Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের শুল্কের বেড়াজালে বাংলাদেশের পাটশিল্প

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ‘অ্যান্টি-ডাম্পিং’য়ের অভিযোগ ও সরকারের নগদ সহায়তার (ভর্তুকি) অজুহাতে ধারাবাহিকভাবে পাটপণ্য রফতানিতে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এতে সার্বিকভাবে দেশের পাটশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু ছোট ছোট পাটকল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ থেকে নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে (ডাম্পিং) পাটজাত পণ্য রফতানি করায় ভারতের পাটশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সেদেশের পাটকল মালিকরা। একই সঙ্গে পাটপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ সরকার ব্যবসায়ীদের যে নগদ সহায়তা দিচ্ছে তা ভারতে পাট ব্যবসায়ে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য ভারত সরকার অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি ও ‘কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি’ আরোপের কথা জানিয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্যের ওপর ভর্তুকি দেয়ায় কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি বসানোর আবেদন জানায় ভারতের পাটকল মালিকরা। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে বাংলাদেশ দূতাবাসকে চিঠি দিয়েছে। আর এ বিষয়ে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বসতে চায় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
গত বছরের অক্টোবরে ভারতে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়া হয়। এটি প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ প্রস্তুতি নেয়ার আগেই কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি সম্প্রতি আরোপের ঘোষণা দেয় ভারত।
বাংলাদেশের পাটপণ্য রফতানির ওপর যাতে কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি আরোপ করা না হয়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে ভারত গেছে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল। ভারতের রাজধানী দিল্লির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগে এসংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে। দুই পক্ষের এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজ কুমার রায়। অপর দিকে ভারতের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এ কে ভাল্লা। এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পাট অধিদফতর, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন ও বাংলাদেশের ডব্লিউটিও সেলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি আরোপের বিষয়ে আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহে ঢাকায় এসেছে ভারতের ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের চার সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল। মঙ্গলবার দুপুরে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রতিনিধিদলটি। এ সময় ভারতের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির ওপর কাউন্টার ভেইলিং শুল্ক আরোপের বিষয়ে ভারতের ব্যবসায়ী মহলের কেউ কেউ চিন্তিত। আবার অনেক ব্যবসায়ী এটার পক্ষেও রয়েছেন।
তবে বান্তবে এ শুল্ক আরোপ করা হলে পণ্য আমদানি মূল্য বেড়ে যাবে। এতে বাংলাদেশসহ ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান ভারতের ব্যবসায়ীরা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজ কুমার রায় সাংবাদিকদের জানিছেন, ‘পাটপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে নগদ সহায়তার বিষয়টি ভারত বিবেচনা করবে। নগদ সহায়তার বিষয়টি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিমালা অনুযায়ী করা হবে। এ বিষয়ে চলমান তদন্ত কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে চেষ্টা চলছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুট গুডস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম খান মোমেন জানিয়েছেন, ‘অ্যান্টি-ডাম্পিং নিয়ে আমরা বেশ সমস্যায় আছি। ভারতের অভিযোগ, আমরা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করছি। এতে তাদের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে। এর জন্য তারা অ্যান্টি-ডাম্পিংয়ের ওপর পলিসি করছে বা করারোপের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা হলে আমাদের রফতানি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ভারতের ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছে। তারা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। অ্যান্টি-ডাম্পিংয়ের বিষয়টি সুরাহা না হতেই কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। ফলে আমাদের পাটশিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
এর আগে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির উদ্যোগ ভবনে অনুষ্ঠিত ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে বৈঠকেও কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাট ও পাটজাত পণ্যে রফতানি আয় হয়েছে ৪২ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার। এ ছয় মাসে এ খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত এ খাতে রফতানি আয় হয় ৮৬ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত এ খাতে আয় হয় ৮২ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে একই সময়ে আয় হয় ১০৩ কোটি মার্কিন ডলার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতের শুল্কের বেড়াজালে বাংলাদেশের পাটশিল্প
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ