Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকার সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শেখ জামাল : ঢাকার আটটি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ঢাকা সদর, গুলশান, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, উত্তরা, বাড্ডা ও খিলগাঁও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। জমির নিবন্ধন, নামজারি, জাল দলিলে জমি দখলসহ নানা ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। জমির দলিল আটকে রেখে ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রার, উম্মেদার, পিওন ও নকলনবিশদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে। ঘুষ আদায়ের কৌশল হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের রুটিনমাফিক কাজ নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওন দিয়েও করানো হচ্ছে। এই সুযোগে নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওন কোটি কোটি টাকার মলিক হচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪ মানছেন না সাব-রেজিস্ট্রাররাও। তারা নিবন্ধন ম্যানুয়াল অনুযায়ী নিজেদের কাজ নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওনদের দিয়ে করাচ্ছেন। দলিল চেক করার কাজ সাব-রেজিস্ট্রারদের করার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না তারা। অনুসন্ধানে ও সরেজমিন এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪-এর অধ্যায়-২৬-এ উল্লেখ আছে যে, সহকারীগণ কর্তৃক দলিল পরীক্ষাকরণ কাক্সিক্ষত নয়, এই কাজটি অবশ্যই স্বয়ং নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত হবে।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য গণশুনানির আয়োজন করেছে। শুনানিও চলছে। এতে ভুক্তভোগীরা তুলে ধরেছেন তাদের নানা সমস্যার কথা। বলেছেন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র। তারা বলেন, ‘আমরা আমজনতা। আমরা কোনো কাজের জন্য ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে হয়রানির শিকার হই। মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কাজ হবে না বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন। আমরা তাদের কাছে জিম্মি।’ ভুক্তভোগী জনগণের দাবি, নামজারি, খারিজ, জমির শ্রেণী পরিবর্তনসহ নানা কাজে জনগণের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন ভূমি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রারসহ কর্মচারীরা।
সরেজমিন গিয়ে রোববার দেখা গেছে, গুলশান সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নকলনবিশ মনির হোসেন মঞ্জু মোল্লা রেজিস্ট্রি দলিল চেক করছেন। তিনি দলিল মালিককে জিজ্ঞাসা করছেন আপনার তথ্য-প্রমাণ ঠিক নেই। অথচ নিবন্ধন ম্যানুয়াল অনুযায়ী, দলিল চেক করার কাজ করার দায়িত্ব রয়েছে গুলশান সাব-রেজিস্ট্রারের। এছাড়াও ঢাকার তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স ভবনে অপর সাতটি সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিলও চেক করা হচ্ছে নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওনদের দিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী, নকলনবিশগণ অফিসের অন্যান্য কাজ করবেন। সাব-রেজিস্ট্রার দলিল চেক করার পর নকলনবিশগণ দলিল ভলিউমে লিপিবদ্ধ করবেন।
এ বিষয়ে গুলশানের সাব-রেজিস্ট্রার মো. কামাল হোসেন খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি মঙ্গলবার বিকালে ইনকিলাবকে বলেন, আমি নিজেও দলিল চেক করি। নকলনবিশ দিয়ে বাজারমূল্য চেক করাই। আমরা তিন-চার জন মিলে চার-পাঁচ বার দলিল চেক করি। যাতে কোন ভুল না থাকে। নকলনবিশ মনির হোসেন মঞ্জুর মোল্লাও দলিল চেক করেন বলেও তিনি জানান। ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স ভবনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনির হোসেন মঞ্জু মোল্লাসহ কয়েকজন নকলনবিশ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের সাথে যোগসাজশে দলিল রেজিস্ট্রি ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে ভয়-ভীতি দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। নকলনবীশগণ দলিল রেজিস্ট্রি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের মীমাংসার কথা বলেও অর্থ আদায় করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নকলনবিশদের মধ্যে মনির হোসেন মঞ্জু মোল্লা ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে এ কর্মকা- চালান অভিযোগ রয়েছে। আবার কখানও দুদক ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে তার ভাই, আত্মীয়-স্বজন আছে বলে দাবি করে প্রভাব বিস্তার করে চলছেন। এছাড়াও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স ভবনের প্রধান সহকারী সালাউদ্দিন, কম্পিউটার অপারেটর মতিউর রহমানও ক্ষমতার প্রভাব চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বর্তমান আইনমন্ত্রীর লোক বলে পরিচয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই বিষয়ে মঙ্গলবার বিকালে নকলনবিশ মনির হোসেন মঞ্জুর মোল্লার মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ দিন রাতে তিনি অপর একটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইনকিলাব প্রতিবেদককে জানান, তার মোবাইল ফোন পকেটে থাকায় রিসিভ করতে পারেননি। তিনি বলেন, আমার স্যারও (গুলশান সাব-রেজিস্ট্রার) আমাকে মোবাইল করেছিল, আমি কল রিসিভ করতে পারিনি। স্যারকে ফোন দিয়ে শুনলাম আপনি স্যারকে ফোন দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আপনারদের অনেক সাংবাদিকের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক। আমি তাদের সঙ্গে আড্ডা দেই। আমি আপনার অফিসে এসে কথা বলব।
এই বিষয়ে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার মো. আবদুল জলিলের মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। এর আগে রোববার এই বিষয়ে জানতে চাওয়ার জন্য তার অফিসে গেলে অনুমতি পাওয়া যায়নি। তার পিওন প্রতিবেদককে জানান, স্যার দেখা করতে পারবেন না।
তিন লাখ কর্মী নেয়ার আগ্রহ কাতারের
স্টাফ রিপোর্টার : মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কাতার আগামী দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে তিন লক্ষাধিক কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ লক্ষ্যে আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৫ সালে কাতার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার কর্মী নিয়েছে। কাতারের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করছে। গতকাল বুধবার কাতারের দোহায় প্রশাসনিক উন্নয়ন ও শ্রমসমাজ বিষয়ক মন্ত্রী ড. ইসা সাদ আল-ফাফালি আল-নুয়াইমি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সাথে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার কর্মী কাতারে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ায় কাতার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে উল্লেখ করে প্রবাসীমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, কাতারে ব্যাপক কর্মীর চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য কাতারের প্রশাসনিক উন্নয়ন ও শ্রমসমাজ বিষয়ক মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যথেষ্ট প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মী রয়েছে। তিনি কাতারের প্রশাসনিক উন্নয়ন ও শ্রমসমাজ বিষয়ক মন্ত্রীকে বাংলাদেশে সফরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান।
কাতারের শ্রমসমাজমন্ত্রী বাংলাদেশী কর্মীদের দক্ষতা ও কর্মনিষ্ঠার প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে আরও ব্যাপক কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বর্তমানে কাতারে বাংলাদেশী কর্মীরা নির্মাণ শ্রমিক ও পরিচ্ছন্ন কর্মীতে কাজ করছে উল্লেখ করে কাতারের মন্ত্রী বলেন, আমরা সেলসম্যান, নার্স, ডাক্তার, প্রকৌশলী ও অফিস কর্মচারী নিতে চাই। বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ৩ দিনের এক সরকারি সফরে কাতারে অবস্থান করছেন। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী কাতারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল-থানির সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। মন্ত্রী কাতার সফর শেষে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকার সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ