Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর চরিত্র হনন করতে চেয়েছে জিয়া-প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৩ পিএম, ১ আগস্ট, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : জিয়াউর রহমান কেবল হত্যার ষড়যন্ত্রই করেনি, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরে মৃত মানুষের চরিত্র হননেরও চেষ্টা করেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে শোকের মাস আগস্টের শুরুতে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে কৃষক লীগের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে যে বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি, রাস্তায় বসে মিলাদ পড়তে হয়েছেÑ সেই বাড়ি আমাকে হস্তান্তর করার জন্য তারা ব্যস্ত হয়ে যায়। আইনজীবীর মাধ্যমে বাড়ি বুঝে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। তখন বুঝতে পারিনি তাদের তাড়া কেন! বাড়ি হস্তান্তর করার পরে ৪০ দিন ধরে টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে ওই বাড়িতে হীরা, মুক্তা, টাকা পাওয়া গেছে। আর জিয়া একটি ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া জামা রেখে গেছে। ১শ’ টাকার নোট বঙ্গবন্ধু বন্ধ করেছিলেন। সেই নোট ট্যাংক ভরে এনে দেখিয়েছিল এসব পাওয়া গেছে ওই বাড়িতে। কিন্তু বাংলার মানুষ এসব বিশ্বাস করেনি। কারণ দেশকে কে কতটুকু দিয়েছে তা মানুষ জানে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কৃত্রিমভাবে চরিত্র তৈরি করে সত্য চাপা দেয়া যায় না। আমাদের বিজয়ের ইতিহাস কয়েক প্রজন্ম জানতেই পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ৭ মার্চের ভাষণ তারা শুনতে পেয়েছে। সঠিক ইতিহাস জানতে পেরেছে। এখন মানুষ অনেক সতর্ক। তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। চাইলেই আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই। বাংলার মানুষের মন থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র আর সফল হবে না বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদেও প্রেতাত্মারা ‘এখনো ষড়যন্ত্র’ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী-পরাজিত শক্তি, তাদের বিচার হচ্ছে, রায় আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ অভিশাপমুক্ত হচ্ছে। তারপরও এদেও প্রেতাত্মারা, এদের সন্তান-সন্ততি অনেকেই রয়ে গেছে। তারা এখনো বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধ’ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে এদেশের মানুষ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্রকারীদের উৎসাহ যোগানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, একটা প্রতিজ্ঞা নিয়েই ফিরে এসেছিলাম যে, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে আমার বাবা, মা, ভাইয়েরা জীবন দিয়েছে, সেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি আমি ফোটাবই। আজকে বাংলাদেশে সেই হাহাকার নেই। মঙ্গা নেই, দুর্ভিক্ষ নেই।
নানা ধরনের বাধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলার পথ বন্ধুর হবেই। মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে সে পথ সব সময় কণ্টকাকীর্ণ হয়। কিন্তু সে পথ অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমরা এগিয়ে যাব।
৭৫-পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কথাও তুলে ধরেন তিনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস; বিজয়ের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। এই ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। তবে এখন আর বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। এখন মানুষ অনেক সতর্ক।
কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য মানুষকে উন্নত জীবন দেয়া। আমি শুনেছি, বাবা কীভাবে দেশের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন। আমি চেষ্টা করছি সেভাবে কাজ করতে।
তিনি বলেন, এখন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে জঙ্গিবাদ। এটাও তাদের সৃষ্টি। গোঁড়ায় গেলে দেখা যাবে, একাত্তরের সেই পরাজিত শক্তির উত্তরাধিকারীরাই এতে জড়িত। এরাও পরাজিত হবে। বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গির স্থান হবে না। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেটাই হবে আজকের দিনে প্রতিজ্ঞা। এজন্য জনগণের আরও সচেতন হওয়া উচিত, তাদের আরও সহযোগিতা দরকার,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে ফিরলে ধানমন্ডির বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বাড়িতে আমার বাবা-মা মারা গেছেন। আমি মিলাদ পড়ব, জিয়াউর রহমান সেখানে যেতে দেয়নি। রাস্তার ওপর বসেই শত বাধা অতিক্রম করে মিলাদ পড়তে হয়েছে।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছে। এভাবেই হত্যার ষড়যন্ত্র ও খুনিদের মদদ দিয়েছে তারা। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, তাদের নতুন করে দল গঠন করে রাজনীতির সুযোগ দিয়েছিল এরশাদ। হাইকোর্টের রায়ে জিয়া, এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ। সেই সময় পরাজিত শ্রেণীর দোসররা বারবার আঘাত হেনেছে। এখনও তাদের উত্তরাধিকারীরাই বারবার আঘাত করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দুই বোন সবহারা হয়ে যাব কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় দেশে ফিরি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আমার বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, তারাই এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে।



 

Show all comments
  • nazrul ২ আগস্ট, ২০১৬, ৯:৪৩ এএম says : 0
    100 percent true
    Total Reply(0) Reply
  • হাবিব ২ আগস্ট, ২০১৬, ৩:২৭ পিএম says : 0
    যারা এখন ষড়যন্ত্র করছে তাদেরও একদিন বিচার হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর চরিত্র হনন করতে চেয়েছে জিয়া-প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ