Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন

প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী
ভারতের রাজধানী দিল্লী। এ দিল্লীতেই থাকতেন কমার্শিরাল পাইলট মোহম্মদ শাহনেওয়াজ জহির ও তার বন্ধু পাইলট প্রবীণ দয়াল। দু’বন্ধু ও তাদের পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়, চমৎকার। যেমন ছিল দু’বন্ধুর মধ্যে তেমনই ছিল উভয় পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মধ্যেও। হঠাৎ করে একদিন প্রবীণ দয়াল মারা গেলেন। তার প্রায় বছর দিন আগে মারা যান প্রবীণ দয়ালের স্ত্রীও। অসহায় হয়ে পড়লো প্রবীণের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের দেখাশুনা বা পড়ালেখা করে বড় করার আপন বলতে কেউ নেই।
উদার মনের অধিকারী মুসলমান বন্ধু শাহনেওয়াজ জহির বন্ধুত্বের ঋণ পরিশোধ করতে চাইলেন। অনাথ যমজ দুই ভাইবোন আয়ুষ এবং প্রার্থনার দেখভালও অভিভাকত্বের দায়িত্ব নিতে চাইলেন জহির। প্রথা মতো এ উদ্দেশ্য তিনি দিল্লী হাইকোটের কাছে আবেদন করে স্থাপন করলেন সম্প্রীতি ও মানবিকতার এক অনন্য নিদর্শন। মনুষ্যত্ব ও মানবিকতাই যে সব কিছুর ঊর্ধ্বে তা প্রমাণ করলেন জহির তার হৃদয় উজাড় করে দিয়ে। আদালতকে তিনি জানান, আয়ুষ এবং প্রার্থনার বাবা পাইলট বন্ধু প্রবীণ দয়াল এবং এয়ারহোস্টেস মা মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মারা যান। ২০১২ সাল থেকে পরিবারের ড্রাইভার দেখভাল করে আসছিলেন দুই ভাইবোনকে। কিন্তু হঠাৎ একদিন বাচ্চাদের কাছ থেকে ফোন পান জহির এবং জানতে পারেন, ওরা খুবই কষ্টে আছে। আত্মীয়-স্বজনরা খারাপ ব্যবহার করছে ওদের সঙ্গে। কেউ তাদের পছন্দ করছে না। এমন কথা শুনে নিজের মনকে আর ধরে রাখতে পারেননি পাইলট শাহনওয়াজ। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন। তার মনে পড়ল মৃত্যুশয্যায় শায়িত বন্ধু প্রবীণের শেষ কথা, তিনি অনুরোধ করেছিলেন, বন্ধু জহির যেন তার মৃত্যুর পর সন্তানদের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেন। তাই জহির কালবিলম্ব না করে দিল্লি হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানান, বাচ্চাদের দায়িত্ব যেন তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রবীণ দয়ালের ভাইও জহিরের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেন। তিনি আদালতকে বললেন, জহিরের হাতে যদি বাচ্চাদের দেখবালের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তবে তার কোনও আপত্তি নেই। তিনি নিশ্চিত তার ভাইপো-ভাইঝির দেখাশোনার দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করবেন জহির। আদালতও জহিরের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এটাকে পুণ্যের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছে।
জহির বলেছেন, দুই ভাইবোনকে তিনি হিন্দু ধর্ম মতেই বড় করবেন এবং ওরা যাতে পড়া লেখা করে মানুষ হয়, প্রতিষ্ঠিত হয় তিনি তার ব্যবস্থা করবেন। শুধু তা-ই নয়, আয়ুষ ও প্রার্থনা যাতে ওদের সঙ্গে দেশ-বিদেশে যেতে পারে সেজন্য পাসপোর্টও বানাচ্ছেন তিনি। এমন মহানুভবতার পরিচয় দেখে আদালতও জানায়, দত্তক নেওয়ার ঘটনা আগে ঘটলেও অভিভাবক হওয়ার আর্জি কোনও ভিনধর্মীর কাছ থেকে এর আগে কখনও আসেনি আদালতের কাছে। তাই আদালতও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এমন আর্জিকে স্বীকৃতি দিয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে।
নানা ধর্ম, নানা জাতি, নানা বর্ণের দেশ ভারত। সে দেশে হিন্দু বা মুসলমান এটা বড় কথা নয়। আয়ুষ ও প্রার্থনা দুজনই মানুষ এবং তার বন্ধুর ছেলেমেয়ে। সে দেশে এমন সম্প্রীতি-ভ্রাতৃত্বের দৃশ্য আমরা দেখতে চাই নানা ভাষাভাষী, জাতি-ধর্মের লোকের মধ্যে এবং নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ভারতের আনাচে-কানাচে হিন্দু-মুসলিম এমন সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্বের ঘটনা সর্বদাই ঘটে চলেছে, যা হয়তো মিডিয়ার হেডলাইনে আসে না এবং কদাচিৎ এমন খবর প্রকাশ পায়। কিছুদিন আগেও আমরা দেখতে পেয়েছি হিন্দু বন্ধুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পূর্ণ হিন্দু রীতিতেই সম্পন্ন করলেন এক মুসলমান বন্ধু। জুম্মার নামাজ রাস্তায় আদায় করার দৃশ্য কিংবা ঈদের নামাজ মন্দিরের বারান্দায় আদায় করার দৃশ্যও বিরল নয়। অধিকাংশ মিডিয়ায় এসব খবর প্রকাশ পায় না। আমরা সাধারণত দেখতে পাই, কোথাও মন্দির-মসজিদের জায়গা নিয়ে ঝগড়া, কোথাও কোন মন্দির-মসজিদে নিষিদ্ধ কোনও বস্তু পাওয়া গেল তা নিয়ে কাজিয়া ফ্যাসাদের খবর। এমনও দেখা গেছে, ছোট কোনও ঘটনাকেও একাংশ মিডিয়া রং-মশলা লাগিয়ে এমনভাবে পরিবেশন করে থাকে, উত্তেজনার সৃষ্টি হয় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে। কিন্তু এর মূলে যে কাগজের বিক্রি এবং টিআরপি বাড়ার প্রতিযোগিতাই থাকে, সেটা সাধারণত আমজানতার বোধগম্য হয় না। ধরা যাক, কোথাও চুরি করতে গিয়ে কোনও দোকানে বা গৃহস্তের ঘরে ধরা পড়ল চোর। কিন্তু পরদিন সংবাদপত্রে এমনভাবে সংবাদ পরিবেশন করা হলো যে, দু’টি সম্প্রদায়ের বিশ্বাসেই চিড় ধরল যেমন-‘চুরি করতে গিয়ে অথবা সন্দেহজনক অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে আটক হলো ভিনধর্মী যুবক।’ কিংবা দু’টি ভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রেমের বিয়েতেও অধিকাংশ সংবাদপত্রই এমনভাবে সংবাদ পরিবেশন করে সর্বনাশ হয়ে গেছে। শিরোনামে দেয়া হয়া এরকম শিকার হলো অমুক পাড়ার সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে’ কিংবা ‘ভিনধর্মী যুবকের প্রেমের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিল মেয়ে’ অথবা ‘ভিনধর্মী যুবক কর্তৃক অপহৃত মেয়ে।’ কিন্তু বেশিরভাগ ঘটনার ক্ষেত্রেই পরে দেখা গেছে, আদালতে মেয়ে বয়ান দেয় যে, নিজের ইচ্ছায় আইন সম্মতভাবে সে পালিয়ে বিয়ে করেছে কিংবা উল্লেখিত চুরির ঘটনা সামান্য ছোটখাটো ঘটনাই, কিন্তু তা জানার আগেই অনেক জায়গায় এরকম সংবাদে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। লোকচক্ষুর অন্তরালে যে কত সুন্দর সুন্দর ভ্রাতৃত্ববোধ-মিলনের ঘটনা ঘটে চলেছে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে, তা সাধারণত প্রকাশ পায় না অধিকাংশ মিডিয়ায়ই। কিছুদিন আগে আমরা দেখলাম, কোথাও এক মন্দিরে নিষিদ্ধ কোনও বস্তুর সন্ধান পেয়ে কোনও উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার আগেই মন্দির কর্তৃপক্ষ স্থানীয় দু’টি সম্প্রদায়ের সহায়তায় দুই সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলেই মন্দির শোধন করে নিল। অনুরূপভাবে, কোথাও এক মসজিদেও নিষিদ্ধ কোনও বস্তু পেয়ে মসজিদের ইমাম সেটা ফেলে দিয়ে মসজিদ ধুয়ে পবিত্র করে ফেললেন কোনও রূপ উত্তেজনা ছাড়াই। এমনই তো হওয়া উচিত দুটি সম্প্রদায়ের মানুষেরই। এ সম্পর্কে অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করা, দুষ্টচক্রকে তাদের অপকর্মে সাফল্য অর্জন করতে না দেওয়াই শুভ লক্ষণ।
অনেকেই অভিযোগ করেন, একাংশ মিডিয়া রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত, তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সুরে সুর মিলিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে কিংবা কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের কোনও সম্প্রদায়কে তাক করে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বড় করে হেডলাইন করে এরা। এতে সেই দলের ফায়দা হয় এবং কথাটার সত্যতা কতটুকু সে গভীরে না গিয়ে ঝগড়ার সৃষ্টি করা যায় তার চেষ্টা করা হয়। এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের উপর বিশ্বাস এক বৃহদাংশ লোকেরই এবং সেই চতুর্থ স্তম্ভ যদি কোন নেতার সম্প্রদায়ভিত্তিক বিদ্বেষমূলক মন্তব্য প্রকাশ করে, তবে অবশ্যই তা দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা, অবিশ্বাস, দাঙ্গার সৃষ্টিই করে যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।
ইদানীং আমরা দেখতে পেয়েছি, কেন্দ্রের মোদি সরকারের একাংশ সাংসদ-মন্ত্রীর ক্রমাগত সংখ্যালঘু-বিদ্বেষী মন্তব্য। যা দেখে অবশ্যই সে দেশের হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে ঐক্যের বদলে অনৈক্যেরই সৃষ্টি হচ্ছে। ‘মসজিদ ধর্মীয় স্থান নয়, চাইলেই গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়’, ‘সূর্যকে নমস্কার না করলে সমুদ্রে ঝাঁপ দিক’, ‘গো-মাংস খেতে চাইলে পাকিস্তানে চলে যান’ কিংবা ‘গো-মাংস যারা খেতে চান তাদের সঙ্গে আখলাকের মতই আচরণ করা উচিত’, ‘কোরবানির ঈদে পশুর বদলে নিজ সন্তানকেই কোরবানি দিক’ ইত্যাদি নানা বিদ্বেষও উত্তেজনামূলক মন্তব্য। এখন কথা হলো, প্রত্যেক কার্যেরই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আছে। কোনও ধর্মনিরপেক্ষ দেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির এমন সম্প্রদায়ভিত্তিক বিদ্বেষমূলক মন্তব্যে অবশ্যই দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কিংবা প্রগতিশীল, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ প্রতিবাদ জানাবেই, আওয়াজ তুলবেই নিশ্চিত। আর তখনই দেশে উত্তেজনা, অশান্তি বা দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। খুন করা হয়। ঘর ছাড়া করা হয়, অথবা জেলে ঢুকিয়ে রাখা হয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বিনা বিচারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের। যে নেতা বা যে লিডার হন, তার পিছনে অনেক লোকের সমর্থন থাকে। তাই নেতার মন্তব্যকেই নিজেদের আদর্শ পথ বলে ধরে নেন তার অনুগামীরা এবং প্রভাবিত হয়ে তাকে অনুসরণ করেন সাধারণ অশিক্ষিত আমজানতা তো বটেই অনেক উচ্চশিক্ষিত লোকও। তাই নেতা-মন্ত্রীর উচিত অবশ্যই দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করে দেশ, দেশের মঙ্গলের চিন্তা করা এবং এ রকম সম্প্রদায় ভিত্তিক বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ত্যাগ করা। আর যদি তারা তা ত্যাগ করতে না পারেন, তবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর উচিত এমন বিভেদকামী মন্তব্যকারী মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া। আমরা সাধারণত দেখতে পেয়েছি, ওইসব নেতা-মন্ত্রীর উত্তেজনামূলক সংখ্যালঘু-বিদ্বেষী মন্তব্যে ক্রমাগতই এক সম্প্রদায়ের প্রতি অন্য সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ বাড়ছে। পাড়ায়, চায়ের দোকানে তো বটেই, সোসাল মিডিয়ায়ও তুমুল তর্ক-বিতর্ক, গালি-গালাজের সৃষ্টি হচ্ছে, দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে। কিন্তু যারা এসব বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বা উক্তি ক্রমাগত ছড়াচ্ছেন এরা কিন্তু আবার নিজ পরিবারেই অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলেমিশেই আছেন। কীভাবে? আজীবন কট্টর হিন্দুত্ববাদী বলে পরিচিত শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকুরে নিজ চিকিৎসার জন্য পারিবারিক মুসলিম চিকিৎসকের উপরই ভরসা করেছিলেন। বিজেপি নেতা সুব্রামণিয়ম স্বামীর কন্যা সুহাসিনী মুসলিম যুবককে বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে সুখেই ঘর সংসার করছেন এবং সুব্রহ্মণিয়ম স্বামীরও এদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক মধুর। বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতা অশোক সিংঘলের জামাতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নকভি, প্রবীণ বিজেপি নেতা মুরলি মনোহর যোশির জামাতা প্রাক্তন বিজেপি মন্ত্রী শাহনওয়েজ হোসেন, এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাতিজিও মুসলিম যুবককে বিয়ে করে সুখে ঘর-সংসার করছেন। এসব মুসলিম জামাতার সঙ্গে ওইসব নেতা-মন্ত্রী প্রত্যকেরই সুসম্পর্ক বজায় আছে। কিন্তু অদ্ভুত কথা হলো, রাজনীতির অঙ্গনে, ভোটপ্রাঙ্গণে এরা ক্রমাগত সংখ্যালঘু-বিদ্বেষী মন্তব্য করে উত্তেজনার সৃষ্টি করে জনতা জনার্দনকে বোকা বানান আর নিজেরা ভোটব্যাঙ্কের ফায়দা নেন। ইদানীং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একশ্রেণির কলমচির আবির্ভাব হয়েছে, যারা যথেষ্ট বয়োজ্যেষ্ঠ এবং যাদের পরিচিতি বুদ্ধিজীবী বলেও। কিন্তু দুঃখের বিষয় , এদের কলম থেকে ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক লেখাই শুধু বের হয়। এতে করে এরা যে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ-বিভেদ বাড়াতে সক্ষম হচ্ছেন, তা বলেই বাহুল্য। লেখকদের যে একটা সামাজিক দায়িত্ববোধ থাকে, তা ভুলে যান এরা। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা বর্তমানে দেশে ঘটে যাওয়া কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা বা অসহিষ্ণুতা বিতর্কে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রসঙ্গ বা আইসিস প্রসঙ্গ টেনে এনে দেশে সংখ্যালঘুদের চুপ করে থাকার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশে কোন স্থানে হিন্দু নির্যাতন ঘটে থাকলেও তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং অবশ্যই দুঃখের কথা, নিন্দনীয়। আমরা যতটুকু জানি, বাংলাদেশে হিন্দুরা খুবই সুখে শান্তিতে আছে, নিরাপদে আছে। সরকার ও মুসলমান জনগণ হিন্দুধর্মীবল্বীদের প্রতি অত্যন্ত যতœশীল। তারপরেও কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই প্রতিবাদ করা উচিত। কিন্তু অন্য দেশের প্রসঙ্গ বারবার টেনে এনে নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের শাসানো বা নির্যাতন করা কতটা যুক্তিসঙ্গত? ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। তাই সে দেশ হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধদের সবারই। সে দেশে জন্ম হওয়া, আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা প্রত্যেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরই দেশ এটি। তাই অন্য দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন করা হচ্ছে বলে ওখানেও তা করতে হবে, একথা কোনও সুস্থ মস্তিষ্ক, বিবেকবান মানুষের চিন্তাধারা হতে পারে না। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি সবাইকে নিয়েই ভারত গঠিত। সবারই অধিকার আছে সে দেশে ভালভাবে বেঁচে থাকার, সে দেশকে আপন ভাবার। কারন সে দেশের উন্নয়নে কোন সম্প্রদায়ের অবদান কম নয় কোন অংশেই।
ভারতের নানা জায়গায় এমনও দেখা যাচ্ছে, মাদ্রাসায় অমুসলিম শিক্ষক ভালোভাবে চাকরি করছেন, ভিনধর্মী শিক্ষকের কাছে ছাত্রছাত্রীরা টিউশনে যাচ্ছে, চিকিৎসক-সঙ্গীতজ্ঞের কাছেও ভিনধর্মী লোক-ছাত্ররা শরণাপন্ন হচ্ছে। হোস্টেল, ভাড়াঘরে পড়াশুনো, চাকরি-বাকরি করতে হিন্দু মুসলিম মিলে মিশেই থাকছেন। এমনকী সরস্বতী বিদ্যানিকেতনেও অনেক মুসলিম ছেলেমেয়ে পড়াশুনো করছে। তখন তো কোনও ধর্ম-জাতপাতের প্রশ্নও ওঠে না। কেন? কারণটা হলো, নিজের জীবিকার প্রশ্ন, সন্তান-সন্ততিদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন, নিজের সুবিধার প্রশ্ন, তাই তখন রাজনীতি খেলা করে না কারও মাথায়। আর আসল সত্য কথা হলো, সাধারণ জীবনযাত্রায় হিন্দু-মুসলিম সর্বদাই একে-অন্যের পরিপূরক। একে-অন্যের সহায়তা ছাড়া কেউই ভালোভাবে, সুন্দর করে বাঁচতে পারবে না, এটাই অমোঘ সত্য। কিন্তু এসব সৌহার্দ্য-ভ্রাতৃত্বকে প্রায়ই খান খান করার অপচেষ্টা করে থাকেন কিছু লোক, যাদের হয়তো গা জ্বালা করে দুটি সম্প্রদায়কে মিলেমিশে থাকা দেখলে, যারা হয়তো কখনও চান না দুটি সম্প্রদায় মিলেমিশে থাকুক, তাই এরা সম্প্রদায়ভিত্তিক মন্তব্য করে চান আগুন লাগাতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন
আরও পড়ুন