পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : ভারত থেকে আমদানীকৃত এলএইচবি কোচ নিয়ে বিপাকে আছে রেলওয়ের পশ্চিম বিভাগ। নতুন কোচ দিয়ে ঢাকা-রাজশাহী রুটে তিনটি ট্রেন চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তিনটি ট্রেনের কোচগুলোতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সে সব ত্রুটি সারানো যাচ্ছে না। গত ১ আগস্ট সোমবার রাতে রাজশাহী স্টেশনে ঢাকামুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়তে চার ঘণ্টা দেরি হয়। এসময় ট্রেনের যাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করলে স্টেশন থেকে রেলকর্মীরা সটকে পড়েন। ওই ঘটনায় দু’জন রেলকর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এলএইচবি কোচের বৈদ্যুতিক সমস্যা ছাড়াও ইঞ্জিনের সাথে কোচের জয়েন্ট এবং এয়ারকন্ডিশনিং নিয়েও নানা সমস্যা ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও পশ্চিম বিভাগের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাই এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এসব সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে তা ভারত থেকে কোচগুলো সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে আনার পরই বোঝা গিয়েছিল। এ নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
গত ২৬ জুন ঢাকা-রাজশাহী রুটের তিনটি ট্রেনে ভারত থেকে আনা এলএইচবি কোচ যুক্ত করা হয়। সিল্কসিটি, ধূমকেতু ও পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন তিনটি চলছে লাল সবুজের এলএইচবি কোচ দিয়ে। এর মধ্যে মাত্র ৪০দিন অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে ভারতীয় কোচের ত্রুটিতে তিনটি ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন পশ্চিম বিভাগের কর্মকর্তারা। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে প্রায়ই ট্রেনগুলোর কোচ ড্যামেজ দেখিয়ে রিপ্লেস করতে হচ্ছে। এছাড়া কোচের সাথে ইঞ্জিনের জয়েন্ট (রেলওয়ের ভাষায় কাপলিং) লাগাতে গিয়ে প্রায়শই ঘটছে বিপত্তি। একটা কাপলিং লাগাতে বা খুলতে গেলে ৪০ মিনিট বা তারও বেশি সময় লাগছে।
জানা গেছে, ১ আগস্ট সোমবার রাতে রাজশাহী থেকে ঢাকামুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার আগে দুটি কোচে বৈদ্যুতিক সমস্যা দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের রেল কর্মীরা দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর দু’টি কোচ রিপ্লেস করে নতুন কোচ লাগানো হয়। এরপর ইঞ্জিনের সাথে কাপলিং লাগাতে গিয়ে ফের বিপত্তি ঘটে। খবর দেয়া হয় ভারতীয় প্রকৌশলীদের। তারাও চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এভাবে এক ঘণ্টা দুই ঘণ্টা করে চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ততোক্ষণে ঢাকাগামী যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা স্টেশনে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্টেশনে কর্মরত রেলকর্মীরা সটকে পড়েন। শেষ পর্যন্ত রাত ১১টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ধূমকেতু ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে রাত ৩টা ২০ মিনিটে। এ ঘটনায় ইলেকট্রিশিয়ানসহ দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, এলএইচবি কোচের বৈদ্যুতিক লাইনগুলো এতোটাই জটিল যে সেগুলোতে একবার ত্রুটি দেখা দিলে তা মেরামত করা মুশকিল। কারণ, ইলেকট্রিক তারগুলোকে পেস্টিং করে লাগানো। সেগুলো খোলা যায় না। খুলতে গেলে কোচের বডি কাটতে হবে। আবার তারগুলো এমনভাবে সাটানো আছে যে কোনো মুহূর্তে আগুন লাগার আশংকা রয়েছে। পাইপ লাইনের সমস্যার কারণে ভারতীয় কোচগুলোর টয়লেটে পানির সমস্যা লেগেই আছে। আবার কোনো কোনো কোচে পাইপ ফেটে পানি কোচের ভিতরে প্রবেশ করেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। এসি কোচগুলোতে কখনও অতিরিক্ত ঠা-ায় যাত্রীরা শীতে কাঁপতে থাকেন। আবার কখনও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। বাথরুমে মাঝে মধ্যেই পানি থাকে না। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতীয় প্রকৌশলীদের শরণাপন্ন হয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। তারাও সমাধান করতে পারছেন না। সূত্র জানায়, ভারতীয় কোচের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ট্রেনের সাথে ইঞ্জিনের সংযোগ বা জয়েন্ট (কাপলিং) না লাগা। ইঞ্জিন লাগানো বা খোলার জন্য এক-তিন মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্তু ভারতীয় কোচগুলোতে কাপলিং লাগানো বা খোলার জন্য কখনও আধা ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লাগছে। আবার এতো কসরত করে লাগানোর পর সেই কাপলিং আবার খুলেও যাচ্ছে। ঢাকা-রাজশাহী রুটে চালু হওয়ার পর ঈদের আগে ঘটে একটি ঘটনা। ওই দিন ঢাকাগামী ট্রেনের ইঞ্জিন এলএইচবি কোচ ফেলে প্রায় এক কিলোমিটার সামনে আসার পর চালক বুঝতে পারেন। পরে ইঞ্জিন ফিরে এসে কাপলিং লাগিয়ে ফের যাত্রা শুরু করে। চলন্ত ট্রেন থেকে এভাবে ইঞ্জিন খুলে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। এতে করে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা থাকে। কাপলিং নিয়ে এ সমস্যা দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। বিকল্প হিসেবে ক্লিপ সিস্টেম করা হলেও তা মজবুত ও স্থায়ী করা যাচ্ছে না বলে জানান রেল সংশ্লিষ্টরাই। শুরুতে এই সমস্যা নিয়ে রেলওয়ের প্রকৌশলীরা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এটা প্রযুক্তিগত সমস্যা। কোচগুলো ভারতীয় এবং লেটেস্ট হওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অথচ এলএইচবি কোচগুলো যে তিনটি ট্রেনে সংযুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর ইঞ্জিন ভারত থেকেই আমদানী করা। ৬৫ সিরিজের ভারতীয় ইঞ্জিনগুলোতেও কাপলিং লাগবে না কেন- এমন প্রশ্ন রেল কর্মচারীদের। তারা বলেন, যারা কোচগুলো তৈরীর সময় ভারতে গিয়েছিলেন তারা কি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন? তারা তখন কেনো বলেন নি যে আমাদের ৬৫ সিরিজের ইঞ্জিনগুলোতে লাগার মতো করে কাপলিংগুলো তৈরী করতে।
সূত্র জানায়, শুধু কাপলিং বা বৈদ্যুতিক সমস্যা নয়, ভারত থেকে আনা কোচগুলোয় আরও নানারকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রেলওয়ের একজন প্রকৌশলী বলেন, যে কোচগুলো কমপক্ষে ২০ বছর চলার কথা সেগুলো ৪০ দিন যেতে না যেতেই চলার অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে, এতে কী বোঝা যায় না এগুলোর ভবিষ্যত কি?
জানা গেছে, সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে ৪০টিরও বেশি এলএইচবি কোচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। সেগুলো কোনোভাবেই চলাচলের উপযোগী করা যাচ্ছে না। ভারত থেকে কয়েক দফায় প্রকৌশলীরা এসেছেন। কিন্তু তারাও হিমশিম খাচ্ছেন। যদিও এ বিষয়ে কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একজন রেলকর্মী বলেন, ভারতীয় কোচ বলে কথা। এগুলোর বিপক্ষে কেউ কথা বলবে না। কেউ মুখ খোলার সাহস পাবে না। এর আগে গত ২০ এপ্রিল ৪০টি বিজি কোচের মাত্র ১৩টি নিয়ে লাইভ ট্রায়ালের আয়োজন করা হয়। ওই দিন সকালে সৈয়দপুর রেলকারখানা থেকে ১৩টি কোচের একটি বিশেষ ট্রেন সিরাজগঞ্জের জামতৈল স্টেশন পর্যন্ত এসে আবার সৈয়দপুরে ফিরে যায়।
উল্লেখ্য, ভারত থেকে আমদানিকৃত ব্রডগেজের জন্য ৪০টি লাল সবুজ কোচের মধ্যে ২০টি আসে গত ২০ মার্চ। বাকী ২০টি আসে ৪ এপ্রিল। সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে কোচগুলো প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেশ কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। প্রথমত কোচগুলো লাল সবুজ রঙ এবং রঙের ফিনিশিং নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শুরুতে কোচগুলোকে স্টেইনলেস স্টীল বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোচগুলো স্টেইনলেস স্টীলের নয়। এছাড়া কোচগুলোর ইলেকট্রিক ওয়্যারিং, ফ্যানহীন এসি মেশিন ও ফ্রিজের ভিতরের কিছু যন্ত্রাংশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা। নতুন কোচগুলো নিয়ে ট্রেনের গতিবেগ ৯৫ থেকে বাড়িয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত গতি আগেরটাই রাখা হয়েছে। এসব নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকজন ক্ষোভও প্রকাশ করেন। রেলওয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মচারী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখন নিজেরা বিপাকে পড়ে আমাদের মতো কর্মচারীদের উপর ক্ষোভ ঝাড়া শুরু করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।