Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি

জামিন বৃদ্ধির আবেদন করবে পরিবার

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

চিকিৎসার জন্য ছয় মাসের জামিন পেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এখনো আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা শুরুই করতে পারেননি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। গত ২৫ মার্চ জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই গুলশানের ভাড়া করা বাসভবন ফিরোজায় অবস্থান করছেন তিনি। চিকিৎসা চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনেই। করোনার কারণে যথাযথ চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় এই সময়ে শারীরিক অসুস্থতার তেমন উন্নতি হয়নি বলে জানিেেছন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। এদিকে জামিনের মেয়াদ শেষের দিকে হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁর উন্নত চিকিৎসা, প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ চেয়ে চলতি মাসেই জামিন বৃদ্ধির আবেদন করবে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা।

জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্যই পরিবারের পক্ষ থেকে জামিন আবেদন করা হয়। সরকার নির্বাহী ক্ষমতাবলে সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ৬ মাসের জামিন দিয়েছে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, এমন এক সময়ে ম্যাডাম মুক্তি পেলেন, যখন চিকিৎসা তো দূরের কথা, একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই জামিনের সময়সীমা শেষ হয়ে আসছে। দলীয় প্রধানের চিকিৎসা নিয়ে তাই উদ্বিগ্ন তারা। বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আবদুস সালাম আজাদ বলেন, স্থায়ী কমিটির নেতাদের মুখে শুনেছি দেশনেত্রী এখনো অনেক অসুস্থ। করোনা পরিস্থিতিতে তো চিকিৎসাই শুরু হয়নি। যথাযথ চিকিৎসা না পেলে তিনি সুস্থ হবেন কিভাবে?

বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যায়, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতার এখনো তেমন উন্নতি হয়নি। কারণ করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসাই শুরু করা যায়নি। আনুষ্ঠানিক চিকিৎসার জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। চিকিৎসকদের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। সেই আনুষ্ঠানিকতাই শুরু হয়নি। বিএনপি নেতা ও খালেদা জিয়ার একজন চিকিৎসক বলেন, এই অবস্থায় কিভাবে হাসপাতালে যাওয়া বা চিকিৎসকদের বাসায় নেয়া সম্ভব? অসুস্থতার কারণে ম্যাডামের করোনা ঝুঁকি বেশি। তাই বিএসএমএমইউ’র দেয়া প্রেসক্রিপশনেই এখনো চিকিৎসা চলছে। কিন্তু তেমন উন্নতি হয়নি। এখনো ভালোভাবে হাঁটতে পারেন না, খেতে সমস্যা হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাডাম এতোই অসুস্থ নিজেও বাসার নিচে নামতে পারেন না, হাটতেও পারেন না। তার এখনো খাওয়া-ধাওয়ায় সমস্যা, খেতেও সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন রকমভাবে। আসলে ম্যাডামের উন্নত চিকিৎসা যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে না। এখন যে পরিস্থিতি চলছে হাসপাতালেও যাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থাটা ভালো না।

তিনি বলেন, তার সমস্যাগুলো এখনো সমাধান করা সম্ভব হয়নি। কারণ প্রকৃতপক্ষে তিনি তো চিকিৎসার সুযোগই পাচ্ছেন না। আজকে দেশে যে অবস্থা হয়েছে হাসপাতালগুলোতে যাওয়া যায় না, ডাক্তার সাহেবরা আসতে পারছেন না এবং বিদেশে গিয়ে যে চিকিৎসা করবেন তারও কোনো সুযোগ নেই। সেই কারণে এখনো তিনি উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাননি। আমরা সেই সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আমরা আশা করবো যে, তিনি সেই সুযোগ পাবেন।

এদিকে ৬ মাসের জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে চার মাস অতিবাহিত হয়েছে। আগামী মাসের শেষ দিকে শেষ হয়ে যাবে এই সময় সীমা। তাই এরই মধ্যে জামিন বৃদ্ধির আবেদন করার চিন্তা করছে পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের একজন সদস্য জানান, জামিন বৃদ্ধির আবেদন নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা হচ্ছে। যেহেতে তাঁর চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়নি। তাই এবারের আবেদনে দেশে ও দেশের বাইরে যেখানে সম্ভব চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বিবেচনা করে সরকার সেই সুযোগ দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

যদিও বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছেন গত ১ আগস্ট ঈদ উল আযহার দিনে দলের শীর্ষ নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করতে গেলে জামিন বৃদ্ধির বিষয়ে কোন আলোচনা করেননি বিএনপি প্রধান। তবে এরপরই বেগম জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন ফিরোজার বাসভবনে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির বিষয়টি কোর্টের হাতে নয়, সবকিছুই নির্ভর করছে সরকারের ওপর। কারণ এখন যে, জামিনে আছে সেটা সরকারের বিশেষ ক্ষমতা বলে। সেই জামিনের সময় সীমা কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তাই ওনার (বেগম জিয়া) পরিবারের পক্ষ থেকে শিগগিরই জামিন বৃদ্ধির আবেদন করা হবে। আবেদনে দেশে চিকিৎসার কথা বলবেন, প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসার কথাও বলতে পারেন।

 

 



 

Show all comments
  • শাফায়েত ৮ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৯ এএম says : 1
    শুধু বিএনপি নয় সারা দেশের অধিকাংশ মানুষ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন
    Total Reply(0) Reply
  • ফয়সাল ৮ আগস্ট, ২০২০, ৪:১০ এএম says : 1
    এই নেত্রীকে জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করার সুযোগ দেওয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • আব্দুল মান্নান ৮ আগস্ট, ২০২০, ৪:১০ এএম says : 0
    আল্লাহ তাকে দ্রুত সুস্থতা দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • সৌরভ ৮ আগস্ট, ২০২০, ৪:১১ এএম says : 1
    বেগম জিয়া এদেশের 16 কোটি মানুষের নয়নের মনি।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ৮ আগস্ট, ২০২০, ১০:৫৪ পিএম says : 0
    বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এখনও শুরু হয়নি এটা ভাবতেও অবাক লাগে। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং একটি বৃহত্তর দলের প্রধান হয়েও তিনি চিকিৎসা সুযোগ পাচ্ছেন না এটা ভাবাই কষ্টকর। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনেকরি বেগম জিয়ার বিষয়টা অবশ্যই মানবিক দিক থেকে বিচার করা উচিৎ। তিনি অসুস্থ চিকিৎসা নিতে পারছেন না এটা বড়ই দুঃখজনক বিষয়। একসময়ের প্রধানমন্ত্রীর এহেন অবস্থা ভাবাই যায়না। ওনাকে সঠিক ভাবে দেখাশুনা করার কেহ নেই এটাই ফুটে উঠেছে ওনার এই অবস্থায়। তাই মহান আল্লাহ্‌র দরবারে আমি প্রার্থনা করছি আল্লাহ্‌ যেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাবস্থা করিয়ে দিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ