পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কারাগারে গেলেও অক্ষত রয়েছে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীর নেটওয়ার্ক। ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ইয়াবা কারবারি আর মানব পাচারকারী চক্রের টাকা পয়সা লুট, জমি বাড়ি সম্পত্তি দখল এবং মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন টেকনাফের প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার।
এসব অপকর্ম করতে থানার কিছু পুলিশ সদস্য, দালাল ও টাউট মাস্তান, ইয়াবা ব্যবসায়ী নিয়ে প্রদীপ গড়ে তোলেন বিরাট এক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রদীপ পুরো টেকনাফজুড়ে তার বেপরোয়া লুটপাট আর ভয়ঙ্কর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তার চক্রের সদস্যরা যাদের টার্গেট করতো তাদের সর্বনাশ করে ছাড়তেন প্রদীপ। সাজানো মামলায় চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে ধরে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়।
কার বাড়িতে নগদ টাকা আছে এমন খবর দিতেন তার সোর্সরা। রাতের আধারে হানা দিয়ে ওই বাড়িতে টাকা লুট করতেন প্রদীপ। বাঁধা দিলেই ধরে এনে ইয়াবা ব্যবসায়ী সাজিয়ে দিতেন ক্রসফায়ার। এক্ষেত্রে সরকারের মাদক বিরোধী কঠোর অবস্থানকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন সুচতুর প্রদীপ। যারা তার কথা মেনে তাকে মাসোহারা দিয়েছে সে সব মাদককারবারি তার সহযোগিতা পেয়েছে। যারা তার কথায় রাজি হয়নি তাদেরও শেষ রক্ষা হয়নি। আবার নিরপরাধ লোকজনকেও মাদক কারবারি বানিয়ে ক্রসফায়ারে দেয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
এসব কুকর্মে প্রদীপের যোগ্য সহযোগী ছিলেন সিনহার বুকে গুলিবর্ষণকারী লিয়াকত। অভিযোগ আছে কক্সবাজার জেলা এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের কেউ কেউ সরাসরি প্রদীপের এসব অপকর্মে মদদ দিয়েছেন। আর তাতে প্রদীপ ভয়ানক এক দানবে পরিণত হন।
সর্বশেষ মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকান্ডে প্রদীপের এই সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন সরাসরি জড়িত ছিলো। তাদের মধ্যে সিনহা খুনের পর সাজানো মামলায় কথিত তিন সাক্ষীকে ইতোমধ্যে পাকড়াও করে রিমান্ডে এনেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা এলিট বাহিনী র্যাব। তারা থানার সোর্স হিসাবে কাজ করতেন। গত ৩১ জুলাই রাতে মারিষবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর চেকপোস্টে মেজর (অব.) সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা জানায়, সিনহা খুনের ঘটনা ছিলো পরিকল্পিত। তাকে গুলি করে হত্যার আগে সিনহা যখন পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে নামছিলেন তখন কতিপয় লোক ডাকাত বলে শোরগোল করে। তারা ছিলো প্রদীপের সিন্ডিকেটের সদস্য।
তারাই সেখান থেকে টেলিফোনে সিনহার গাড়িযোগে রওনা হওয়ার খবর পৌঁছে দেয় বাহারছড়া ফাঁড়িতে থাকা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। খবর পেয়েই আগে থেকে নিজেদের চেকপোস্ট বাদ দিয়ে এপিবিএন’র চেকপোস্টে গিয়ে গাড়ি থামান লিয়াকত। আর গাড়ি থেকে নেমে আসতেই সিনহাকে গুলিতে ঝাঝড়া করে দেয়া হয়। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় থেকে কথিত ডাকাত নেমে আসা এবং সেই খবর পেয়ে গাড়ি তল্লাশিকালে সিনহার গুলি করতে উদ্যত হওয়ায় তাকে গুলি করা এসব ছিলো প্রদীপের বানানো গল্প।
মূলত ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে সিনহাকে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মিশনে সরাসরি অংশ নেয় তার সিন্ডিকেটের অনেকে। প্রদীপের মদদদাতারাও দূর থেকে যখন যা করা দরকার তার সব কিছু করেছেন। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি ঘটনা এবং তথ্য যাচাই বাছাই করে হত্যাকান্ডের তদন্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হবে। কেউ পার পাবেন না।
এদিকে ওসি প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। থানায় নতুন ওসি দেয়া হলেও প্রদীপের সাথে থেকে যারা অপকর্ম করেছেন তাদের অনেকে এখনও বহাল আছেন। জেলা পুলিশেও কোন পরিবর্তন আসেনি। প্রদীপের অপরাধী সিন্ডিকেটের সদস্যরাও রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রদীপ কারাগারে যাওয়ার পর দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে খুন, গুম, অপহরনের শিকার পরিবারের সদস্যরা মুখ খুলতে শুরু করেন। টেকনাফের পথে পথে এখন স্বজনহারা মানুষের আহাজারি। তারা বিচারের আকুতি জানিয়ে কাঁদছেন।
তারা প্রদীপের বিরুদ্ধে সুস্পষ্টভাবে হত্যা, খুন এবং লুটতরাজ ও দখলের অভিযোগ করছেন। যাদের সহযোগিতায় প্রদীপ নারকীয় তান্ডব চালিয়েছেন তাদের নাম ঠিকানাও প্রকাশ করছেন। তবে এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কোন অভিযোগ থানা পুলিশ আমলে নিয়েছে এমন তথ্য কারো জানা নেই। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে কিছুদিনের মধ্যে থানা পুলিশ প্রদীপের পথে হাঁটতে শুরু করবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
প্রদীপ-লিয়াকতের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসে। তবে কোন অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। বরং অভিযোগের পাহাড়ের মধ্যেও তারা পেয়েছেন পদোন্নতি, লোভনীয় থানায় পোস্টিং। শুরুতে তাদের অপরাধের লাগাম টেনে ধরলে পরিস্থিত এতদূর গড়াতো না বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।