পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পবিত্র ঈদুল আজহার দিন আল্লাহপাকের কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে পশু কোরবানি করা। হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর পবিত্র কোরবানির আমলকে আল্লাহপাক কিয়ামত পর্যন্ত জারি রাখবেন। ঈদুল আজহার দু’রাকাত নামাজ আদায় শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ছহি নিয়তে পশু কোরবানি করতে হবে। পশু কোরবানির সাথে সাথে স্বীয় কুপ্রবৃত্তির গলায়ও ছুরি চালাতে হবে। সকল প্রকার গুনাহ পরিহার করে তাকওয়াভিত্তিক জীবন যাপনে সচেষ্ট হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধির প্রতি খেয়াল রেখে কোরবানির পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য যথাযথভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। কোরবানির পশুর গোশত শরীয়তের বিধান মতে বণ্টন করতে হবে। আজ শুক্রবার জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বিভিন্ন মসজিদের খতিব ইমামরা এসব কথা বলেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। অধিকাংশ মসজিদে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ঈদুল আজহার দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে পশু কোরবানি করা। সতর্কতা অবলম্বন করে নিয়ত ছহি করে পশু কোরবানি করতে হবে। কোরবানির পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য যথাযথভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা হচ্ছে জীবনের সর্বক্ষেত্রেই ত্যাগের আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট থাকতে হবে। সকল প্রকার গুনাহ-খাতা পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন, কোরবানির পশুর গোশত শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রয়লব্ধ অর্থ যারা হকদার তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া যাতে নষ্ট না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে। করোনা মহামারীর পাশাপাশি সারাদেশে বন্যা কবলিত অঞ্চলের অসহায় পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় সকলকে এগিয়ে আসার জন্যও পেশ ইমাম গুরুত্বারোপ করেন।
মসজিদে গাউছুল আজমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. নূরুল হক খুৎবার বয়ানে বলেন, করোনা মহামারীর অযুহাতে কেউ কেউ কোরবানি দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। শরীয়তের হুকুম অনুযায়ী সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের অবশ্যই কোরবানি দিতে হবে। ঈদুল আজহার দিন কোরবানি দেয়ার মতো উত্তম কাজ আর কিছুই নেই। কোরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে আল্লাহপাক নেকী দান করবেন। পেশ ইমাম স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোরবানির পশু জবাই এবং পশুর রক্ত ও বর্জ্য দ্রæত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ওপর বিশেষ নজর দেয়ার অনুরোধ জানান।
চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী আজ খুতবা পূর্ব বক্তব্যে বলেছেন এবারের ঈদুল আজহায় করোনা ও বন্যার প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ঈমানের তাগিদেই মহান আল্লাহর দরবারে কোরবানির মহিমান্বিত আমল পেশ করবেন ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে খুশী মনে কোরবানি করতে পারলে জবাইকৃত পশুর রক্তের ফোটা মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাবে বলে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য এক হাদীসে এসেছে যে পশুর শরীরের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে কোরবানিদাতাকে নেকী দেয়া হবে। তিনি বলেন, পশুর কোরবানি করার সাথে সাথে স্বীয় কুপ্র্রবৃত্তির গলায়ও ছুরি চালানোর অভ্যাস তৈরী করতে পারলে ধর্মজীবনে সফলকাম হওয়া সহজ হবে। তিনি সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কোরবানি দেয়া এবং গরীব ও দুস্থদের মাঝে কোরবানির গোশত বণ্টন করার জন্য মুসল্লিদেরকে অনুরোধ করেন।
ঢাকার ডেমরার ঐতিহ্যবাহী দারুননাজাত সিদ্দিকীয় কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো. মনিরুল ইসলাম খুৎবার বয়ানে বলেন, আমাদের হানাফী মাযহাব মতে কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির ওয়াজিব আমল করতেই হবে। তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব। একবার পড়া ওয়াজিব তিনবার পড়া মুস্তাহাব। তিনবার পড়লে তা বেদআত হবে না। ফতোয়ায়ে শামী। তাকবিরে তাশরিক পড়া প্রত্যেক পুরুষ এবং নারীর ওপরে ফরজ নামাজের পরে ওয়াজিব। চাই জামাতে পড়–ক বা একাকী পড়–ক। আজ ফজর থেকে শুরু করে আগামী মঙ্গলবার আসর নামাজ পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজে তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে। তিনি বলেন, কোরবানির সঙ্গে আকিকা দিলে আকিকা সহীহ হবে। বিভিন্ন তাবেঈগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন। তাবেঈর ফতোয়া গ্রহণযোগ্য। তবে এটা উত্তম পদ্ধতি নয়। সন্তান জন্মের ৭ দিনে অথবা ১৪ দিনে অথবা ২১ দিনে আকিকা দেয়া সর্বোত্তম। কোরবানির সঙ্গে আকিকা দেয়া জায়েজ তবে উত্তম নয়।
লালবাগ জে এন সাহা রোডস্থ (বঙ্গারাম বাজার) বায়তুস সালাম জামে মসজিদের খতিব মুফতি মো. দেলোয়ার হোসেন আশরাফি খুৎবার বয়ানে বলেন, কোরবানি হচ্ছে একটি ইবাদত। আমাদের মনে রাখতে হবে ইবাদত তখনই হবে যখন এই কোরবানি আল্লাহর হুকুম ও রাসূল (সা.)এর তরিকা অনুযায়ী হবে। নিজের মন মতো কোরবানি করলে তা’ইবাদত হবে না। অনেক সময় দেখা যায় কোরবানি একটি রুসুম হয়ে যায়। যেমন কোরবানির পশু ক্রয়ের সময় আমাদের নামাজ ক্বাজা হয়ে যায়। পর্দাহীন মহিলাদের পশুর হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসিল আদায়ের সময়ে মিথ্যা কথা বলা হয়। অথচ নামাজ পর্দা করা ফরজ বিধান। কোরবানি করা হচ্ছে ওয়াজিব। ফরজ তরক করে আমরা ওয়াজিব পালন করছি। এমন ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে কবুল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সুতরাং কোরবানির পশু ক্রয় থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সকল কাজ সুন্নাত মোতাবেক হলে ইনশাআল্লাহ কবুল হওয়ার আশা করা যায়। খতিব বলেন, সমস্ত ভুল থেকে তাওবা করে কোরবানি দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে তাওবা করার তৌফিক দান করুন। আমীন। নগরীর সেগুনবাগিচাস্থ মসজিদে নূর এর খতিব মুফতি মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সুবহানী জুমার বয়ানে বলেন, হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর আমল পবিত্র কোরবানিকে আল্লাহপাক কিয়ামত পর্যন্ত জারি রাখবেন। আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্যই ছহি নিয়তে কোরবানির পশু জবাই করতে হবে। কোরবানি শুধু উৎসব নয়; করোনা মহামারীতেও শরীয়তের বিধান অনুসরণ করে কোরবানি আদায় করতে হবে। তিনি বলেন, কোরবানির পশুর গোশত গরিব মিসকিনের মাঝে বণ্টন করা বড় নেকীর কাজ। এই কাজটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আদায় করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।
কামরাঙ্গীরচর মাদরাসা মসজিদে মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী খুৎবার বয়ানে বলেছেন, কোরবানি ইসলাম ধর্মের একটি অন্যতম এবাদত এবং তা মুমিনের ঈমানের পরীক্ষা। ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ। হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহ তা‘আলার হুকুম পালনার্থে নিজ পুত্র ইসমাঈলকে কোরবানি করতে ছুরি চালিয়ে আল্লাহর প্রতি বান্দার পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। আমাদেরকেও এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আল্লাহর হুকুম পালন ও রাসূল (সা.) এর আদর্শ বাস্তবায়নে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে।
রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন জুমার বয়ানে বলেছেন, করোনা মহামারী ও বন্যার কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির সম্মুখীন। দীর্ঘদিন করোনা মহামারীর কারণে সাধারণ মানুষের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দরিদ্রসহ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে। কোরবানি এবং ঈদ আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত। এ অবস্থায় সামর্থ্যবানদের উচিত মধ্যবিত্ত, অসহায় ও দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে কোরবানির গোশত বিতরণ ও আর্থিক সহযোগিতা করে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নেয়া। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা আমাদের সকলের ঈমানী ও মানবিক দায়িত্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।