পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না। ফলে মে মাসের মধ্যে (বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে) নগরীর খোঁড়াখুঁড়ি ও রাস্তা মেরামতের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে নগর জুড়ে খানাখন্দ, রাস্তা মেরামতের নামে ভাঙ্গাচোরা এবং সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে নগরবাসীর। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার চলমান উন্নয়ন কাজ সরেজমিন ঘুরে নগরবাসীর এমন দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়।
ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ এই দুই সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তার মতে, প্রতি বছর ৩১ মে’র মধ্যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ করার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে থাকলেও এ বছর তা মেনে চলা সম্ভব হয়নি। কেন হয়নি তার ব্যাখ্যাও তারা নিজেদের মত করেই দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তাদের বক্তব্য হচ্ছে- এ বছর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন একসাথে সাত শতাধিক সড়ক মেরামত ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন গুলশান-২ এর একটি সড়ক মেরামতের কাজসহ বড় বড় কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এ কাজ শেষ হতে আরও ৬/৭ মাস সময় লেগে যেতে পারে। কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে বর্ষা মৌসুমেও তাদেরকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
তবে দুই সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্যের সাথে একমত নন নগরবাসী। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসরত বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক আমজাদ হোসেন মনে করেন, পরিকল্পনার অভাব এবং সুনির্দিষ্ট সময়ে দরপত্র চূড়ান্তকরণ কাজ সম্পন্ন না করতে পারার দায়ভারটা নগরবাসীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়।
আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসরত এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সড়ক ও অলি-গলিতে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এছাড়াও ভাঙাচুরা রাস্তা মেরামতের কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। যে কারণে রাজধানীর প্রায় সবগুলো রাস্তাই এখন খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পড়েছে। এই অসময়ে নগরজুড়ে এই খোঁড়াখুঁড়ি কেন হচ্ছে- তা দেখার কেউ নেই। জবাবদিহিতা থাকলে এমনটি হতোনা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- খানাখন্দকে বেহাল অবস্থা রাজধানীর প্রায় সব সড়কেরই। এর মধ্যে দুয়েকটি দিয়ে কোন রকম চলাফেরা করা গেলেও অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযুক্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কগুলোতে কাদা আর পানি মিলে একাকার হয়ে যায়। এতে বোঝার কোন উপায় থাকে না কোথায় খানাখন্দক আর কোথায় সমতল। এ অবস্থায় চলাচল করতে প্রতিনিয়তই সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে রোদ উঠলেই বাতাসে ধুলা-বালি উড়ে চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাসের সাথে ধুলাবালিতে শ্বাসকষ্ট ও এজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী।
শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীর উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থাকে রাস্তা কাটার সীমিত পরিসরে অনুমোদন দেয়ার কথা থাকলেও এ জন্য রয়েছে কঠোর নিয়মনীতি। এ নিয়মনীতি তদারকি করার মূল দায়িত্বে রয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। অতিগুরুত্বপূর্ণ কোন কারণ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির অনুমোদন না দেয়ার জন্যও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া আছে। এছাড়া সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ২৮ দিনের মধ্যে উন্নয়ন কাজ শেষ করে পুনরায় রাস্তা মেরামত কওে দেয়ার কথা থাকলেও উন্নয়ন কাজ শেষে মাসের পর মাস রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা কর্মীরা এ সমস্ত উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি করে থাকেন। তাদের খেয়াল খুশি মতোই এ কাজগুলো শুরু ও শেষ হয়। বিষয়টি এমন হয়ে গেছে যে, তারা সরকারি নিয়ম-নীতি না মানলেও চলে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস আছে কার! আর যদিও কেউ ভুল করে প্রতিবাদ করে ফেলে তিনি নিজ দায়িত্বেই নাজেহাল হতে হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ইনকিলাবকে বলেন, নগরবাসীর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেইতো সিটি কর্পোরেশনকে এ উন্নয়নমূলক কাজ করতে হচ্ছে। এধরনের কাজ করতে গেলে কিছু সমস্যাতো হতেই পারে। এ জন্য নগরবাসীকেও কিছুটা ভোগান্তি সহ্য করতে হবে। উন্নয়ন কাজ চলার সময়ে ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মেয়র নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বাংলামোটর থেকে নিউ ইস্কাটন এলাকার দিলু রোড পর্যন্ত রাস্তা খুঁড়ে পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করছে ঢাকা ওয়াসা। দিলু রোডের মাঝ বরাবর খোঁড়ায় ও শ্যালোইঞ্জিন বসানোর কারণে ওই সড়কে কোনো ধরনের যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না। এতে কাদাযুক্ত পানি মাড়িয়ে সাবধানে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। অন্যদিকে মগবাজার মোড় থেকে পরিবাগ পর্যন্ত এবং রামপুরার উলন রোড থেকে মালিবাগ পর্যন্ত রাস্তা খুঁড়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের কাজ করছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এ এলাকার বাসিন্দাদেরও ভোগান্তির অন্ত নেই।
শুধু এই কয়টি স্থানে নয়, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে গুলশান, নিকেতন ও মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। দিনের বেলায় ব্যস্ততম সড়কগুলো খোঁড়াখুঁড়ি করে উন্নয়নকাজের কারণে অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে। অন্যদিকে এসব খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রধান সড়কসহ গলিপথে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। আর এ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মৌচাক-মগবাজার উড়াল সড়কের নির্মাণকাজ চলায় সড়কগুলো এমনিতেই সরু হয়ে আছে। এতে রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। তার ওপর নতুন করে ওয়াসা ও ডিপিডিসিসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ভূগর্ভস্থ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করায় মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। তারা বলেন, সরকারি সংস্থাগুলো জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি চিন্তা না করেই নিজেদের খেয়ালখুশিমতো খোঁড়াখুঁড়ি করছে, আবার নির্মাণকাজ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি সড়ক ও ফুটপাতের ওপর ফেলে রাখায় চলাচলের পথ সরু হয়ে আছে। এতে নির্মাণকাজ চলা কোনো কোনো এলাকার মানুষ যানবাহন ছেড়ে হেঁটেই কর্মস্থলে যাতায়াত করছেন।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সিটি কর্পোরেশন কিছু শর্তসাপেক্ষে সড়ক খোঁড়ার অনুমতি দিয়ে থাকে। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ জনদুর্ভোগ হয়, এমন সময় সড়ক খোঁড়া যাবে না। প্রধান সড়কগুলোতে খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে রাতে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সড়ক খননকাজ শেষ করা। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৮ দিন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু যেসব সংস্থা খোঁড়াখুঁড়ি করে সেগুলো বেশিরভাগ সময়ই এ নিয়মের তোয়াক্কা করে না।
রামপুরার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, মগবাজার-মৌচাক সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ চলছে অনেক দিন ধরে। এ কারণে রামপুরা থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। অনেক সময় বাস থেকে নেমে হেঁটে অফিসে যেতে হয়। তিন বছর ধরে এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে নানা ঝক্কিঝামেলা পোহাচ্ছি। এখন শুরু হয়েছে সড়ক খুঁড়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন। ব্যস্ততম সড়কে দিনের বেলায় খোঁড়াখুঁড়ি করা নিষেধ থাকলেও এসব কেউ মানছে না। এই খোঁড়াখুঁড়ি করে যেসব মাটি, ইট ও পাথর তোলা হয়, সেগুলো এবং খোঁড়াখুঁড়ির কাজে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা হয় ফুটপাতসহ সড়কের ওপর। ফলে রাস্তা বা ফুটপাতÑ কোথা দিয়েও হাঁটার পথ থাকে না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান সৈয়দ কুদরাতুল্লাহ বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে সড়ক খননের অনুমোদন দেয় ওয়ানস্টপ সেল থেকে। তবে সেল থেকে এই দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়, খননের কারণে যেন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়।
দিলু রোডের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ বলেন, বাংলামোটর থেকে দিলু রোড পর্যন্ত ওয়াসা ভূগর্ভস্থ পানির লাইন স্থাপনের জন্য সড়কের মাঝ বরাবর খুঁড়ে দুই পাশে মাটি স্তূূপ করে রেখেছে। আবার সড়কের মাঝখানে শ্যালোপাম্প বসিয়ে ড্রেন থেকে ময়লাযুক্ত পানি তুলে সড়কের এক পাশে ফেলছে। এতে সড়কের বেশিরভাগ থাকে কর্দমাক্ত। এমনিতেই এখন এলাকায় রিকশা, গাড়ি কিছুই ঢুকতে পারে না। তার ওপর যদি রাস্তা হয় কর্দমাক্ত, তাহলে হাঁটাচলাই দায় হয়ে পড়ে। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, যারা এসব কাজ করছেন, তারা স্থানীয়দের বিষয়টি বিবেচনা করে কাজ করলে আমাদের ভোগান্তি কম হতো।
পূর্ব শ্যাওড়াপাড়ার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, হাজি আশ্রাফ আলী স্কুল রোড থেকে শুরু হয়ে রানওয়ের উত্তর প্রান্ত থেকে উত্তর কাফরুল এবং ইব্রাহিমপুর পাকার মাথা পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। তিনি বলেন, এ এলাকার রাস্তাগুলো কিছুদিন আগেও খোঁড়া হয়েছিল। এখন আবার খোঁড়া হচ্ছে। একবার খোঁড়ে ওয়াসা, একবার খোঁড়ে ডিপিডিসি, একবার খোঁড়ে তিতাস। সরকারি একেক সংস্থা একেকবার খোঁড়াখুঁড়ি করায় সারা বছরই এসব রাস্তা ব্যবহারের উপায় থাকে না। আবার কোনো কোনো সময় রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ রেখে কাজ করা হয়। এসব রাস্তা দিয়ে যে মানুষ ও যানবাহন চলে, সে চিন্তাই যেন নেই সংস্থাগুলোর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।