Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রদীপের গতিবিধি এসপির ফোনালাপ

প্রদীপ-লিয়াকত-নন্দকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাধান্য পাচ্ছে

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামী ইনস্পেক্টর লিয়াকত, বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও এসআই নন্দ দুলালসহ ১০ আসামীর জিজ্ঞাসাবাদ চলছে র‌্যাব হেফাজতে। পরে গ্রেপ্তার হওয়া আরো তিন আসামী এপিবিএন সদস্য এখনো রিমান্ডে নেয়া হয়নি। এটি এক প্রকার নিশ্চিত বিষয় যে আসামীরা সবাই মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। তবে জিজ্ঞাসাবাদে কে কিভাবে জড়িত ছিলো সেটাই এখন খতিয়ে দেখছে মামলার দতন্ত সংস্থা র‌্যাব।

একটি সূত্রে জানা গেছে, ৩১ জুলাই টেকনাফ বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ চেকপয়েন্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকান্ডের সময় ওসি প্রদীপ ও ইনস্পেক্টর লিয়াকতের গতিবিধি ও ফোনালাপ জিজ্ঞাসাবাদে বেশী গুরুত্ব পাচ্ছে। ওই দুইটি বিষয় পরিস্কার হলে ওসি প্রদীপ ও ইনস্পেক্টর লিয়াকত আলীর সাথে সিনহা হত্যার সাথে আর কে কিভাবে জড়িত ছিলো তা পরিষ্কার হবে। ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে ৩১ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে ইনস্পেক্টর লিয়াকত, পুলিশের মামলার সাক্ষী ও হত্যা মামলার আসামী মারিশবনিয়ার নুরুল আমিন, ওসি প্রদীপ ও এসপি মাসুদ হোসেনের সাথে ফোনালাপের বিষয়টি। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব : সেনাবাহনীর (অব.) মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ওই রাত এবং আগে-পরের মোট ১১ দিনের টেকনাফ থানার সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ গায়েব হয়ে গেছে টেকনাফ থানা থেকে। টেকনাফের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি থানার ফুটেজ হাওয়া হয়ে যাওয়া নিয়ে রহস্যেজনক মনে করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে ।

এদিকে গত মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে কারাগারে থাকা আসামি সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত সিনহা হত্যা মামলায় এপিবিএনের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব আদালতে হাজির করলে তাদের প্রত্যেককে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তারা এখন কারাগারে আছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনার রাতে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসের গতিবিধির তথ্য তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিলেন নাকি থানা থেকে বেরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন এই প্রশ্নের উত্তর তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ কারণে বিপদ আঁচ করতে পেরে প্রদীপ কুমার দাস হয়ত তানার ফুটেজ নষ্ট করে ফেলতে পারেন বলে ধারণা তদন্তকারীদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় একজন আইটি টেকনিশিয়ানকে গত ১৫ আগস্ট টেকনাফ থানায় নেওয়া হয়। থানায় সাবেক ওসি প্রদীপের কক্ষে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের জন্য থাকা সরঞ্জাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে মতামত দেন তিনি। ওই মতামতে গত ২৫ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ১১ দিনের কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

মতামতে লেখা হয়, থানার পূর্বপাশের দেয়ালে ১টি এনভিআর বক্স (ডাহুয়া কোম্পানি) পরীক্ষা করে কোনো হার্ডডিস্ক পাওয়া যায়নি। হার্ডডিস্ক না থাকায় কোনো ফুটেজও নেই। এ ছাড়া ওসির টেবিলের পশ্চিম পাশে সংরক্ষিত একই ধরনের বক্সের ভেতর এক টেরাবাইট হার্ডডিস্ক পাওয়া গেলেও তা নষ্ট ছিল। এ জন্য সেখানেও কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। গুরুত্বপূর্ণ ওই রাতসহ থানার ১১ দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ কোথায় গেল এ সম্পর্কে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

শিপ্রার হাইকোর্টে রিট : থানা বা ট্রাইব্যুনাল নয়, মামলা নিয়ে আপাতত উচ্চ আদালতের অপেক্ষায় রয়েছেন নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের টিম সদস্য শিপ্রা দেবনাথ। সে কারণে গতকাল দুপুুুর ১২টার দিকে রামু থানায় মামলা করতে গিয়েও মাঝ পথ থেকে ফিরে এসেছেন শিপ্রা। এর আগে মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর মডেল থানায়ও মামলা করতে গিয়েছিলেন শিপ্রা। কিন্তু কক্সবাজার সদর থানায় তার মামলা গ্রহণ করেনি।
শিপ্রার আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপপ্রচারের অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলার চেষ্টা করছেন নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ।

যাদের বিরুদ্ধে শিপ্রা মামলা করতে চায় তারা হলেন, সাতক্ষীরার এসপি মোস্তাফিজুর রহমান ও এপিবিএন এর এসপি মিজানুর রহমান শেলীসহ আরো দেড় শতাধিক সারাদেশের অজ্ঞাত ব্যক্তি। যারা তাকে নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। তাই মঙ্গলবার রাতে মামলা করতে তিনি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু থানা মামলা নেয়নি। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রামু থানা বা ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার পরামর্শ দেন তাকে। সে মোতাবেক গতকাল বুধবার (১৯ আগষ্ট) দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে রামু থানার দিকে যান তিনি। কিন্তু মাঝপথে ঢাকা থেকে শিপ্রার আইনজীবিরা তাকে রামু থানায় মামলা করতে বারণ করেন। তাই তিনি আবার কক্সবাজার ফিরে আসেন।

এ প্রসঙ্গে শিপ্রার আইনজীবী কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সদস্য এড মাহবুবুল আলম টিপু জানান, এই ঘটনায় হাইকোর্টে একজন আইজীবি ২ পুলিশ সুপারের রিরুদ্ধে রীট পিটশন দাখিল করেছেন। হাইকোর্ট রীটের শুনানী শেষে আজ বৃহস্পতিবার আদেশ দেবেন বলে জানা গেছে। এ কারণে শিপ্রা রামু থানায় মামলা করতে যায়নি। ওই আদেশের প্রেক্ষিতেই পরে মামলা করা হবে। শিপ্রা এখন সেই আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। ##



 

Show all comments
  • Md Halim Ahmed ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৩১ এএম says : 0
    এসপি কে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসা করা হোক আমরা এসপির বিচার চাই
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ruhul Amin Foraji ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৩১ এএম says : 0
    প্রদিপের মাথায় যে সন্মানিত ক্যাপব্যাজটি রয়েছে, তা তার মাথায় বেমানান। তার সুন্দর চেহারা টা দেখলেই মনে হয় এই দেশটা অসহায়। জনগনের নিরাপত্তা কোথায়? এ ধরনের প্রদিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নিকট দাবী জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Junayed Ahmed Jarnel ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৩২ এএম says : 0
    প্রদীপ এর ফাঁশি চাই
    Total Reply(0) Reply
  • উম্মে সুমাইয়া মুসলিমা ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৩৩ এএম says : 0
    শুধু ওসি প্রদিপ আর লিয়াকতের ফোনালাপ ফাঁস হচ্ছে,,, অথচ যে বা যারা ওদের order দিলো তাদের ফোনালাপ ফাঁস হয়না কেনো??? এসব ওসিরাতো চুনো পুটি,,, আসল মানুষ জাতে ধরা না খায় তাই এত ফোনালাপ ফাঁস।।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Farid MD Farid ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৩৪ এএম says : 0
    শুনলেন তো ভাইরা আমাদের পুলিশ কর্মকর্তাদের সাজান ইতিহাস ,, বিনা কারণে একটি মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেও আবার কিনা তার নামেই মামলা দেয় ,, আমরা কি পাবো না এই ধরনের জানোয়ারদের বিচার ।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Gias ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৩৫ এএম says : 0
    বাংলাদেশ পথমে একটা ঘটনা ঘটলে মনে হয় যেন বিচার টা তারা তারি জনগণ দেখতে পাবে তা কিন্তু না দুই দিন পরে দেখা জাই আর কোনু বিচারের নাম গন্ধ ও পাওয়া জাই না
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২০ আগস্ট, ২০২০, ৯:০০ এএম says : 0
    সাংবাদিক ভাইদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সিনহা হত্যা মামলা নিয়ে এখন যা ঘটে চলছে এর সঠিক চিত্র নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে এতে করে দেশের জনগণ পুলিশের অপকৃতি সম্পর্কে অবগত হচ্ছে। এখন নতুন খবর পাওয়াগেল টেকনাফ থানার ১১ দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ গায়েব। এটা ভীষণ এক অপরাধ আর এরজন্যে টেকনাফ থানার বর্তমান ওসি সাহেবকেও দায়ী করা যায় নিন্দুকদের এমনই মন্তব্য শুনা যাচ্ছে। বলতেগেলে পুলিশের পুরো দলই এখন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এতে করে এখন জনমনে মামলার বিষয় অন্যদিকে মোড় নেয় কিনা সেটাই সন্দেহের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আপামর জনগণ এখন সিনহার বোনের দেয়া হত্যা মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। আমরা জানি একজন প্রধানমন্ত্রীর সামান্য একটা মামলা নিয়ে একবের বেশী বলার কোন সুযোগ নেই। তারপরও অবস্থা বুঝাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর যে সিনহার মাকে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন এর উপর পুলিশের কোন প্রভাব পড়েনি এটাই নিন্দুকেরা বলছেন। সবার ধারনা এখন পুলিশ যেভাবে বেপরোয়া হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথাকে পাশে ঠেলেদিয়ে সিনহা হত্যা মামলাকে অন্যদিকে নেয়ার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে তাতেকরে পুলিশকে থামানোর সাধ্য আর কাওরো নেই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া। কাজেই প্রধানমন্ত্রীকেই এখন এই বিষয়টা গুরুত্বের সাথে সমাধান করতে হবে। আল্লাহ্‌ আপনি আপনার নিজগুনে আমাদের দেশের (বাংলাদেশের) অসৎ পুলিশকে সততার পথে ফিরিয়ে আনার ব্যাবস্থা করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • ফাহাদ ২০ আগস্ট, ২০২০, ৯:৫২ এএম says : 0
    এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হওয়া উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • ফিরোজ খান ২০ আগস্ট, ২০২০, ৯:৫৫ এএম says : 0
    এই ঘটনার এমন একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে এরকম কোন ধরনের কাজ যদি কেউ করতে না পারে
    Total Reply(0) Reply
  • মোজাম্মেল হক ২০ আগস্ট, ২০২০, ৯:৫৬ এএম says : 0
    এই ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি হলে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তালুকদার ২১ আগস্ট, ২০২০, ৯:১১ এএম says : 0
    পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক সংস্কার দরকার। এতো দুর্নীতিগ্রস্হ একটি সংস্থা দিয়ে জনসাধারণ কোনো সুফল পাবে না। তারা আইনের প্রয়োগের চাইতে অপপ্রয়োগ করে বেশী। তাদের পোশাকটা শুধু রক্ষকের কিন্তু মন ও মনন ভক্ষকের।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিনহা হত্যা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ