Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে

অর্থায়ন করছে চীন : উপকৃত হবে ৩০ জেলার ৪ কোটি মানুষ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

সমাপ্তের টার্গেট ২০২২ : চলতি অর্থবছরেই কাজ শুরু হবে : সেতু বিভাগ সচিব

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে চলতি অর্থ বছরেই। শেষ হওয়ার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২৫টি জেলা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫টি জেলার মানুষ খুব সহজে ও দ্রæততার সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। নিরসন হবে এই অঞ্চলের বিভিন্ন সড়কের যানজট। সব মিলিয়ে প্রায় চার কোটি মানুষ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে লাভবান হবেন। সাভার ইপিজেড-এ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গতি ফিরবে অর্থনীতিতে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সেতু বিভাগ বাস্তবায়ন করবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি। এ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, চলতি অর্থবছরেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য টাকাও ছাড় করা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছুই থমকে আছে। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই প্রকল্পসহ সব প্রকল্পেই গতি ফিরবে।

রাজধানী ও আশপাশ এলাকার যানজট কমাতে প্রায় দুই বছর আগে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হবে চীনের অর্থায়নে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দেবে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেওয়া হবে। সরাসরি দরপত্র প্রক্রিয়ার (ডিটিএম) মাধ্যমে চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। ২০২২ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে সেতু বিভাগ। তবে সম্প্রসারিত অংশ শেষ করতে আরও দুই বছর লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে প্রকল্পের আওতায় ঋণ চুক্তির বিষয়ে সর্বাত্ত¡ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যায়ে ওই অর্থবছরে ঋণ চুক্তি হয়নি। এখন ইআরডি ও চায়না এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে ঋণচুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। চায়না এক্সিম ব্যাংক বিষয়টি মূল্যায়ন করছে। এছাড়া প্রকল্পটির বিষয়ে নানা ধরনের তথ্য নিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগী চীন। ইআরডি ও চায়না এক্সিম ব্যাংক ইতিবাচক দিকে এগুচ্ছো। চলতি বছরের মধ্যেই ঋণচুক্তি অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছে ইআরডি। জানতে চাইলে ইআরডির একজন কর্মকর্তা বলেন, চায়না এক্সিম ব্যাংক বাংলাদেশে আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। সেগুলোর সাথে এই প্রকল্প যুক্ত হওয়ায় একটু সময় লাগছে। আশা করছি খুবশিগগিরি আলোচনা ফলপ্রসূ আকারে চুক্তি হয়ে যাবে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্মসচিব ও এশীয়া উইংয়ের প্রধান মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার যানজট নিরসনে বিরাট অবদান রাখবে প্রকল্পটি। গত অর্থবছরেই (২০১৯) এ প্রকল্পটির আওতায় ঋণ চুক্তির কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে ঋণচুক্তি হয়নি। তারা (চীন) নানা ধরনের তথ্য উপাত্ত নিচ্ছে। প্রকল্পটির বিষয়ে মূল্যায়ন করছে দেশটি। এর পরেই ঋণচুক্তি সই হবে। আমরা আশা করছি খুব দ্রæতই ঋণ চুক্তি সই হবে।

জানা গেছে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সংযুক্ত করবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে। বিমানবন্দরের উল্টোদিকের ঢাকা এলিভেটেডের স্টার্টিং পয়েন্ট (কাওলা) থেকে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কাওলার থেকে রেললাইনের ওপর দিয়ে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল-আশুলিয়া হয়ে সাভার ইপিজেডে গিয়ে শেষ হবে এ প্রকল্প। সাভার ইপিজেড থেকে যে কেউ আশুলিয়া এলিভেটেডে উঠে কাওলা এসে ঢাকা এলিভেটেড হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত হতে পারবেন। এছাড়া চলাচলকারীরা এর মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানের র‌্যাম্প ব্যবহার করে সাভার, আশুলিয়া, পূবাইল, আবদুল্লাপুর বা ঢাকা এলিভেটেডের (কাওলা-কুতুবখালী) নির্ধারিত র‌্যাম্প ব্যবহার করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ওঠানামা করতে পারবেন।

প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে উঠে এসেছে, এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ও সাভার ইপিজেড এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। একইসঙ্গে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় সাভার ইপিজেড সংলগ্ন শিল্পাঞ্চল, ঢাকা চিটাগাং হাইওয়ের সঙ্গে দ্রæতগতিতে চলাচল করা যাবে। উন্নত ও দ্রæতগতির যোগাযোগের কারণে সাভার শিল্পাঞ্চলে নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের উন্নতি হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সহ-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এখন চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণসমঝোতা হলেই প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা ও গাজীপুর জেলার ওপর দিয়ে নির্মিতব্য এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এ ঋণ সহায়তা দিয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করা হবে। আর জমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্প কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান ৫ হাজার ৯৫১ কোটি ৪১ লাখ টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার।

এই মেগা প্রকল্পকে ফলপ্রসূ করতে সাভারের নবীনগরে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এ দুটি ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২ কিলোমিটার। কাওলা থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে চারলেন বিশিষ্ট। আর আবদুল্লাপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়কও চার লেন করা হবে। আর ধউর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত বিলের মধ্যে সড়ক তুলে ফেলা হবে। সেখানে সড়কের পরিবর্তে ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ করা হবে। এর আগে সেখানে চারলেনের দুটো ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। তারপর সেখানকার সড়ক কেটে জলাশয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া হবে। ওই জলাশয়কে ঘিরে সরকারের বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। আর আশুলিয়া ব্রিজ থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার নর্দমা তৈরি করা হবে। ওই নর্দমা দিয়ে শিল্প অধ্যুষিত ওই এলাকায় পানি ও পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন হবে। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের কাজগুলো শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের নকশা রিভিউ এবং নির্মাণকাজ তদারকির জন্য ৩০৪ কোটি ১৪ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯০ টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি সই হলেই মূল কাজ শুরু হবে।

 

 



 

Show all comments
  • Mustafizur Rahman ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
    অসাধারণ একটা প্রকল্প। শুভ কামনা রইলো।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। আর দুর্নীতিতে যেন মাঝ পথে থমকে না যায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মনিটারিং হলে ভালো হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    আমি মনে করি ঢাকা-আশুলিয়া সড়কটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার চেহারা বদলে যাবে। ভোগান্তিও কমবে।
    Total Reply(0) Reply
  • চাদের আলো ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    ২০২২ সালের মধ্যে কি আদৌ কি সম্ভব হবে? তবে প্রকল্পটি দ্রুত শুরু করা হোক।
    Total Reply(1) Reply
    • Engr. Md. Sohel Rana ২৫ জুলাই, ২০২০, ২:০৮ এএম says : 0
      DAEEP project duration 5 years, so start 5 years around 2025 Project will be completed.
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    এতো দেখি স্বপ্নের এক রাস্তা। দ্রুত কাজ শুরু করা হোক। দুর্নীতি যেন না হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Fool's Bangladesh ২৪ জুলাই, ২০২০, ৫:৪৩ এএম says : 0
    Who think to develop Bangladesh, they don't know Europe and America.
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shafik ২৪ জুলাই, ২০২০, ৬:৫১ পিএম says : 0
    আসাকরি কোনো দুরনিতি বাজ রা এখানে সামিল থাকবে না
    Total Reply(0) Reply
  • তানজিম খান ২৫ জুলাই, ২০২০, ১১:৫৬ এএম says : 0
    অসাধারণ উদ্যোগ এরকম উদ্যোগ আরো বেশি করে চাই তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্রকল্পের সময় অকারণে বৃদ্ধি না পায়।
    Total Reply(0) Reply
  • আরিফ আহ্মেদ ২৭ জুলাই, ২০২০, ৪:২৬ পিএম says : 0
    দ্রুত বাস্তবায়ন চাই এবং প্রধানমন্ত্রী সজাগ দৃষ্টি কামনা করছি যাতে দুর্নীতিবাজরা কোনমতেই এখানে যুক্ত হতে না পারে ধন্যবাদ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এলিভেডেট এক্সপ্রেস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ