Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাস্তবায়নের পথে ব-দ্বীপ স্বপ্ন

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম


ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে শত
বছরের মহাপরিকল্পনা

দেশের পানিসম্পদ কাজে লাগাতে নতুন স্বপ্ন নিয়ে ঘোষণা করা হয় ডেল্টা প্ল্যান-২১০০। ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চেয়ারপার্সন করে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল গঠন করেছে সরকার। এতে যুক্ত রয়েছে রূপকল্প-৪১ এর খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রণীত কাঠামো। পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ. কে.এম. এনামুল হক শামীম জানান,

দীর্ঘমেয়াদী এই কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়নে নেদারল্যাল্ডসের ব-দ্বীপ পরিকল্পনাকে মডেল হিসেবে নেয়া হয়েছে।
ব-দ্বীপ পরিকল্পনার আওতায় ছয়টি অঞ্চলে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হলো উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওড় ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নদীবিধৌত অঞ্চল ও নগর এলাকা। বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদেরা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা কৌশলগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে ২৬টি গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নদী নাব্য ফিরে পাবে। পরিকল্পিতভাবে নদীগুলো নাব্য রাখতে পারলে দেশে আর বন্যা থাকবে না। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আর সেজন্য এখন থেকেই অর্থের উৎস ঠিক করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। এই ব-দ্বীপ ঘিরেই সামগ্রিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে শত বছরের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা। পরিকল্পনার প্রথম ধাপে নদী ব্যবস্থাপনা, পানিবদ্ধতা দূরীকরণ এবং নদী-সাগর থেকে ভূমি উদ্ধার করে দেশের আয়তন বাড়ানোর মতো তিনটি কর্মসূচি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত দেশের স্বপ্ন পূরণে রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়নে কৃষি খাতের উন্নয়ন ঘটিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, শিল্প খাতের উন্নয়ন করে সকলের জন্য কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যের প্রসার, সকলের জন্য সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য জনস্বাস্থ্য পরিকল্পনা, পরিবেশ উন্নয়ন ও সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-প্রতিবেশ খাত বিশেষ গুরুত্ব থাকছে ব-দ্বীপ পরিকল্পনায়।

ডেল্টা প্ল্যানে ২০১৮-৩০ সাল নাগাদ প্রথম পর্যায়ে ৬টি হটস্পট ঠিক করে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সরকার। এর মধ্যে ৬৫ প্রকল্প ভৌত অবকাঠামো সংক্রান্ত, ১৫টি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং গবেষণা সংক্রান্ত। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূর করা ও ওই সময়ের মধ্যে দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা লাভ। সমীক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণা কাজের জন্য নেদারল্যান্ডস সরকার ইতোমধ্যে ৪৮ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩৩টি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কিন্তু এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হবে।

শত বছরের মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চেয়ারপার্সন করে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল’ গঠন করেছে সরকার। এর আগে বন্যা, নদীভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে বহু আলোচিত ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। ডেল্টা প্ল্যান নামে বেশি পরিচিত এ মহাপরিকল্পনার অধীনে আপাতত ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প নেবে সরকার, যাতে ব্যয় হবে প্রায় ২৯৭৮ বিলিয়ন টাকা। ডেল্টা গবর্ন্যান্স কাউন্সিলে কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রীকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়া এই কাউন্সিলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকেও সদস্য করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্যকে এই কাউন্সিলের সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা এবং ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখন থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন এবং শুরুতেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্যা, নদীভাঙন, নদীশাসন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামের পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের আয়তন বাড়বে।

ডেল্টা পরিকল্পনার মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসের ভূমি বাড়ছে। নেদারল্যান্ডস এ পর্যন্ত ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি পেয়েছে। বাংলাদেশেও নদীবাহিত পলি দিয়ে এমনভাবে ভ‚মি পেতে পারে। আগামী ১০০ বছরে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা এটি। শুধু তাই নয়, ২১০০ সালে বাংলাদেশকে কোন জায়গায় দেখতে চাই তা ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে। পৃথিবীতে এত দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনা আর কোন দেশ করেনি। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে পারলে কৃষিতে আর পিছিয়ে পড়বে না বাংলাদেশ। এজন্য নেদারল্যান্ডসের ব-দ্বীপ পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাড়ছে। দেশটি নতুন ভূমি পেয়েছে। বাংলাদেশেও নদীবাহিত পলি দিয়ে এমনভাবে ভূমি পেতে পারে।



 

Show all comments
  • মিলন ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩১ এএম says : 0
    আশা করি এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও অনেক বেশি শক্তিশালী হাবে
    Total Reply(0) Reply
  • পারভেজ ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩২ এএম says : 0
    দেশের পানিসম্পদ কাজে লাগাতে নতুন স্বপ্ন
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩২ এএম says : 1
    প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শী পরিকল্পনার জন্য দেশ একদিন উন্নত দেশের কাতারে চলে আসবে
    Total Reply(0) Reply
  • রোমান ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৩ এএম says : 0
    আমাদের এই সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে ভালোভাবে
    Total Reply(0) Reply
  • সৌমি ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৪ এএম says : 0
    প্রত্যেকটি প্রকল্পে যাতে কোন কোন ধরনের দুর্নীতির না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • শিরিন ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৫ এএম says : 0
    নেদারল্যান্ডসের ব-দ্বীপ পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাড়ছে। দেশটি নতুন ভূমি পেয়েছে। বাংলাদেশেও নদীবাহিত পলি দিয়ে এমনভাবে ভূমি পেতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • জহিরুল ইসলাম ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৬ এএম says : 1
    বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জাতির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তাকে দীর্ঘ হায়াত দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • রফিক ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৬ এএম says : 1
    সুদূর প্রসারী এই চিন্তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Emdadul Haque Badsha Badsha ৯ আগস্ট, ২০২০, ৮:৪৫ এএম says : 0
    আল-হামদুলিল্লাহ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অত্যন্ত সময়োপযোগী+ সৎ সাহসী প্রকল্প। কিন্তু এতে সামান্য নয় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে--যেমন অতি অল্প ব্যয়ে দেশীয় বাঁশ-চাটাই-গাছ পালা দিয়ে পরিবেশ বান্ধব বান্ডালিং করে (natural Low-cost Dredging) নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি+নদী শাসন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব তার প্রতি গুরুতবারোপ করা হয় নি কারণ এতে ব্যক্তিগত লাভ খুব কমের সম্ভাবনা কিন্তু জাতীয় লাভ অনেক অনেক বেশী । এ ব্যাপারে বুয়েটের পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা জানান যে এটি পরবর্তীতে করা হবে । তবুও মন্দের ভাল ।
    Total Reply(0) Reply
  • রুদ্র ৯ আগস্ট, ২০২০, ৯:৩৩ এএম says : 0
    দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই
    Total Reply(0) Reply
  • সুজন ৯ আগস্ট, ২০২০, ৯:৩৪ এএম says : 0
    এভাবে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব-দ্বীপ-স্বপ্ন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ