Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলছে চাঁদাবাজি

দখলমুক্ত হয়নি গুলিস্তান

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান দখলমুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেই। রাস্তা, ফুটপাত, সরকারি জায়গা, মার্কেট সবই একে একে দখল হয়ে যাচ্ছে। মার্কেট, ফুটপাত, রাস্তা, অলিগলি দখল করে হকারদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। বিনিময়ে চিহ্নিত সিন্ডিকেট প্রতিদিন মোটা অঙ্কের চাঁদা তুলছে। এ চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। থানায় মামলা, পাল্টা মামলাও হচ্ছে। অথচ প্রশাসন নির্বিকার।
এদিকে, ফুটপাত ও রাস্তা দখলের কারণে গুলিস্তানে রাতদিন যানজট লেগেই আছে। বিশেষ করে হানিফ ফ্লাইওভারের নামার মুখে যানবাহনের বিশৃঙ্খল অবস্থা প্রতিনিয়ত ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি করছে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে পুরো ফ্লাইওভারসহ গুলিস্তানের আশপাশের এলাকায়। এতে করে নগরবাসিকে প্রতিনিয়ত সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিনই নতুন নতুন ফুটপাত ও রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে। পুরো গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাতের কোনো অংশ আর খালি নেই। বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য ফুটপাতের উপরে পলিথিনের ছাউনি দেয়া হয়েছে। এজন্য আর ফুটপাত দিয়ে চলার মতো অবস্থা নেই। হানিফ ফ্লাইওভারের নামার অংশের সামনে চারমাথায় ফুটপাত ছাপিয়ে রাস্তার সিংহভাগ এখন হকারদের দখলে। সে কারণে এ স্থানে যানবাহনের জটলা লেগেই থাকছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে সে যানজট নিরসনে মাঝে মধ্যে তৎপর দেখালেও রাস্তা বা ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কোনো উদ্যেগ নিতে দেখা যায়নি। হকাররা জানান, পুলিশকে ম্যানেজ করে লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরা তাদেরকে ফুটপাত ও রাস্তা দখলের সুযোগ করে দিয়েছে। আর এসব লাইনম্যানদের পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। যাদের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সহযোগী আবু হান্নান ও তার সহযোগীরা। হান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, পুলিশ সদর দপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন দপ্তরে। ক্যাসিনো ব্যবসার সম্পৃক্ততা থাকায় বিষয়টি খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। গুলিস্তানের সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে রাজিব আহমেদ স্বাক্ষরিত বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ অফিসে গুলি ও হামলা চালায় হান্নানের নেতৃত্বে একটি দল। ওই ঘটনায় মতিঝিল থানায় হান্নানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত হান্নান ও তার ভাই যুবদল নেতা নিক্সন গুলিস্তান ইউনিট যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমরানকে দিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হান্নান নাম পরিবর্তন করে আবু হান্নান সিদ্দিক নাম নিয়ে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেয়। টোকাই থেকে সন্ত্রাসী হওয়া হান্নান গুলিস্তানের বিভিন্ন অলিগলি থেকে কোটি কোটি চাঁদা তুলেছে। হান্নান ও তার সহযোগী রাজু এবং মোতালেব হাজারী তৎকালীন বিএনপি নেতা কানা কামালের হাত ধরে গুলিস্তানে আসে টোকাই হিসেবে। পরে চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপ আবুল বাহিনীর মোতালেব, পকেটমার উজ্জ্বল, দারোয়ান আসাদ ও লিমনের সহযোগিতায় এবং তাদের আশ্রয়ে থেকে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে। অভিযোগে আরও বলা হয়, হান্নান ও তার বাহিনী আব্দুল গনি রোড ইউনিটের সভাপতি মশিউর রহমান মানিককে স¤প্রতি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। মানিক শাহবাগ থানায় হান্নানের বিরুদ্ধে গত ২১ মার্চ একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। সিটি কর্পোরেশনের ভাঙারী ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় হান্নান। এছাড়া বিদ্যুৎ ভবনে সকল ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রণ করেন হান্নান। অস্ত্রের মুখে নিজের নামে কাজ বাগিয়ে নিতে এবং সাধারণ ঠিকাদারদের কাছ থেকে পারসেন্টেজ বাগিয়ে নেওয়াই তার পেশা। গুলিস্তানে কাশেমের গলিতে প্রতিদিন লাখ টাকার বেশি চাঁদা তোলে হান্নান বাহিনীর সদস্যরা। এই চাঁদাাবজি নিয়ন্ত্রণ করে শাহজালাল ও দারোয়ান আসাদ। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আবু হান্নান সিদ্দিক বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার নামে কুৎসা রটাচ্ছে। এসব অভিযোগ সত্য নয়। এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, যুবলীগের বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধের কারণে জিডি ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থানায় আসছে। তারা প্রায় সবাই বহিরাগত হওয়ায় তাদের মামলা নেওয়া হয়নি। হান্নান ছাড়াও গুলিস্তানে একাধিক চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে থানায় বা প্রশাসনের কাছে কেউ অভিযোগ করার সাহস পায় না।

জানা গেছে, গুলিস্তানে দখদারিত্বের নেপথ্যে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি। গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকার রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বসে কমপক্ষে ৮ হাজার হকার। এসব হকারদের কাছে থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলে পুলিশের নিয়োগকৃত লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরা। এদের হাতে গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার ফুটপাত থেকে প্রতিদিন চাঁদা উঠছে ২০ লাখ টাকার বেশি। এই টাকার ভাগ স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, মাস্তান, পুলিশ, সোর্স সবাই পায়। এর বাইরে গুলিস্তানে সরকারি মার্কেট দখল করেও চলে চাঁদাবাজি। সরকারি জায়গা জমি দখল করে সেখানে দোকান তৈরি করে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গুলিস্তান রেলওয়ে মার্কেটের পাশে বিদ্যুৎ অফিসের দেয়াল ঘেঁষে ৮টি দোকান তোলা হচ্ছে। অবৈধভাবে নির্মিত এই দোকানগুলোর নেপথ্যেও হান্নানের সহযোগীদের হাত রয়েছে বলে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাঁদাবাজি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ