থাকে বলে আগের বছর সংগ্রহ করলে পরের বছর আর প্রয়োজন হতো না। এদিক থেকে প্রাচীন বাংলায় হরিতকী ছিল একটি ফেলনা ফল। চিকিৎসা শাস্ত্রিকদের মতে, এই ফেলনা হরিতকী হচ্ছে সর্বরোগের ওষুধ। সকাল বেলা হরিতকী ভেজানো পানি খেলে অবার অনেক রোগ ভালো হয়ে যেত। হরিতকী বহেরা ও আমলকীর একত্র মিশ্রণকে বলা হয় ‘ত্রিফলা’। গ্রামের মানুষ যুগ যুগের পরিচিত এই ত্রিফলার পানি পান করে নিজেদের রোগ-বালাই থেকে মুক্ত রাখতে পারত। বাত, কফ, কাশি, শ্লেষ্মা বাড়লে হরিতকী গুঁড়ো করে ব্যবহার করলে আরোগ্য পাওয়া যায়। হরিতকীচূর্ণ ঘির সাথে মিশিয়ে খেলে পিওশূল দূর হয়। পাইলস, হাঁপানি, চর্মরোগ, ক্ষতরোগ ইত্যাদি রোগে হরিতকী ব্যবহার করা হয়। এছাড়া রক্তচাপে, অন্ত্রের খিঁচুনী, হৃৎপি- ও অন্ত্রের বিভিন্ন অনিয়ম দূর করে। হরিতকী রেচক, পরজীবনাশক ও স্নায়বিক শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
হরিতকী তেঁতো গন্ধবিশিষ্ট একটি ঔষধি। এতে রয়েছে প্যানিন, অ্যামাইনো এসিড, ফ্রকটোজ সার্কমিনিক এসিড, বিটা সাইটোস্টেরল। সুদূর অতীতকাল থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা শাস্ত্রিকরা তাদের শাস্ত্রমতে, হরিতকীকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। পৃথিবীতে যখন একমাত্র ভেষজদ্রব্য ও বিভিন্ন প্রাণী ছিল ওষুধের উৎস, তখন থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে হরিতকীর ব্যবহার হতে থাকে। বর্তমান পৃথিবীর আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ওষুধের উৎস হিসেবে যখন ভেষজ, প্রাণীজ, খনিজ ও সিনথেটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে তখনো হরিতকীর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে চলছে। ইউনানী, আয়ুর্বেদ, হেকিমী, বনাজী, মঘা, হোমিও এমনকি অ্যালোপ্যাথিক শাস্ত্রেও হরিতকীর ব্যবহার হচ্ছে প্রচুর। পৃথিবীতে হারবাল ওষুধ সামগ্রীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে সব চিকিৎসা বিজ্ঞানীই বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে হরিতকীর ব্যবহার শুরু করেছে। অথচ বাংলাদেশের বনে-জঙ্গলে এখন আর হরিতকী গাছ দেখা যায় না। স্বাধীনতা-উত্তরকালে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হরিতকী গাছও উজাড় করে কেটে ফেলা হয়েছে। এখন হরিতকী গাছ পাওয়া যায় যেসব এলাকায়, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঔষধি গাছ চাষাবাদ হয়ে থাকে। যার ফলে দেশের সাধারণ বন-জঙ্গলে এখন আর হরিতকী গাছ নেই। এখন বাজারে যেসব শুকনো হরিতকী পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই ভারত থকে আমদানিকৃত হরিতকী। দামও খুব চড়া। ওষুধের প্রয়োজনে মানুষ চড়া দাম দিয়েই হরিতকী কিনতে বাধ্য হচ্ছে। ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ঔষধি গাছ রোপণের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তৎকালে সরকারি কর্মসূচি অনুযায়ী নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হরিতকী গাছ রোপণ করা হয়। এ গাছগুলো এখন ফল দিতে শুরু করেছে। বর্ষা এলেই গাছগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক ফুল ধরে, ধরে প্রচুর ফলও। এমনই একটি গাছ হচ্ছে নরসিংদী পাবলিক হেলথ অফিসের ভেতরে। গাছটি রাস্তার ধারে বিধায় প্রতি বছরই পল্লী বিদ্যুতের লোকজন গাছটি কেটে-ছেঁটে সর্বনাশ করে দেয়। এরপরও গাছটি কিছু ডালপালা নিয়ে টিকে আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ গাছটির কোনো যতœ নেয়নি। এরপরও বর্ষা এলে ফুল-ফলে ভরে যায়। এই গাছটি থেকে তোলা হয়েছে হরিতকী ফুলের দৃষ্টিনন্দন ছবিটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।