পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে বগুড়ার ধনাঢ্য এক ব্যবসায়ী পিতা বললেন ‘মাদকের ছোবল থেকে দূরে রাখতে ছেলেকে বিদেশে পড়িয়ে উচ্চ শিক্ষিত করলেও সেই ছেলে চলে গেল বিপথে, হল জঙ্গি।’ পুলিশকে তিনি জানালেন, তার অনেক আদরের ছেলে এ কে এম তাকিউর রহমান সিফাত। সে তার স্ত্রী রিজিতা রাইলা ইকবাল ও ১৮ মাসের শিশু সন্তান রোমাইশা কে নিয়ে এক বছরের ও অধিককাল আগে নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে তিনি বুঝতে পেরেছেন ‘আইএস’ পাকচক্রে পড়ে সে এখন সিরিয়া অথবা তুরস্কে অবস্থান করছেন।
নিখোঁজ হওয়ার পর সিফাতের বাবা আব্দুল খালেক গত ১৫ সালে ঢাকার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছিলেন। ডায়েরীতে লেখা হয় আমার ছেলে এ কে এম তাকিউর রহমান সিফাত স্বপরিবারে ঢাকার বশিরউদ্দিন রোড ১৪ লেকসার্কাস, ফ্লাট ৮/বি, বসবাস করা অবস্থায় ৪ এপ্রিল ২০১৫ সালে ছেলে বউ রিজিতা রাইলা ও আমার নাতনী ১৮ মাসের রোমাইশাকে নিয়ে ওমরার কথা বলে চলে যায়। তার পর আর দেশে ফিরে আসেনি।
তিনি জানান, বগুড়া শহরের তার বাড়ি সংলগ্ন কালিতলা এলাকা ছিল মাদকের অখড়া। ছেলে মাদকে জড়িয়ে যাবে সেই ভয়ে তাকে ৩য় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ভারতের শিলিগুঁড়ির মাউন হারমেইন মিশনারী স্কুলে ভর্তি করে দেই। তার পর সেখান থেকে একই এলাকার রগভেলী স্কুলে ‘ও’ লেভেলে ভর্তি করাই। ‘ও’ লেভেল পাশ করে ২০০৬ সালে ঢাকার লন্ডন কলেজ অব লিগাল স্টাডিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘এ’ লেভেলে ভর্তি করে দেই। সেখান থেকে পাশ করার পর যুক্তরাজে কান্ট্রি ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়তে যায়। ২০১০ সালে বার এট ল পাস করার পর দেশে ফেরে। পরে ঢাকার কলাবাগানে বাসা ভাড়া নিয়ে আইন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি বে-সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালিন শিক্ষক হিসেবে কাজ করে।
ভারত থেকে পড়া লেখা করে আসার পর এবং দেশে পড়া লেখা করা অবস্থায় শিফাত একজন স্টাইলিস্ট ছেলের মত ঘুরাফেরা করতো। কখনও বা কানে দুল লাগিয়ে গিটার হাতে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াতো। মাঝে মাঝে চুল বড় করে মেয়েদের মত মাথায় বেনি করতো। তখন তাকে ধমকে নামাজ পড়ার কথা বললেও সে নামাজ পড়তো না। ‘যুক্তরাজ্যে পড়া লেখা করার শেষ দিকে তার আচার-আচরণে পরিবর্তন ঘটে। বার এট ল করার আগে সে দাড়ি রাখে। দেশে ফেরার পর সে নামাজ পড়তো ও নিয়মিত রোজা করতো। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে পড়া লেখা করা অবস্থায় সিলেটের এক ইমামের মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক হয়। ওই ইমামের ছেলে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিফাতের সাথে পড়ালেখা করতো।
শিফাতের বাবা জানান, তিনি সম্প্রতি ওমরায় যাওয়ার আগে তার ছেলের শ্বশুর চট্টগ্রামের কর্নেল (অব.) ইকবাল দেশের বাইরে ছিল। তিনি দেশে ফিরে আসার পর তাকে হজে যাওয়ার কথা বললেও শিফাত তা না শুনে হজে চলে যায়। আমিও (আব্দুল খালেক) তাকে পরে যেতে বলেছিলাম। আব্দুল খালেক জানান, সউদী যাওয়ার পর ওই বছর ১৩ এবং ১৪ এপ্রিল আমার সাথে ফোনে কথা হয়। সে জানায় ২২ এপ্রিল দেশে ফিরবো। তার পর আর ফিরে আসেনি। ৩ মাস পর হঠাৎ অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে সংক্ষিপ্ত কথা বলে। শুধু জানায়, ভাল আছি। তবে কোথায় আছে তা বলেনি। আব্দুল খালেক আরো জানান, তার কয়েক মাস পর শিফাতের শ্যালক সাদমানের সাথে শিফাতের কথা হয়। শিফাত তখন তাকে জানিয়েছিল সে তুরস্কে রয়েছে। এধরনের আরো কিছু তথ্যের ভিত্তিতে শিফাতের বাবা আব্দুুল খালেকের ধারণা শিফাত বিপথে গিয়ে জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিয়ে তুরস্ক কিম্বা সিরিয়ায় অবস্থান করছে। শিফাতের এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিকট আত্মীয় জানান, শিফাত ইয়ো ইয়ো স্টাইলের ছেলে হলেও যুক্তরাজ্য থেকে পড়ালেখা শেষ করে এসে সে বলতো অনেক কিছুই তো দেখলাম। অনেক কিছুই করলাম। এখন পরকালের জন্য কিছু করি।
শিফাতের নানা আইয়ুব উদ দ্দৌলা বেনু বলেন, ছোট বেলা থেকে শিফাত দেশের বাইরে পড়ালেখা করতে গিয়ে বাবা-মা’র কাছ থেকে দূরে চলে যায়। বাবা-মা’র প্রতি পারিবারিক যে বন্ধন থাকে তা থেকে সে ছিল বঞ্চিত। জীবনের বেশিটা সময় ছিল একাকী। যখন সে বুঝতে শিখলো তখন তার বাবা মা’র মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। সব কিছু মিলেই শিফাতের কিশোর ও শৈশব জীবনে একটা বড় ধরনের ভালবাসার ঘাটতি ছিল। আর এই ঘাটতির পরিণতিই হয়তো তাকে জঙ্গিত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে এই অভিমত তার আত্মীয় পরিজন ও পুলিশের।
একটি অনলাইন মিডিয়ায় সিফাত সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হলে বগুড়ার পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন এবং মিডিয়া কর্মিরা তার বাবা আব্দুল খালেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।