Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জোয়ারে ডুবছে বন্দরনগরী

দুঃখ মোচনে বেড়িবাঁধ স্লুইচ গেইটের মেগা প্রকল্প

প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : মাথার উপর তপ্ত সূর্য, গনগনে রোদ আর রাস্তায় হাঁটু সমান পানি। চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত সিডিএ আবাসিক এলাকার চিত্র এটি। রাতে-দিনে দু’বার জোয়ারের পানিতে ভাসছে বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রামের এ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। দিনে দিনে বাড়ছে জোয়ারের উচ্চতা, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
আগ্রাবাদ ছাড়িয়ে বৃহত্তর হালিশহর, বন্দর, পতেঙ্গার শিল্প এলাকা ছাড়িয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জে। বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও থেকে শুরু করে মহানগরীর বিশাল এলাকা এখন জোয়ারে ভাসছে। গত দুইদিন প্রখর রোদেও এসব এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবেছে। জোয়ারের সময় ভারী বর্ষণ হলে তলিয়ে যাচ্ছে পুরো নগরী। পানিবদ্ধতার এ সমস্যা এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
এ অবস্থা থেকে চট্টগ্রামবাসীকে মুক্তি দিতে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ এবং প্রতিটি খালের মুখে সøুইচ গেইট বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের দুঃখ পানিবদ্ধতার অবসান হবে বলে প্রত্যাশা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।  
পাহাড়, নদী আর সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রাম নগরীতে একসময় অসংখ্য খাল ও ছড়া ছিল। ছিল অগণিত পুকুর, দীঘি, জলাশয় ও নিচু ভূমি। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এসব হারিয়ে গেছে। দখল হয়ে গেছে অসংখ্য খাল, নালা ও ছড়া। এ কারণে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি সরে যেতে পারছে না আবার জোয়ারের সময় প্লাবিত হচ্ছে মহানগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা। পানিবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর শতশত কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। বিনষ্ট হচ্ছে সড়ক, ইমারত হুমকির মুখে পরিবেশ জীববৈচিত্র্য।
জোয়ারের কারণে মহানগরীর কিছু কিছু এলাকা বাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে যারা এসব এলাকায় থাকছেন তাদের চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আগ্রাবাদের মতো বাণিজ্যিক এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রামে বিনিয়োগেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগ্রাবাদে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে দেশের প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার।
অথচ সেই আগ্রাবাদ জোয়ারের পানিতে ভাসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জের মতো বাণিজ্যিক এলাকাতেও গত কয়েক বছর ধরে জোয়ারের পানি হানা দিচ্ছে। আড়ত, গুদাম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে শত শত কোটি টাকার পণ্য বিনষ্ট হচ্ছে। দিনে দুইবার জোয়ারের কারণে ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহন।
মহানগরীকে পানিবদ্ধতা মুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ছোটখাটো বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। তবে এতে সুফল মিলছে না। খাল, নালা, সংস্কার করার কারণে বৃষ্টির পানি সহজে নেমে যেতে পারছে। এ কারণে সাম্প্রতিককালে ভারী বর্ষণে পানিবদ্ধতা সমস্যা তেমন প্রকট হয়নি। কিন্তু জোয়ারের সময় ভারী বর্ষণ হলে পানিবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রায় সবক’টি খাল দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে মহানগরীর বিশাল এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দিনে দিনে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন নতুন এলাকায় জোয়ারের পানি হানা দিচ্ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, একসময় জোয়ারের পানি ঢুকে খাল, নালা ও নিচু ভূমিতে চলে যেত। কিন্তু এখন খাল, নালা, নিচু ভূমি ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানি আবাসিক এলাকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সড়কে উঠে আসছে। মহানগরীর বেশিরভাগ খাল মিলিত হয়েছে কর্ণফুলী নদীতে। এসব খালের মুখে কোন সøুইচ গেইট না থাকায় জোয়ারের পানি সরাসরি ঢুকে পড়ছে নগরীতে। ১৯৬০’র দশকে হালিশহর ও কাট্টলী এলাকায় কিছু সøুইচ গেইট বসানো হয়। মূলত চাষাবাদের জমি রক্ষা করার জন্য বেড়িবাঁধে, খালের মুখে তখন ওইসব সøুইচ গেইট দেওয়া হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, সাগরতীরে বেড়িবাঁধ থাকলেও কর্ণফুলী নদীর পাড়ে কোন বাঁধ নেই। এ কারণে জোয়ারের পানি মহানগরীতে ঢুকে পড়ছে। এ অবস্থায় মহানগরীর খালের মুখে সøুইচ গেইট বসিয়ে জোয়ারের পানি আটকানো ছাড়া জোয়ার-ভাটার কবল থেকে মহানগরীকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।
এ প্রেক্ষাপটে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী বন্দরনগরীকে রক্ষায় একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে সরকার। এতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। আগামী বছরের প্রথমদিকেই শুরু হবে এ প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পে পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত বাঁধের পাশাপাশি সবগুলো খালের মুখে বসবে সøুইচ গেইট। পানিবদ্ধতা নিরসনে এর আগে অনেক প্রকল্প নেয়া হলেও তাতে কোন সুফল আসেনি। এ অবস্থায় নতুন মেগা প্রকল্পটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বিদ্যুৎ কুমার জানান, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। কিছু প্রক্রিয়া শেষে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত নতুন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে জোয়ারের পানি আটকানোর ব্যবস্থা করা হবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি খালের মুখে সøুইচ গেইট বসানোরও পরিকল্পনা রয়েছে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ৭ বছর। এটি বাস্তবায়ন হলে পানিবদ্ধতার অবসান হওয়ার পাশাপাশি মহানগরীর সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ওই বেড়িবাঁধ হয়ে নগরীর বিভিন্ন রুটে যানবাহন চলাচল শুরু হলে নগরীতে যানজটও কমে আসবে।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জোয়ারে ডুবছে বন্দরনগরী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ