পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : দেশে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে বায়োডিজেল বা গ্রীণ ফুয়েল উৎপাদনের। কিন্তু সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হচ্ছে না, শুধু সরকারী উদ্যোগের অভাবে। বছরের পর বছর ধরে সংশ্লিষ্টরা এই করছি করবো দেখা যাক এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। যদিও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ২০১০ সালের দিকে এ ব্যাপারে সফলভাবে গবেষণা শেষ করেছে। অথচ দীর্ঘদিন যাবত গবেষণা মাঠে পৌঁছায়নি। ইনস্টিটিউট অফ ফুয়েল রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্টের সিনিয়র সায়েন্টেফিক অফিসার এসএম আসাদুজ্জামান সুজন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বায়োডিজেলের রিসার্চ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। রিসার্চ সফল কিন্তু কমার্শিয়ালি ডেভলপ করা যায়নি। এখন দরকার পাইলট প্লান। বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের কথা, সরকার গুরুত্ব সহকারে বিরাট এই সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনা করলে জ্বালানি খাতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। গড়ে উঠবে দেশে জ্বালানি তেল শিল্প। সূত্রমতে, বায়ো ডিজেল উৎপাদন ও ব্যবহার যত বাড়বে, ততই গ্লোাবাল ওয়ামিংএর বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। পৃথিবীর সব দেশেই জীবনযাত্রা দ্রুত গতিশীল হওয়ায় বেশী বেশী জ্বালানি তেল পুড়ছে। এতে বাড়ছে বাতাসে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ। এই বিপদের বিষয়টি মাথায় রেখেই ফিলিপাইন, আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ বায়োডিজেল ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশ এবং জীববৈচিত্রের জন্য অনুকূল হওয়ায় সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে বহু প্রজাতির প্রচুর গাছপালা ও গুল্ম লতা জন্মায়। জাট্রোফা কারকাস এর মধ্যে একটি। জাট্রোফা গাছ নেই বাংলাদেশে এমন গ্রাম খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। ওই গাছের পাতা বিষাক্ত হওয়ায় গরু ছাগলে খায় না। মাঠে-ঘাটে ও বনে-জঙ্গলে অযতœ এবং অবহেলায় বেড়ে উঠা কচা গাছ, ঢাকিভেন্না, ভেরেন্ডা ও জামালগোটাসহ অঞ্চলভিত্তিক এক এক নামে পরিচিত ‘জাট্রোফা কারকাস’। দেশের প্রায় সবখানেই আবাদী জমি কিংবা বাড়ীর আইলে বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয় জাট্রোফা কারকাস। বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের কথা, জাট্রোফা কারসাস সীড এক্সপেলার করে ট্রান্সএন্ট্রারিফিকেশন মাধ্যমে ট্রাইগ্লিসারওয়েট, তারপর মেথানলে পরিনত করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে বায়োডিজেল। যা গ্রীণ ফুয়েল নামে পরিচিত লাভ করেছে। চোখের সামনে অবহেলায় পড়ে থাকলেও গ্রামগঞ্জের অনেকেই জানেন না জাট্রোফা কারকাসের অর্থনৈতিক গুরুত্ব। আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। ঘটছে ষড়ঋতুর পরিবর্তন। এটি পরিবেশের কারণে। বায়োডিজেল পরিবেশ রক্ষায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারপরেও যতটা গুরুত্ব দেয়ার কথা ছিল, ততটা বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না। শুধু জাট্রোফা কারকাস থেকে নয়, মেহগিনি সীড ও রাবার সীড থেকেও বায়োডিজেল তৈরীর পরীক্ষা সফল হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ভারত ও মায়ানমারে জাট্রোফা কারকাস, মেহগিনি ও রাবার সীড দিয়ে বায়োডিজেল উৎপাদন হচ্ছে। সেখানে বায়োডিজেল উৎপাদনের জন্য জাট্রোফাসহ অন্যান্য ব্যবহৃত কাঁচামাল চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। সংশ্লিষ্টরা আরো জানায়, প্রতি হেক্টরে উৎপাদিত জাট্রোফা কারকাস সীড প্রক্রিয়াজাত করে ১ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন বায়োডিজেল পাওয়া যায়।
কৃষি ও বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রীন ফুয়েল উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারীভাবে এখনো জোরদার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে কয়েকটি বেসরকারী সংস্থা জাট্রোফা কারকাস সীড মাড়াই ও প্রক্রিয়াজাতকরণ মাধ্যমে বায়োডিজেল উৎপাদনের চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০১০ সালে দৈনিক ইনকিলাবে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর রিসার্চের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রিসার্চে সফলতাও আসে। কিন্তু তারপর সবকিছু থেমে গেছে। আর কোন পদক্ষেপ নেই। বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের কথা, সরকারীভাবে যত শীঘ্র সম্ভব জাট্রোফা কারকাস চাষ বৃদ্ধি এবং গ্রীণ ফুয়েল উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া দরকার। সূত্র আরো জানায়, জাট্রোফা চাষ করে বায়োডিজেল উৎপাদনের পাশাপাশি জাট্রোফা খৈল থেকে জৈব সারও তৈরী করা সম্ভব। যা বাংলাদেশের মাটি, কৃষি, কৃষক, ফসলাদি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে বাঁচাতেও বিরাট সহায়তা করবে। সূত্রমতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ, রেল, খাস, পাহাড়, টিলা, চরাঞ্চল, সাগরপাড়সহ সব পতিত জমিতে জাট্রোফা কারকাস চাষকে বাধ্যতামূলক করার সরকারী উদ্যোগ নেয়া জরুরী। জাট্রোফাকে কোন কোন এলাকায় জাত্রফা, ভেরন্ডা, কচা গাছ, জামালগোটা ও ঢাকি ভেন্না গাছ বলা হয়ে থাকে। এসব চাষের জন্য কোনরূপ খরচাখরচা নেই। খেজুর গাছের মতো পাখিতে খেয়ে ফেলা বীচি থেকেও গাছ জন্মায়। যা অযতœ অবহেলায় বেড়ে ওঠে। কোন পরিশ্রম ছাড়াই অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে জাট্রোফা কারকাসে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দেয়া তথ্যানুযায়ী দেশে প্রায় ২ লাখ হেক্টর পতিত জমিতে জাট্রোফা গাছ লাগানোর মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন বায়োডিজেল এবং ৮ লাখ মেট্রিক টন সুষম জৈবসার উৎপাদন করা সম্ভব। এতে জাত্রফা গাছ বছরে অন্তত ৪৮ লাখ মেট্রিক টন কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাস শোষণ করবে এবং উৎপাদিত বায়োডিজেল ১০ লাখ মেট্রিক টন কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গমন কমাবে যা আমাদের দেশের অসহনীয় উষ্ণতা রোধে সহায়তা করবে। দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। জাট্রোফা এর একটা অংশ পূরণ করতে সক্ষম।
সূত্রমতে, একটি জাট্রোফা গাছ বছরে ৮ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে। জাট্রোফা গাছের বীজ হতে উৎপাদিত বায়োডিজেল খনিজ ডিজেলের তুলনায় ৮০% কম কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত করে। শুধু তাই নয়, জাট্রোফা খৈল হতে উত্তম সুষম জৈব সার উৎপাদন সম্ভব। যাতে প্রায় ৫% নাইট্রোজেন, ২.৫% ফসফরাস এবং ২% পটাশসহ মাটি ও ফসলের অন্যান্য সকল পুষ্টি উপাদান আছে। ফলে, জাট্রোফা গাছ বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বা বায়োডিজেল উৎপাদন করতে পারবে খুব সহজেই। জাত্রফা চাষের জন্য যেহেতু কোন আবাদী বা ফসলী জমি ব্যবহার করা হবে না সেহেতু খাদ্য নিরাপত্তাও বিঘিœত হবার কোন আশংকা নেই। বরং জাট্রোফা চাষের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা মজবুত এবং বৃদ্ধি পাবে। সূত্র আরো জানায়, যেসব দেশ জাট্রোফা থেকে বায়োডিজেল উৎপাদনে সফল হয়েছে, সেসব দেশের জাট্রোফা আর বাংলাদেশে উৎপন্ন জাট্রোফার জাত একই। ফলে, ভারত ও মায়ানমারের মতো বাংলাদেশে যদি পরিকল্পিতভাবে চাষের আওতায় এনে বায়ো ডিজেল তৈরীর প্ল্যান্ট সরকারীভাবে হাতে নেয়া হয, তাহলে দেশ আর্থিকভাবে বিরাট লাভবান হবে। জাতীয় অর্থনীতি হবে সমৃদ্ধ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।