পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুলিশ গাড়ি থেকে নামিয়ে মেজর (অব) সিনহাকে গুলি করেছেন। হত্যাকান্ডের ভয়াবহতায় গোটা এলাকা থমথমে অবস্থা ছিল। সেনাপ্রধান ও পুলিশ প্রধান যৌথ সংবাদ সম্মেলন করার পর মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, ভীতি-আতঙ্ক কেটে যায়। মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার তদন্ত কমিটির গতকাল গণশুনানীতে ৯ জন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে এমন কথাই বলেছেন। ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ চেক পয়েন্টে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পুলিশ সেনাবাহিনীর মেজর (অব) সিনহাকে খুন করার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হচ্ছে বলছেন শুনানীতে অংশ নেয়া এলাকার মানুষ।
গণশুনানীতের অংশ নেয়া ব্যাক্তিরা তদন্ত কমিটির কাছে যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে ঘটনার সময় মেজর সিংহের হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। পুলিশ মেজর সিনহাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছেন।
সিনহা হত্যার ঘটনাস্থলের পাশে টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জের কার্যালয়ে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই গণশুনানী শুরু হয়। এর আগেই সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী ১১জন প্রত্যক্ষদর্শীকে নিবন্ধন করে গণশুনানীর নির্দিষ্ট কক্ষে নিয়ে নেন তদন্ত দল। টানা ছয় ঘন্টা শুনানির পর বিকেল সোয়া ৫ টায় এই গণশুনানি সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তবে নিবন্ধিত ১১ জনের মধ্য থেকে তদন্ত কমিটি ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করলেও দুজনকে প্রত্যক্ষদর্শী নয় মনে করে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি।
শুনানি শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, গণশুনানীকালে ৯ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ গ্রহণ করা হয়েছে। তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তবে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে কিছু সুপারিশমালাসহ এই গণশুনানী এবং তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেয়া হবে। গণশুনানীর কারণে টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্রচুর সাংবাদিক উপস্থিত হন। উৎসুক মানুষের ভীড় ছিল ব্যাপক। প্রত্যক্ষদর্শীরা কে কি বলেন তা জানার জন্য উৎসুক মানুষ মুখিয়ে ছিলেন। সকালে আসেন তদন্তকারী দলের সদস্যরা। বেলা সাড়ে ১১টায় তদন্তদল আনুষ্ঠানিক বক্তব্য গ্রহণ শুরু করেন। শুনানীতে তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্ণেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সিনহা হত্যাকান্ডের বিষয়ে তারা বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করছেন। এর মাঝে এই হত্যাকান্ড পরিকল্পিত, নাকি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে তা জানার চেস্টা করছেন। কার নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেছিলেন লিয়াকত। ঘটনার সময় আদৌ সিনহার হাতে অস্ত্র ছিল কি না, এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তারা খতিয়ে দেখছেন। তাদের মতে, এসব প্রশ্নের জবাব মিললেই ঘটনার প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হবে।
শুনানিতে বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন বলেন, প্রথম দিকে সিনহা হত্যাকান্ডের ভয়াবহতা নিয়ে এলাকায় থমথমে অবস্থা ছিল। মানুষের মধ্যে ভয় আতঙ্ক উদ্বেগ উৎকন্ঠা ছিল। পরে সেনাপ্রধান ও আইজিপি ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর তাদের বক্তব্য শুনে লোকজন উৎসাহ পেয়েছেন। এখন এ ঘটনা সম্পর্কে অনেকেই কথা বলছেন। আমরা চাই এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হউক। প্রত্যক্ষদর্শী বাহারছড়া রহমানিয়া তালিমুল কোরান নুরানী মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল হক জানান, মাদরাসা আর ঘটনাস্থল একদম সন্নিকটে। মাদরাসার ছাদ থেকে সেদিন অনেকেই সিনহা হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক ঘটনাটি দেখেছে। সবারই একই কথা পুলিশ গাড়ি থেকে নামিয়ে সিনহাকে গুলি করেছে।
এর আগে গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ঘটনা সরেজমিনে তদন্ত করে কারণ ও উৎস অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে তদন্ত দল রোববার এ গণশুনানির আয়োজন করেন।
মূলত কক্সবাজারের মানুষের সবার দৃষ্টি ছিল বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর। তদন্ত কমিটির কাছে প্রত্যক্ষদর্শীরা কি তথ্য দেন তা জানার চেষ্টা করেন মানুষ। তদন্ত কমিটির কি করেন তা দেখতে এবং বক্তব্য দিতে সকাল সাড়ে ৯টা হতে গণশুনানী স্থলে আসা শুরু করেন মানুষ। বক্তব্য দিতে আগ্রহীরা নাম রেজিস্ট্রেশন বুথে যান। গণশুনানী উপলক্ষে মেরনি ড্রাইভের শাপলাপুর এলাকা, ক্যাম্পস্থল এবং আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরী করে সেনাবাহিনী ও অন্য শৃংখলাবাহিনী। বিপুল পরিমাণ গণমাধ্যমকর্মীও আসেন ঘটনাস্থলে। আশপাশে তাদের যাতায়াত অবাধ থাকলেও শুনানী কক্ষে গণমাধ্যমের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। জড়ো হয়েছেন চারপাশে হাজার হাজার মানুষ।
এর আগে গত শনিবার শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্ট এলাকা পরিদর্শন করেন নতুন তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র এএসপি খাইরুল ইসলাম। সেখানে তিনি বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলেছেন।
গত ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোঃ রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগষ্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।
এর মধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পুলিশের চার সদস্য এবং এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গত শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র্যাকব। যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তারা হলো–সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।
এর আগে একই ঘটনায় টেকনাফ থানায় দুইটি, রামু থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। এই ৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছে সিনহার সঙ্গি সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রাণী দেবনাথকে। তারা ইতোমধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।