পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীসহ সারাদেশের নামী-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অভিভাবক, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই বাড়ানো হচ্ছে শতভাগ পর্যন্ত বেতন ও ফি। হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করেই আদায় করা হচ্ছে এসএসসি’র ফরম পূরণে বাড়তি ফি। শুধু বেতন বা ফি বৃদ্ধিই নয়, ভর্তির ক্ষেত্রেও নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত হয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বছরের শুরুতেই সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে ভর্তি, টিউশন, সেশন ফি, বেতন ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। এ নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা মানছে না কোনো প্রতিষ্ঠানই। দেশের নামী-দামি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করছে। শুধু অভিভাবকদের প্রতিবাদই নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়ার পরও এখনো কোনো প্রতিষ্ঠান বাড়তি ফি কমায়নি। ফেরত দেয়নি অতিরিক্ত আদায় করা অর্থও। বরং দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি ফি নিয়ে সৃষ্টি করেছে নৈরাজ্য। যদিও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে ফেরত না দিলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও তিনি জানিয়েছেন।
নতুন বেতন কাঠামোর অজুহাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে নামী-দামি বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ও বেতন বাড়ানো হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতভাগ পর্যন্ত ফি বৃদ্ধি করায় প্রতিবাদে নামে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ রাজধানী ও চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকরা আন্দোলন শুরু করেন। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান গ্রহণসহ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেন তারা। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৭ জানুয়ারি বর্ধিত বেতন ফি আদায় না করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি আদেশ জারি করে। ওই আদেশে আরও বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রবিধানমালা অনুযায়ী সরকারের নির্দেশনা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদকে বেতন ও ফি’র হার নির্ধারণ করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনার পর দু-একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এতে বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তবে বন্ধ হয়নি অতিরিক্ত ফি আদায়। আর যেসব প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে সেই অর্থও ফেরত দেয়নি এখনো পর্যন্ত। কেবল ভর্তি, বেতন ও সেশন ফি বৃদ্ধিই নয়, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণেও বাড়তি ফি আদায় করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও এর আগে গত বছর ১ ডিসেম্বর হাই কোর্টের এক আদেশে এসএসসির ফরম পূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি অর্থ আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ফরম পূরণে বাড়তি ফি আদায়ের বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই রুল জারি করে। আদেশে বলা হয়, যেসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বাড়তি অর্থ আদায় করা হয়েছে, তারা নিজ নিজ শিক্ষাবোর্ডে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানাবে। এ বিষয়ে বোর্ডগুলোকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। কি ব্যবস্থা নেয়া হলো তা জানিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানদের প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু আদালতের ওই আদেশের পরও বন্ধ হয়নি বাড়তি অর্থ আদায়। ফরম পূরণে বোর্ডগুলোর নির্ধারিত ফি’র বেশি অর্থ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আর এক্ষেত্রে বাড়তি টাকার কোনো রসিদও দেয়া হয়নি অভিভাবকদের। এছাড়া কোচিং ফি’র নামে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা করে আদায় করার অভিযোগ রয়েছেই। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান রসিদ দিয়ে কোচিংয়ের ফি আদায় করছে। এক্ষেত্রেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা কাজে আসছে না। আর সাম্প্রতিক সময়ে বাড়তি অর্থ আদায় বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে কোনো কোনো বেসরকারি স্কুল অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অভিভাবকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই কোনো কোনো বেসরকারি স্কুল শতভাগ বেতন বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের ফি আদায় করছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুলের পরিচালনা কমিটি ভেঙে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় করায় দেশের চার শতাধিক স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অতিরিক্ত ফি আদায় করা এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ভেঙে দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। হাইকোর্টের নির্দেশ ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্তটি আসতে পারে। এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়কারী এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে ‘কমিটি অকার্যকর’ করা। এছাড়া আদায় করা অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের ফেরত দেয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদনের পরই সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হবে।
শুধু ফি আদায় নয়, ভর্তির ক্ষেত্রেও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘কিছুসংখ্যক’ অতিরিক্ত ভর্তির কথা বলা হলেও বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে ২ হাজারেরও বেশি অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালা লঙ্ঘন করে টাকার বিনিময়ে ও তদবিরের মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। এই কাজে পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য ভূমিকা রাখছেন। পরিচালনা কমিটি ও স্কুল সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ সরকারি পর্যায়ের কিছু ও রাজনৈতিক পর্যায়ের কিছু তদবিরকে সামনে দেখিয়ে বাকিগুলো মূলত টাকার বিনিময়ে ভর্তি করা হচ্ছে।
ওই স্কুল সূত্রে জানা যায়, কিছুসংখ্যক অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞাপন অনুযায়ী চলতি শিক্ষাবর্ষে তিন শাখায় (মতিঝিল, মুগদা ও বনশ্রী) প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৪০টি আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে বিজ্ঞাপিত আসন অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে লটারি ও অন্যান্য শ্রেণিতে পরীক্ষা নিয়ে ভর্তির কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন বিজ্ঞাপিত পদের বাইরেও প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টিউশন ফি, সেশন ফি ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে, তাদের তা সাত দিনের মধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ফেরত দিতে হবে। এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডকে জানাতে হবে। টাকা ফেরত না দিলে বোর্ডগুলো এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সাত দিনের মধ্যে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিয়ে দেন, অসম্মান হবেন না।’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে অতিরিক্ত অর্থ আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটিকে অকার্যকর ঘোষণা করে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে এ সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, কারা কারা বাড়তি টাকা নিয়েছে তাদের তালিকা আমাদের কাছে আছে। এরপরও আমরা সময় দিচ্ছি। যারা ফেরত দেবে তাদের নাম তালিকায় রাখা হবে না। সাত দিনের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
সবক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে নাহিদ বলেন, ভর্তি, বেতন, ফরম পূরণ কিংবা কোচিংয়ের নামে যেসব প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ আদায় করবে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করতে হবে। অভিভাবকদের অতিরিক্ত কোনো অর্থ না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যে প্রতিষ্ঠান যেভাবেই বাড়তি অর্থ দাবি করবে তা আপনারা না দিয়ে একত্রিত হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে (আমার কাছে) অভিযোগ করুন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সুরক্ষারও দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।