Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হজ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন

প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৪ পিএম, ৩ আগস্ট, ২০১৬

কিছু বিপথগামী যুবক ইসলাম ধর্মকে হেয় করছে
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। কিছু বিপথগামী যুবক নিরীহ মানুষ হত্যা করে ইসলাম ধর্মকে হেয় করছে। যারা বিপথে যেয়ে খুন-খারাবি করে, মানুষ হত্যা করে আমাদের পবিত্র ধর্মকে হেয়-প্রতিপন্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান তিনি। গতকাল বুধবার রাজধানীর আশকোনায় হজ ক্যাম্পে ‘হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও হজ কার্যক্রম-২০১৬’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা (জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা) মানুষ খুন করে কী অর্জন করছে- সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমাদের ধর্ম আমরা যারা পালন করি, তাদের জন্য এই পৃথিবীতে বসবাস করাটা কঠিন করে দিচ্ছে। তারা আমাদের ইসলাম ধর্ম; যে ধর্ম সব থেকে শান্তির বাণী বলেছে, সহনশীলতার কথা বলেছে, সকল ধর্মের অধিকারের কথা বলে গেছে। সেই ধর্মটাকেই আজকে এভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করে তারা কার স্বার্থ রক্ষা করছে আর কী অর্জন করছে- সেটাই আমার প্রশ্ন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দুঃখ লাগে খুব, খুব কষ্ট লাগে, যখন আমি দেখি কিছু বিপথগামী ঠা-া মাথায় নিরীহ মানুষ হত্যা করে। আমি বলব, যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে, তারা ইসলাম ধর্মের কোনো ভালো কাজ করছে না বরং ইসলাম ধর্মটাকে অন্যের কাছে হেয় করে দিচ্ছে। অন্যদের কাছে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে একটা ভীতি সৃষ্টি করে দিচ্ছে। বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলকে যার যার কর্মস্থলে সজাগ থাকার আমি আহ্বান জানাচ্ছি। যেন আর কেউ এই বিপথে যেতে না পারে। বাংলাদেশ একটা শান্তিপূর্ণ দেশ। এখানে জঙ্গি-সন্ত্রাসের কোন ঠাঁই হবে না। আর ইসলাম ধর্মও সে অনুমতি দেয় না। তিনি সবাইকে জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন- বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি এডভোকেট সাহারা খাতুন এবং বাংলাদেশে সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ এইচ এম আল মুতাইয়িরি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.আব্দুল জলিল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। এই মাসেই আমি মা-বাবা ভাই, ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী’সহ পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়েছি। বিদেশে ছিলাম বলে আমি ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানা বেঁচে যাই।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বলেই আজ আমাদের দেশ থেকে ১০১৭৫৮ জন হজ যাত্রী হজে যেতে পারছেন। স্বাধীনতার পর পরই দেশ থেকে যেন সবাই হজে যেতে পারেন সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজও ক্রয় করেন। তার নেতৃত্বেই আমরা ওআইসি’র সদস্য পদ লাভ করি। তিনি দেশে ঘোড়দৌড়, জুয়া, মদ -এগুলো নিষিদ্ধ করেন এবং মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তখনই তৈরি হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ইসলাম ধর্মকে একবারে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের জন্য জমি দিয়ে যান। বিশ্ব ইজতেমার জায়গা, কাকরাইল মসজিদের জন্যও জায়গা দিয়ে যান এবং রেডিও-টিভিতে সম্প্রচার শুরুর আগে কোরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করেন। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যরে ধর্ম -সেই ধর্মের মূল বাণীটা যেন দেশবাসী জানতে পারে জাতির পিতা তাঁর উদ্যোগে সেই ব্যবস্থা করে যান।
তিনি বলেন, জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই আমরা সব ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিসগুলো জাতীয় রাজস্ব খাতে এনে দেই এবং সউদী সহযোগিতায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সম্প্রসারণ ও শ্রীবৃদ্ধির কাজ করি।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ’৯৬ পরবর্তী সময়ে তার সরকার জাতীয় মসজিদের সংস্কারে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল পরবর্তীকালের বিএনপি-জামায়াত সরকার সেগুলো বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগই আবার তা সম্পন্ন করে। সউদী একজন মন্ত্রী এসে পরবর্তীতে এই সংস্কারকৃত মসজিদের উদ্বোধন করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার হাতে যেহেতু শুরু এবং আল্লাহর রহমতে আমার হাতেই তাঁর কাজ শেষ হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখনই সরকারে এসেছি সবসময়ই উদ্যোগ নিয়েছি, আমাদের যে শান্তির ধর্ম সেটা যেন সাধারণ মানুষ যথাযথভাবে পালন করতে পারেন।
হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে তার উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনে বহুবার আমি হজে গিয়েছি, ওমরাহ করেছি। যদিও সউদীর রাজকীয় ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে যেতাম, কিন্তু সেখানে আমি সব সময় বাঙালি হাজিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের খোঁজ-খবর করে সুবিধা-অসুবিধার নোট নিয়েছি এবং কিভাবে তা সুন্দর করা যায় তার পরিকল্পনাও করে রাখি। তারপরে যখন সরকারে এলাম তখন সার্বিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার সউদী আরবের সঙ্গে মিলে হাজিদের সুবিধার জন্য যাতায়াতের বিমান, সেখানে বাসা-বাড়ি, ট্রান্সপোর্টসহ সব রকমের উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে। আগে হজ অফিস শুধু জেদ্দায় ছিল সেখানে আমরা মক্কা শরীফে বাংলাদেশ মিশনের সামনেও হাজীদের সুবিধার্থে হজ অফিস নির্মাণ করে দিয়েছি। আমরা ৫ বছর মেয়াদি জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি প্রণয়ন করে কাজ করে যাচ্ছি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিজিটাল সেন্টার-৫৭২৫টি ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র থেকে হজযাত্রীদের জন্য সারাবছরব্যাপী হজ রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছি। যেন হজের সময় খুব বেশি চাপ না পড়ে এবং এই রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে হাজীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা কঠোর নজরদারিতে রেখেছি।
তিনি বলেন, যেন হজ বা ওমরাহ’র নাম করে সউদী আরবে গিয়ে কেউ থেকে না যায়- সউদী সরকারের সবসময়কার এই আপত্তির প্রেক্ষিতে আমরা সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি। হজ ব্যবস্থাপনাকে সরকার সুষ্ঠু কাঠামোবদ্ধ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এ বছর রেজিস্ট্রেশন করেছেন, কিন্তু হজে যেতে পারেননি, তারা আগামীবার যেন অগ্রাধিকার পান সে বিষয়ে সরকার খেয়াল রাখবে। তিনি বিষয়টির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজের জন্য ওয়েব পোর্টাল করে দিয়েছি-(িি.িযধলল.মড়া.নফ) তাছাড়া মোবাইল এসএমএস’র মাধ্যমেও হজ যাত্রীদের যাবতীয় তথ্য ও হজ সম্পর্কিত সকল তথ্য যে কেউ পেতে পারেন। কেননা, সব হজযাত্রীর একটি ডাটাবেজ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ই-হজ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু সউদী সরকার ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করেছে তাই তার সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও দেশে ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করেছি এবং বারকেড রিপার’সহ প্রয়োজনীয় সব আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
জেদ্দায় হাজিদের অসুবিধা নিরসনে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে জেদ্দায় টার্মিনালে গিয়ে অনেককে বসে থাকতে হত। যে কারণে আমরা নিজস্ব উদ্যোগে সেখানে একটি প্লাজা ভাড়া নিয়েছি। যেখানে হাজীদের মালপত্র আনা-নেয়া,তথ্য প্রযুত্তি’সহ সব রকমের সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা প্রদানেরও সুযোগ থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী আশকোনা হাজী ক্যাম্পের উন্নয়নে এবং হাজীদেরও প্রশিক্ষণ প্রদানে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী সউদী বাদশাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যেহেতু আমাদের এখান থেকে বেশিসংখ্যক লোক হজে যেতে চান তার ব্যবস্থা সউদী সরকার করে দিয়েছে। এজন্য তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই, ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার যেকোন দেশের চাইতে হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে এবং সবসময় সব থেকে ভালো অবস্থায় রয়েছে। এজন্য সউদী হজ মন্ত্রণালয়ও বাংলাদেশের ব্যাপক প্রশংসা করছে এবং ২০১৪ সালে শ্রেষ্ঠ হজ ব্যবস্থাপনার স্বীকৃতি দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হজ যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, যে নিয়তে হজে যাচ্ছেন সেই নিয়ত পুরো করে সুস্থ শরীরে যেন ফিরে আসতে পারেন-সেই কামনাই করি। তিনি এ সময় সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য হজযাত্রীদের কাছে দোয়া কামনা করেন।
তিনি বলেন, আমরা দেশকে ভালবাসি আপনাদের কাছে এটুকু কামনা দেশের জন্য দোয়া করবেন, দেশের মানুষের জন্য দোয়া করবেন এবং যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি- জাতির পিতার স্বপ্নের দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ যেন আমরা গড়ে তুলতে পারি। দেশের মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের হাত থেকে মানুষ যেন মুক্তি পায়, উন্নত জীবন পায়- সেজন্য আপনাদের কাছে দোয়া চাই। তিনি দেশ ও জাতির পশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবেও নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া চান।



 

Show all comments
  • সফিক ৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৪০ পিএম says : 0
    প্রশাসনের উচিত মুল হোতাদের খুঁজে বের করা।
    Total Reply(0) Reply
  • রিমন ৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৪২ পিএম says : 0
    বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলকে যার যার কর্মস্থলে সজাগ থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ