পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এমনিতেই ধুঁকে ধুঁকে চলা রাজশাহীর রেশম শিল্প মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এবার অস্তিত্ব সঙ্কটে। করোনার কারণে গত ক’মাস ধরেই মন্দাভাব বিরাজ করছে সিল্ক পাড়ায়। বৈশাখ গেল, দুই ঈদও গেল কিন্তু প্রত্যাশিত বেচা-বিক্রি নেই। এখন সিল্কের তৈরি পোশাকের শো-রুম খোলা থাকলেও বেচা-বিক্রি নেমে এসেছে অর্ধেকে। বেচা-বিক্রি না থাকায় কারখানার উৎপাদনও কমে গেছে। বিক্রি নেই, আয়ও নেই। অথচ কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সিল্কের তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীদের। ব্যবসায়ীদের মতে, করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে রেশম শিল্পে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মতো লোকসান হবে। তাই এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব কারখানায় পোশাক তৈরি ও বিপণন করছেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কারখানায় থান কাপড় তৈরি করলেও পোশাক তৈরি করে না। তারা থান কাপড় উৎপাদন করে দেশের বিভিন্নস্থানে তা বিক্রি করে। এক দশক আগেও রাজশাহী মহানগরীর সপুরা এলাকায় ১৫টির মতো প্রতিষ্ঠান নিজস্ব কারখানায় পোশাক তৈরি ও বিপণন করলেও এখন তা মাত্র ৪-৫টিতে নেমে এসেছে।
লকডাউনের কারণে এপ্রিল পর্যন্ত সিল্কের কাপড় কারখানা ও শো-রুম বন্ধ ছিলো। রোজার ঈদের আগে সীমিত পরিসরে খোলা হলেও বেচা-বিক্রি তেমন হয়নি। পরে লকডাউন তুলে দেয়া হলে শো-রুম ও কারখানা চালু করা হয়েছে। তবে বেচা-বিক্রি আর আগের মতো জমে ওঠেনি। বেচা-বিক্রি নেমে এসেছে অর্ধেকে। কারখানা খোলা থাকলেও বেচা-বিক্রি না থাকায় উৎপাদন কমে এসেছে অর্ধেকে।
মহানগরীর সপুরা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী সপুরা সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ ১৯৭৯ সাল থেকেই রেশমের তৈরি পোশাক উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত। রেশমের সুতা তৈরি ও সেই সুতা থেকে কারখানায় পোশাক তৈরি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। তবে সেই সুতাতে তাদের পুরো চাহিদা না মেটায় চীন থেকে সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। দেশে সরকারিভাবে লকডাউনের ঘোষণার পর ২৬ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কারখানা ও শো-রুম বন্ধ ছিলো। ৩১ মার্চ লকডাউন তুলে নেয়ার পর এখন শো-রুম ও কারখানা দুটোই চালু করা হয়েছে।
সপুরা সিল্ক কর্তৃপক্ষ জানান, লকডাউনের সময় শো-রুম ও কারখানা বন্ধ থাকলেও তিনশ’ শ্রমিক-কর্মচারীকে নিয়মিত বেতন দিয়েছি। ঈদের বোনাসও দিয়েছি। এখন কারখানা ও শো-রুম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে না পারলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের পুরো বেতনই দিচ্ছি। বেচা-বিক্রি চারভাগের এক ভাগে নেমে এলেও কাউকে ছাঁটাই করিনি। এসব করতে গিয়ে ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। শুধু লকডাউনের দুই মাসে তিন কোটি টাকার মতো লোকসান হয়েছে। এখন লোকসান গুণেই কারখানা ও শো-রুম চালু রাখতে হচ্ছে।
ঊষা সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম বলেন, পহেলা বৈশাখ ও দুই ঈদকে কেন্দ্র করেই আমাদের বেচা-বিক্রি বেশি হয়। করোনাভাইরাসের কারণে পহেলা বৈশাখে তো বিক্রিই করতে পারিনি। তখন কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর ঈদের সময় যেখানে কয়েক লাখ টাকার বিক্রি হতো সেখানে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকারও বিক্রি হয়নি। ধনী ব্যক্তিরা মার্কেটে না আসায় বেচা-বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান। রাজশাহী সিল্কের অন্য শো-রুমগুলোর চিত্র এমনই। লোকসানে পড়ছে সব পোশাকখাতের শো-রুম। প্রায় সব শো-রুমগুলোর মালিকরা জানান, করোনাভাইরাস সঙ্কটে তাদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
একমাত্র সরকারিভাবে সামান্য পরিমাণে হলেও সিল্ক উৎপাদন করে রাজশাহী রেশম কারখানা। বেসরকারিভাবে উৎপাদনকৃত সব প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিত্রও একই। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সারাদেশে বিদ্যমান ১২টি মিনিফিলেচার থেকে প্রাপ্ত সুতা দিয়ে রাজশাহীর রেশম কারখানায় থান কাপড় তৈরি করা হয়। সেইসব কাপড়ও আবার ডাইং, প্রিন্ট করে শাড়ি, টাই, ডো-পিয়ন, বলাকা থান কাপড়, রঙিন বলাকা থান কাপড়সহ বিভিন্ন কাপড় তৈরি করে রেশম উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব শো-রুমে বিক্রি করা হয়।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রাজশাহীর রেশম কারখানার ৩৮টি লুম মেরামত করে সচল করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবসময় ৬টি লুম চালু রাখা হয়। রেশম উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২টি মিনিফিলেচার থেকে প্রাপ্ত সুতা দিয়ে ৪ হাজার ৭৭০ মিটার কাপড় উৎপাদন করা হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে এপ্রিল মাস কারখানা বন্ধ থাকলেও গত জুলাই মাসে ৪০০ মিটার কাপড় উৎপাদন করা হয়েছে।
রাজশাহীর রেশম কারখানার ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ জানান, সারাদেশের ১২টি মিনিফিলেচার থেকে প্রাপ্ত সব সুতা দিয়েই রাজশাহীর রেশম কারখানায় কাপড় তৈরি করা হয়। এই কাপড় দিয়ে তৈরি শাড়িসহ বিভিন্ন পোশাক রেশম উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব শো-রুমে রেখে তা বিক্রি করা হয়।
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী জানান, রেশম শিল্পে দুইভাবে কাজ করা হয়। প্রথমে পলু পোকা থেকে সুতা উৎপাদন এবং পরে সেই সুতা থেকে বস্ত্র তৈরি করা হয়। রেশম শিল্পের সাথে শুধু রাজশাহী অঞ্চলে ৪০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী যুক্ত রয়েছে। সারাদেশে ১ লাখের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী হবে। করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে রেশম শিল্পে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মতো লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। তাই রেশম শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি প্রণোদনাসহ বিশেষ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।