স্টাফ রিপোর্টার : বিভাজনের রাজনীতি দেশে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করে এ থেকে উত্তরণে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আজকে বিভক্তি সর্বপর্যায়ে। রাজনীতির অঙ্গনে তো আছেই, ক্রীড়াঙ্গনে, সংস্কৃতির অঙ্গনে, সামাজিক জীবনে পর্যন্ত বিভক্তি এসে গেছে। শুনলে অবাক লাগে যে, বিয়ের অনুষ্ঠানেও পর্যন্ত রাজনৈতিক বিভক্তি এসে পড়েছে। স্বীকার করি আর না করি, দেশে একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ বিরাজ করছে। আমাদের একেবারে অন্ধকার গহ্বরের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ফখরুল বলেন, এই বিভক্তির সংস্কৃতি আমাদের বেশি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না, এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। আমাদের অবশ্য সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়নের জন্য ঐক্যে পৌঁছাতে হবে। আমরা বারবার এই জাতীয় ঐক্যের কথা বলছি, এখনো বলছি। তা না হলে আমরা যে অন্ধকারের মধ্যে ঢুকে পড়েছি, তা থেকে বেরুতে পারব না।
সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে ক্রিকেট সংগঠক ও প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গঠিত ‘ক্রিকেট অঙ্গন’ নামক এক সংগঠনের উদ্যোগে ২০০১-০৪ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) উপদেষ্টা ও গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা হয়। আলোচনার পর কোকোর রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি কোকো মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কোকো সাহেব বাংলাদেশ পেশাজীবী ক্রিকেটের সূচনা করেছিলেন। এটা দুঃখজনক যিনি শেষের ক্রিকেটের জন্য অবদান রেখেছেন, আজকে তার স্ত্রী ও সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ক্রিকেট কনট্রোল বোর্ড তার ইন্তেকালে যদি একটা শোকবাণী দিতে কিংবা একটা স্মরণসভা করত তাতে বিসিসিবি ছোট হয়ে যেত না। আমরা এত বেশি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছি যে, মানুষকে তার অবদানের জন্য স্মরণ পর্যন্ত করতে চাই না।
তিনি বলেন, আমাদের আজ বিভাজন থেকে মুক্ত হয়ে সত্যিকার অর্থেই সেই সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে হবে। আমরা যদি রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে এদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক, সমৃদ্ধময় বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
জিয়া পরিবারকে পাকিস্তানপন্থি হিসেবে চিহ্নিত করার ক্ষমতাসীন দলের অপচেষ্টার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখনো অনেকে বলছেন, কোকো সাহেব ক্রিকেট উন্নয়ন কমিটির দায়িত্ব পালনকালে দেশে তিনি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নামকরণ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের নামে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের আজ সেই পরিবারকে আজ পাকিস্তানপন্থি পরিবার হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। লজ্জার কথা। সেই পরিবারকে চিহ্নিত করা হচ্ছে যার বাবা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কোকো সাহেবের মা যিনি ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্দি ছিলেন, নির্যাতিত হয়েছিলেন, তাকেও আজকে কথা শুনতে হয়।
আরাফাত রহমান কোকোর স্মরণে একটি স্মরণিকা প্রকাশ এবং তার নামে একজন ভালো ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়কে পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ নিতে আয়োজকদের পরামর্শ দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সদস্য খন্দকার জামিল উদ্দিন, কাজী ইউসা মিশু, শাহ নুরুল কবির শাহীন, রফিকুল ইসলাম বাবু, কাইয়ুম চৌধুরী, সাবেক ক্রিকেট খেলোয়াড় তানজীব আহমেদ সাদ, আদনান রহমান দীপন, সেলিম শাহেদ, জাতীয় ফুটবল দলে সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনে সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল প্রমুখ ক্রীড়া সংগঠকরা বক্তব্য রাখেন।
সিরাজগঞ্জে দলীয় নেতাদের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ :
গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সিরাজগঞ্জে দলীয় ২৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী মিথ্যা ও রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরের ধারাবাহিকতার অংশ সিরাজগঞ্জের মামলা। জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২৮ জন নেতাকর্মীর নামে দায়েরকৃত মামলায় যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। আমরা এ ধরনের রায়ে চরম হতাশ ও সংক্ষুব্ধ হয়েছি। আমরা এ রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।