পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর গুলশানে জঙ্গি হামলার একমাস পর নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিম ও কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসিব খানকে গ্রেফতার দেখালো পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় গুলশান আড়ংয়ের সামনের রাস্তা থেকে হাসনাত করিমকে এবং একইদিন রাত নয়টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি-ব্লকের একটি বাসা থেকে তাহমিদকে গ্রেফতার করে ডিবি। এর আগে গত মঙ্গলবার পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের হাতে বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হওয়ার পর থেকে হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খান পুলিশের নলেজে আছেন। তবে গ্রেফতারকৃতদের পরিবার ও আইনজীবীদের অভিযোগ, গুলশানের রেস্তোরাঁ থেকে গত ২ জুলাই যৌথ বাহিনী বিশেষ অভিযানে উদ্ধারের পর থেকে তারা পুলিশ হেফাজতে ছিলেন।
পুলিশের দাবি, গুলশানে জঙ্গি হামলায় হাসনাত করিমের মোবাইল ব্যবহার করে জঙ্গিদের বাইরে যোগাযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তার সহযোগী হিসাবে তাহমিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন দুইজনকে আট দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এসময় হাসনাতের আইনজীবী সানোয়ার হোসেন সমাদ্দার এর বিরোধিতা করে বলেন, তার মক্কেল ৩২ দিন ধরে পুলিশ কাস্টডিতে ছিল। তাকে নতুন করে রিমান্ডে নেয়ার প্রয়োজন নেই।
পুলিশ জানিয়েছে, গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের মোবাইলে ডাউনলোড করা হয় একটি বিশেষ অ্যাপ। বৃহস্পতিবার হাসনাত করিম ও তাহমিদের রিমান্ড আবেদনে জানানো হয় জঙ্গিরা ব্যবহার করে বিশেষ অ্যাপটি। অ্যাপটির নাম উইকার অ্যাপ।
হাসনাত করিমের বাবার নাম মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দ্বৈত নাগরিক। তার বিরুদ্ধে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করার সময় হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে ২০১২ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। ব্রিটেনের নাগরিক হলেও সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে এসে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে আবারও যোগদান করেন। যদিও গুলশানের হামলার ঘটনার পর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি তাদের ওয়েবপেজে শিক্ষকদের তালিকা থেকে হাসনাত করিমের নামটি মুছে ফেলে। হাসনাত করিম তার বাবা রেজাউল করিমের বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসাবে যোগ দেন। গুলশান-২ এর ৫ নম্বর রোডের ৬৮/এ, নম্বর বাড়িতে তিনি বাবা-মা’র সঙ্গে বসবাস করেন। হাসনাতের দাবি ঘটনার দিন মেয়ে শেফা করিমের জš§দিন উপলক্ষে তিনি হলি আর্টিজানে সপরিবারে জন্মদিন পালন করতে গিয়েছিলেন। তবে গোয়েন্দাদের দাবি, এটি ছিল তার লোক দেখানো একটি পরিকল্পনা। কারণ হলি আর্টিজানের মতো একটি স্প্যানিশ রেষ্টুরেন্টে একটি ধর্মপ্রাণ পরিবারের জন্মদিন পালন করাটা ছিল এক ধরনের নাটক।
অপরদিকে তাহমিদ হাসিব খান আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে। তিনি কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কানাডার স্থায়ী নাগরিক। গুলশান হামলার দিনই দুপুরে ঢাকায় আসেন তাহমিদ।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, হাসনাত করিম নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের একজন সক্রিয় সদস্য। বিভিন্ন সময় হাসনাতকে সাহায্য করে তাহমিদ। এছাড়া হলি আর্টিজানে হামলা হয় রাত ৮ টা ৪৪ মিনিটে এবং হাসনাত করিমের মোবাইলে অ্যাপটি ডাউনলোড করা হয় ৮টা ৫৭ মিনিটে। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে সাধারণত জঙ্গিরা যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য তথা জঙ্গিরা কী ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করেছিল, ঠিক কী কারণে অল্প সময়ের জন্য হাসনাত এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছিলেন, সে বিষয়ে জানার জন্য তাকে রিমান্ডে নেয়ার প্রয়োজন। উইকার একটি যোগাযোগ অ্যাপ। ব্যবহারকারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এটিতে। যে ডিভাইসে এটি ব্যবহার করা হয় সেই ডিভাইস থেকে সব ধরনের মেসেজ, ছবি ও ভিডিও কনটেন্ট মুছে ফেলা যায়।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। হামলার পর রাতেই জঙ্গীরা ২০ জনকে হত্যা করে। সেই রাতে বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় ৬ জঙ্গী। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।