Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুব কাছ থেকে চার গুলি হৃদপিন্ড-ফুসফুস ভেদ

সিনহা হত্যা মামলাঃ ময়না তদন্ত রিপোর্ট র‌্যাবের কাছে ওসি প্রদীপসহ তিন আসামি যে কোন সময় র‌্যাবের রিমান্ডে। ৪ আসামি জিজ্ঞাসাবাদ শিপ্রার জামিনে মুক্তি, সিফাতের রায় আজ। টেকনাফ থানার তি

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২০, ১২:০৩ এএম

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার অভিযুক্ত কারাগারে থাকা ৭ আসামির ৪ জনকে গতকালও জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গত শনিবার ও গতকাল দুই দফায় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী র‌্যাব কর্মকর্তারা। ওসি প্রদীপ, আইসি লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলালকে যে কোন সময় হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে র‌্যাব কর্মকর্তারা। বিষয়টি জানান কক্সবাজার জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মোকাম্মেল হোসেন। 

অন্যদিকে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খুব কাছ থেকে গুলি করার কারণেই মারা গেছেন সিনহা। দুটি গুলি বুকের বাম পাশে এক জায়গা দিয়ে ঢুকে পিঠে পাশাপাশি দুটি ক্ষত তৈরি করে বেরিয়ে যায়। এই দুটি গুলি বুকের পাজরের হাড় ভেঙে ঢুকে হৃদপিন্ড ও ফুসফুস ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এছাড়া ওসি প্রদীপ ইয়াবাসহ নানা কারণে লোকজনকে ধরে এনে থানায় নির্যাতন করে টাকা আদায় করতেন। কখনো কখনো টাকা নিয়ে দেয়া হতো কথিত ক্রসফায়ার। আর এক জন্য টেকনাফ থানার তিন তলায় গড়ে তোলা হয় ওসির টর্চার সেল। যা এখন প্রকাশ করছেন নির্যাতিতরা।
গতকাল বিকেলে কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মোকাম্মেল হোসেন জানান, জেল গেইটে দু’দিনে ৪ আসামির জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। ওসি প্রদীপসহ অন্য তিনজনকে র‌্যাব হেফাজতে রিমান্ডে নেয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত নেয়া হয়নি।
এদিকে টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের করা দুইটি মামলায় মেজর সিনহার এক সহযোগী শিপ্রা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল বিকাল ৩টায় তিনি কক্সবাজার কারাগার থেকে একটি গাড়িতে করে এলাকা ত্যাগ করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের করা মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রামু কোর্টে তার জামিন আবেদন করা হলে বিচারক দেলোয়ার হোসেন জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। শিপ্রার আইনজীবি অরুপ বড়ুয়া তপু জানান, শিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলায় জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত শিপ্রার জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
অন্যদিকে নিহত মেজর (অব.) সিনহার আরেক সহযোগী রিফাতুল ইসলাম সিফাতের জামিন আদেশের দিন আজ সোমবার ধার্য্য করেছেন আদালত। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (টেকনাফ- ৩) এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক এই আদেশ দেন। সিফাতের আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু জানান, সিনহা পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার সময় এই দুই সহযোগী শিপ্ররা ও সিফাত তার সাথেই ছিলেন। তাই এই দুইজনকেও হত্যা মামলার সাক্ষী করা হয়েছে। মেজর সিনহা হত্যা মামলায় তারা দুইজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।
ময়না তদন্ত রিপোর্ট র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর
তিনটি বা ছয়টি নয়। টেকনাফে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার গায়ে গুলি লেগেছিল ৪টি। এই চারটি গুলির কথাই পুলিশের হত্যা চেষ্টা মামলার এজহারে উল্লেখ ছিল। ময়না তদন্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খুব কাছ থেকে গুলি করার কারণেই মারা গেছেন সিনহা। রিপোর্টে উল্লেখ করা চিকিৎসকদের বর্ননা অনুযায়ী, প্রথম গুলিটা সিনহার বাম হাতের বাহুতে লেগে ছিদ্র হয়ে বেরিয়ে যায়। পরের গুলিটি বাম কাধের নিচ দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই গুলির জন্য সামনে ও পেছনের অংশে দুটি ক্ষত তৈরি হয়।
ময়না তদন্তকারীরা দেখতে পেয়েছেন, শেষের পরপর দুটি গুলি, বুকের বাম পাশে এক জায়গা দিয়ে ঢুকে পিঠে পাশাপাশি দুটি ক্ষত তৈরি করে বেরিয়ে যায়। এই দুটি গুলি বুকের পাজরের হাড় ভেঙে ঢুকে, হৃদপিন্ড ও ফুসফুস ভেদ করে বেরিয়ে যায়। খুব কাছ থেকে দুটি গুলি ছোঁড়া হয়েছে বলেও ধারণা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের। এই দুটি গুলির জন্য মোট তিনটি ক্ষতের সৃষ্টি হয় সিনহা রাশেদের শরীরে। এছাড়াও, গলায় কিছু দাগ সংবলিত হালকা ক্ষতের চিহ্ন মিলেছে। তবে সেটা গুলির চিহ্ন নয় বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। অর্থ্যাৎ চারগুলির ৬টি ক্ষতের কথা উল্লেখ আছে ময়না তদন্ত রিপোর্টে। কক্সবাজার মেডিকেল থেকে এই রিপোর্ট তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাবের কাছে জমা দেয়া হয়েছে এরইমধ্যে।
টেকনাফ থানার তিন তলায় টর্চার সেল
২০১৯ সালের তিন ডিসেম্বর। কক্সবাজার আদালত পাড়া থেকে আব্দুল জলিল নামে এক সিএনজিচালককে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকে কিছু ব্যক্তি। একইদিনে নিরুদ্দেশ হন হ্নীলা ইউনিয়ন মৌলভী বাজার গ্রামের মৃত সুলতান আহাম্মদের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২০)। টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়ার বাসিন্দা আবদুল জলিলের খোঁজে পাগলপ্রায় হয়ে যায় তার স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমসহ পুরো পরিবার। স্থানীয় পত্রিকায় ছাপানো হয় নিখোঁজ সংবাদ। তবে খোঁজ মিলছিল না কোনও। বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দফতরে খোঁজ নিয়েছিলেন ছেনুয়ারা বেগম। কিন্তু হদিস মিলছিল না। এর দুই মাস পর এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ থানা থেকে ছাড়া পাওয়া এক স্থানীয় ব্যক্তির কাছে ছেনুয়ারা নিশ্চিত হন তার স্বামী রয়েছে ‘ওসির টিম’-এর কাছে। ওসির নাম প্রদীপ কুমার দাশ।
ভুক্তভোগী পরিবারটির দাবি, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে এরপর যোগাযোগ করলে প্রথমে স্বীকার করেননি তিনি। এরপর আব্দুল জলিলের বড় ভাই আব্দুর রশিদকে হুমকি দিয়ে বলেন, তোমার ভাই বড় মাদক ব্যবসায়ী, যদি জীবিত চাও ৩০ লাখ টাকা নিয়ে আসো। তবে দাবি করা টাকা জোটাতে পারেনি আটক হওয়া আবদুল জলিলের পরিবার। এরপর গত ৭ জুলাই মঙ্গলবার ভোরে মহেশখালী পাড়া এলাকায় কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন আবদুল জলিলসহ সাদ্দাম হোসেন।
গত শনিবার ৮ আগস্ট দুপুরে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নিহতের স্বজনরা এ ঘটনায় বিচারের আকুতি জানিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন। তারা দাবি করেন, টানা আট মাস থানার ভেতরে বানানো টর্চার সেলে আব্দুল জলিলকে আটকে রেখে নির্যাতন করার পর গত ৭ জুলাই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতদিন ধরে থানার ওসির টিমের হাতে আটক করে রাখা হলেও তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। তাকে আটকে রাখার কথা স্বীকারও করা হয়নি। গোপনে আটকে রেখে পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। দিতে না পারায় তাকে ‘ক্রসফায়ারে’ দেয়া হয়েছে। থানায় ৮ মাস আটকে রাখার পর সিএনজিচালক আব্দল জলিলকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যার অভিযোগ করেন তার স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম। কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত জলিলের স্ত্রী ছেনুয়ারা এসময় কান্নার জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী এমন কী অপরাধ করেছিল, তাকে এমনভাবে গুলি করে মারতে হয়েছে?



 

Show all comments
  • Manik ১০ আগস্ট, ২০২০, ২:৫৭ এএম says : 0
    সত্য জয় এক দিন হবেই। আর পাপ করেলে পাপের সাজা ভোগ করতে হবে এটাই নিয়ম। ওসির এবং এসাই লেকায়ত ফাসি চাই। এরা পুলিশ নামে ...............
    Total Reply(0) Reply
  • Dipan Barua ১০ আগস্ট, ২০২০, ২:৫৭ এএম says : 0
    রক্ষক যদি হয়ে যায় ভক্ষক, জনগন যাবে কোথায়?
    Total Reply(0) Reply
  • Atiqur Rahman ১০ আগস্ট, ২০২০, ২:৫৮ এএম says : 0
    আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি বেআইনি কাজ করে তাহলে সাধারণ জনগণ কার কাছে বিচার চাইবে? বর্তমানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের মতের অমিল হলে তাদের ইচ্ছে মতো মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন। যার ফলে একটি উজ্জ্বল জীবন তছনছ হয়ে পড়ে।
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল মিনাল ১০ আগস্ট, ২০২০, ৩:০১ এএম says : 0
    বাংলাদেশের মতো অনিরাপদ দেশ পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই
    Total Reply(0) Reply
  • Hazi Masum Billaha ১০ আগস্ট, ২০২০, ৩:০৩ এএম says : 0
    সিফাত কেও মুক্তি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Zulfikar Rahman ১০ আগস্ট, ২০২০, ৩:০৪ এএম says : 0
    কি ভয়ংকর ? মিথ্যা মামলায় জামিন নিতে হয়। সবাই জানে মামলাটি সাজানো। তবুও.....
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ১০ আগস্ট, ২০২০, ৫:৫৯ এএম says : 0
    কেন ??? মানুষ এতো ভয়ংকর,নিষ্ঠুর, দুরাচার ও অমানুষের মতো আচরণ করছে।একটু ভেবে দেখা দরকা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rejaul Karim ১০ আগস্ট, ২০২০, ১০:৩৫ এএম says : 0
    মানুষের যে একটি প্রাণ আছে মানুষ খুন করতে করতে প্রদ্বীপ লিয়াকতের সহচর গন সেটি ভুলেই গিয়েছিলেন।।। পৃথিবীর কোন কিছুই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Kader sheikh ১০ আগস্ট, ২০২০, ১০:৪৬ এএম says : 0
    We demand capital punishment of OC prodip and si liakat.
    Total Reply(0) Reply
  • Payam adnan ১০ আগস্ট, ২০২০, ১০:৪৮ এএম says : 0
    Dui ekjon police kormokortar jonno puro bahini aj colongkito
    Total Reply(0) Reply
  • নাম নাই ১০ আগস্ট, ২০২০, ৪:৪৪ পিএম says : 0
    এদের ব্যাপারে আইনের হাত যদি বন্ধ থাকে, তাহলে এদেরকে জনগনের হাতে তুলে দেওয়া হোক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিনহা হত্যা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ