Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অন্ধকার সরিয়ে ছুটল আলোর ফোয়ারা

প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৫ পিএম, ৫ আগস্ট, ২০১৬

ইমরান মাহমুদ : এক ছাদের নীচে ৩৭টি ভেন্যুতে ৪২টি ডিসিপ্লিন, ৩০৬টি ইভেন্টে মেডেল মোট ৪২২৪টি। আলো ঝলমলে এই মেডেলগুলো গলায় জড়িয়ে দেশকে গর্বে ভরিয়ে দিতে বিশ্বের ২০৭টি দেশ থেকে ব্রাজিলে এরই মধ্যে পাড়ি জমিয়েছেন ১১৩৬০ জন অ্যাথলেট। তাদের সাথে আসা অফিসিয়াল মিলে সংখ্যাটি ১৮ হাজার ছাড়িয়ে। ১৭ দিনের এই মহাযজ্ঞ নির্বিঘœ করতে আছে ৫ হাজার সেবাকর্মী, ৮৫ হাজার নিরাপত্তা কর্মী। শুধু অ্যাথলিট কিংবা আয়োজকই নয়, লড়াইটা অলিম্পিকের সাক্ষী হতে সাম্বার দেশে আগত ৫ লাখ ট্যুরিস্টেরও। বজ্রবিদ্যুৎ বোল্টের ক্ষীপ্রতা আর জলমানব ফেল্পসদের জলকেলি দেখতে টিকিট যে আছে মাত্র ৭৫ লাখ। লক্ষ্য একটাই- অলিম্পিক। এক অলিম্পিকই যে পারে এমন পরিসংখ্যানে নিজেদের আলোকিত করতে। শুধু আকারেই নয়, মাহাত্বেও এই আসরকে সবার ওপরেই রাখেন ক্রীড়াবোদ্ধারা। প্রাচীন গ্রীক নগরী অলিম্পিয়া থেকে খৃস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দী থেকে যার যাত্রা শুরু। হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ আধুনিক অলিম্পিক এসে দাঁড়িয়েছে ৩১তম আসরে। এতক্ষণে ব্রাজিলের বিখ্যাত মারাকান স্টেডিয়ামে আলোর রোশনাই আর সাম্বার তালে বিশ্ব মাতিয়ে পর্দা উঠে গেছে এবারের গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের।
শুধু আয়োজন এবং অংশগ্রহণের ব্যাপকতা নয়, জাঁকজমক উদযাপনের ক্ষেত্রেও অলিম্পিকের তুলনা নেই। গেমসটির প্রতিবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বরাবরই আগেরটিকে ছাড়িয়ে যায়। প্রথমবারের মত লাতিন আমেরিকায় হওয়া এবারের আসরের স্বাগতিক ব্রাজিলও ঘোষণা দিয়েছিল- যে তাদের উদ্বোধনী আয়োজন ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিককে ছাড়িয়ে যাবে। যদিও অর্থনৈতিক মন্দায় বিপর্যস্ত দেশটিতে অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে ব্রাজিলের উৎসবপ্রিয় জনমানুষের মনে ছিল প্রচ- ক্ষোভ। লন্ডন অলিম্পিক থেকেও বাজেটও কম রিওতে। তবে এসবই তুচ্ছ হয়ে গেছে অলিম্পিকের জৌলুস আর ঐতিহ্যের কাছে। শ্রমিক অসন্তোস, নিরাপত্তা শঙ্কা, জিকা ভাইরাস আতঙ্ক, ডোপ পাপী রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা এর কিছুই পারেনি আসরের রং এতটুকু ফিকে করতে। সৃষ্টি থেকে ব্রাজিলের বেড়ে ওঠা, ফুটবলের দেশের ঐতিহ্য- সব তুলে আনা হয় তিন ঘণ্টার প্যাকেজে। তার ভেতর অবশ্য অনেকটা সময় যায় মার্চপাস্টে। কিন্তু ঘুড়ে ফিরে আসে সাম্বার সঙ্গে সুপার মডেলদের নাচের বিষয়টি।
শুধু ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী সাম্বা নৃত্যই নয়, ছিলো আরো অনেক চমক। রিওর মারাকানা স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে হাজির ছিলেন প্রায় ৮০ হাজার দর্শক। তাদের সাথে টিভিতে সরাসরি দেখে অনুষ্ঠানটি দেখেন বিশ্বের তিন বিলিয়ন মানুষ। উদ্বোধনী আয়োজনে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী বৈচিত্রপূর্ণ সাংস্কৃতিক পরিবেশনাই পেয়েছিলো আধিক্য। সহস্রাধিক অ্যাথলেট জাতীয় পতাকা হাতে প্যারেড করেন। ব্রাজিলের এক ডজন ‘সাম্বা স্কুল’ থেকে আসা ২ শতাধিক নৃত্যশিল্পী বিশেষ পোশাক পরে সাম্বার তালে নাচেন, সুরের মায়াজালে দর্শকদের মোহিত করেছেন ব্রাজিলের বিখ্যাত সব সঙ্গীতশিল্পী। সাম্বা নৃত্যে বাছাই করা হয়েছে আকর্ষণীয় একশজন মেয়েকে। তাদের পোশাকও ছিলো বেশ আবেদনময়ী। পরার পরও নারী শরীরের আশি শতাংশ-ই দেখা যায়। বিশ্বখ্যাত পিয়ানোবাদক পাওলো জোবিমের তৈরি সঙ্গীতের মূর্ছনার মধ্য দিয়ে মঞ্চে আসবেন ‘সেক্স বম্ব’ ব্রাজিল-কন্যা বুন্দচেন। বোসানোভা জ্যাজ গান, ‘দ্য গার্ল ফ্রম ইপানেমা’র সঙ্গে নাচবেন তিনি। সঙ্গে একশো সঙ্গী। যারা অনেকেই ব্রাজিলের উঠতি এবং পরিচিত মডেল। এই নাচের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে ‘ফিউচারিস্ট গেটওয়ে’র সাম্বা থিম।
এর পরই লাইট এন্ড সাউন্ড শো-এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় ব্রাজিলে পর্তুগীজ উপনিবেশের ইতিহাস। এই পর্ব শেষে আলো নিভে যাওয়ার পর মঞ্চ আলোকিত করেন ব্রাজিলের সুন্দরী এবং সুপারমডেলরা। যাদের মাঝে সবচেয়ে আকর্ষণ ছাড়িয়েছে কিংবদন্তি ব্রাজিলিয়ান মডেল বান্ডচ্যান ক্যাটওয়াক। ক্যাটওয়াকের বড় একটি অংশজুড়ে ছিল মেইনস্ট্রিম ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত ধারণা বদলে দেয়া ট্রান্সজেন্ডার মডেল লি-টি। অলিম্পিকের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত কোনও ট্রান্সজেন্ডার মডেল মঞ্চ মাতিয়েছেন। আর এর সবই নিজ হাতে তদারকি করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত পরিচালক।
শতাব্দী প্রাচীন এই ক্রীড়া আয়োজনে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অলিম্পিক মশাল। এই মশাল বহন করা অনেক সম্মানের এবং সম্মানীয় বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গই সাধারণত এই মশাল বহন করেন। এই মশাল ধীরে ধীরে অলিম্পিক স্টেডিয়ামের দিকে এগিয়ে চলে। শেষ মুহূর্তে মশাল দিয়ে স্টেডিয়ামের মূল বিশাল মশালটি প্রজ্বালন করেন ফুটবল কিংবদন্তি পেলে। রোগা শরীরে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে এমন উপলক্ষ্যকে আরো হাজারগুণে আলোকিত করে তোলেন ব্রাজিলিয়ান গ্রেট। হাতে লাঠি নিয়ে যখন মশালটি নিয়ে এগুচ্ছিলেন প্রজ্বলিত করতে, তখন অনেকেরই মনে উঁকি দিয়ে গেছে সদ্য মরহুম আরেক কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলির অবয়ব। গেল লন্ডন অলিম্পিকের মশালটি প্রজ্জ্বলিত হয়েছিলো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুষ্টিযোদ্ধার হাতেই। আজ তিনি নেই, আছে কেবল স্মৃতি। এই স্মৃতি সাথে করেই শুরু হয়ে গেল এবারের অলিম্পিকের পথচলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অন্ধকার সরিয়ে ছুটল আলোর ফোয়ারা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ