পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘গোয়েন্দা জালে দেশের সকল জঙ্গি, নাশকতা বা হামলার সুযোগ নেই’
যে কোনো অপরাধীর সম্পর্কে দ্রুত মিলছে নানা তথ্য
‘রিপোর্ট টু র্যাব’ এবং ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসে ব্যাপক সাড়া মিলছে
উমর ফারুক আলহাদী : জঙ্গিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে তাদের অপরাধমূলক কর্মকা- সংগ্রহে র্যাব-পুলিশের অ্যাপসে ব্যাপক সাড়া মিলছে। প্রতিদিনই র্যাবের ‘রিপোর্ট টু র্যাব’ এবং পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসে অপরাধীদের সম্পর্কে শত শত অভিযোগ আসছে। আর এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে জঙ্গি দমনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনটি জানিয়েছেন র্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা। তার বলছেন, বদলে গেছে জঙ্গিসহ সকল অপরাধীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কলাকৌশল। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে জঙ্গিসহ বিভিন্ন অপরাধীর আমলনামা। এসব আমলনামা যাচাই-বাছাই করে অপরাধীদের শনাক্ত করতে র্যাব-পুলিশকে আগের মতো আর সময়ক্ষেপণ করতে হচ্ছে না। অপরাধীদের অবস্থান, গতিবিধি, তাদের কর্মকা- সম্পর্কে সহজেই অবহিত হতে পারছেন গোয়েন্দারা। অভিযোগের ভিত্তিতে অপরাধীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। অ্যাপসের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য কম্পিউটার বা ল্যাপটপ বা মোবাইল সেটে ক্লিক করলেই গোয়েন্দারা পাচ্ছেন অপরাধীদের সম্পর্কে নানা তথ্য। তারপরই শুরু হচ্ছে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই। র্যাব পুলিশের দুটি অ্যাপসে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দেশের একটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে জঙ্গি অন্যান্য অপরাধীর আমলনামা, তাদের গতিবিধি ও অপরাধমূলক কর্মকা-ের তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সহজ হয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের সকল জঙ্গিদের ডাটা গোয়েন্দারা সংগ্রহ করেছেন। গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের বাইরে নেই এদের কর্মকা-। খুব দ্রুত এদের অর্থ জোগানদাতা, পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতাসহ সকল জঙ্গিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, গোয়েন্দা জালে আটকা পড়েছে দেশের সকল জঙ্গি। জঙ্গি দমন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কোনো ধরনের নাশকতা বা হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই দেশের সকল জঙ্গি গ্রেফতার হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহামুদ গতকাল রাতে ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এ পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অ্যাপসে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে, অর্থাৎ যারা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন তাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি এতে ভালো সুফল পাওয়া যাবে। এ নিয়ে র্যাবের সবকটি ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত কোনো জঙ্গি কিংবা অপরাধীকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার মাহামুদ বলেন, এ বিষয়ে এখনই কিছু বলার সময় আসেনি। সময়মতো সব জানানো হবে।
র্যাব পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘রিপোর্ট টু র্যাব’ এবং ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসের মাধ্যমে অপরাধীদের জীবনবৃত্তান্তসহ বিভিন্ন অপরাধসংক্রান্ত ব্যাপক তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন অপরাধসংক্রান্ত তথ্য মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সংগ্রহ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অপরাধ সংক্রান্ত এসব তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেন সাধারণ মানুষ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া শাখার প্রধান উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, জঙ্গি ও বিভিন্ন অপরাধীর সম্পর্কে তথ্যবহুল অভিযোগ দিয়ে অনেকেই সহযোগিতা করছেন। পুলিশের হ্যালো সিটি অ্যাপসে প্রতিদিন অনেক অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
জানা যায়, ‘রিপোর্ট টু র্যাব অ্যাপসের মাধ্যমে গতকাল পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৭৮টি তথ্য পেয়েছে র্যাব। এর মধ্যে জঙ্গি হামলাসংক্রান্ত ২২০টি, জঙ্গিসংক্রান্ত তথ্য ৭৩২টি, সোশ্যাল মিডিয়া ওয়াচ ৪৪৯টি, মিসিং পারসন ইনফরমেশন সংক্রান্ত ২৭৬টি, খুনসংক্রান্ত ৯১টি, ডাকাতিসংক্রান্ত ১৪৩টি, মাদকসংক্রান্ত ৯২১টি, অপহরণসংক্রান্ত ৬৩টি এবং অন্যান্য অপরাধসংক্রান্ত ৪ হাজার ৯৫৫টি তথ্য পাওয়া গেছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (এএসপি) মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, রিপোর্ট টু র্যাব অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সারা দেশ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি আমরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্রে জানা গেছে, অ্যাপসের মাধ্যমে পাওয়া এসব তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে এর অনুসন্ধান করা হচ্ছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) তৈরি ‘রিপোর্ট টু র্যাব’ এবং পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের তৈরি ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসের মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংগৃহীত তথ্য যাচাই-বাছাই করে র্যাবের অন্যান্য ব্যাটালিয়নে পাঠানো হচ্ছে। তারা সেখান থেকে অনুসন্ধানের কাজ করছে বলেও জানান তিনি। চলতি বছরের ১১ জুলাই র্যাবের পক্ষ থেকে ‘রিপোর্ট টু র্যাব’ অ্যাপসটি উদ্বোধন করা হয়।
এদিকে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের ৩১ জুলাই ডিএমপির পক্ষ থেকে ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭২১টি তথ্য এসেছে ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসে। এর মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে ২৮৫টি, সাইবার ক্রাইমসংক্রান্ত ২২৪টি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং মাদকসংক্রান্ত ১২৫টি এবং ট্রান্সন্যাশনালসংক্রান্ত ৮৭টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ কমিশনার ও বোমা ডিস্পোজাল ইউনিটের প্রধান সানোয়ার হোসেন বলেন, চাহিদামতো তথ্য প্রদানের এমন একটা সহজ অ্যাপ পেয়ে অনেকেই অ্যাপের মধ্যেই ধন্যবাদ পাঠাচ্ছেন, সেইসাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাঠাচ্ছেন, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ‘সাইবার ক্রাইম নিয়ে বেশি তথ্য আসছে। এর পরের অবস্থান জঙ্গিবিষয়ক তথ্যের।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গুলশান ও শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দ্রুত অ্যাকশান নেয়ার কারণে এখন তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সংগঠিত হতে পারছে না। রিপোর্ট টু র্যাব এবং হ্যালো সিটি আ্যাপসে জঙ্গিদের তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আসছে, এমন খবরের ভিত্তিতে তারা এখন অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করছে। রাজধানী ছেড়ে পালানোরও চেষ্টা করছে। কোনো কোনো জঙ্গি দেশ ছেড়ে পালানোর পাঁয়তারা করছে। এমন খবরের ভিত্তিতে দেশের সকল সীমান্তের চেকপোস্ট ও বিমানবন্দরগুলোতে ইমিগ্রেশনে তালিকা দেয়া আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।