পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : অনুমোদন ছাড়াই ঢাকায় নির্মিত হচ্ছে শত শত বহুতলবিশিষ্ট ভবন। নিয়ম না মানায় ভবনগুলো একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে এগুলো নিয়ে বিরোধ লেগেই আছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া ১৩টি ইউনিয়নে অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মাণের প্রবণতা বেশি। ড্যাপের আওতাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও ইউনিয়নগুলোতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ড্যাপের নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। বরং পুরনো নিয়মে ‘ব্যাক ডেটে’ ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন নিয়ে বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব ভবন নিয়ে রাজউক ভবনে অভিযোগের অন্ত নেই। রাজউক কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে রাজউক এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে না পারলেও ‘নিয়ম না মেনে করা’ সব ভবনকেই একদিন নিয়মের আওতায় আনা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও বেশিরভাগ ভবন মালিকই তা মানছে না। রাজধানীসহ সারাদেশে এভাবে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে একের পর এক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন গড়ে উঠছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানিও। গত বছরের ১৫ এপ্রিল রাজধানীর রামপুরা থানা এলাকায় ঝিলের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ তিনতলা টিনশেড ঘর দেবে গিয়ে ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই ভবনের মালিক ছিলেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা। দুর্ঘটনার পর জানা গেছে, তিনতলা ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড অনুসরণ তো দূরে থাক, রাজউকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার কোনো অনুমোদন ছিল না।
জানা গেছে, সারা দেশে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত ইমারত (ভবন) নির্মাণে আইন থাকলেও তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। ১৯৫২ সালে প্রণীত আইনের আওতায় তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা। অথচ ৫ যুগ পরেও আইনটি বাস্তবায়নের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বা সমন্বিত কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। এতে করে সারা দেশেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই প্রবণতা কমিয়ে আনার জন্য ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত আইন, কোড ও বিধি-বিধানসমূহ সঠিকভাবে বাস্তবায়নে ভবন নির্মাণকালে নজরদারি করার পরিকল্পনা করছে রাজউক। রাজউকের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিএনবিসি মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে।
সূত্রমতে, ঢাকা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) আওতাধীন এলাকায় প্রতি বছর গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার ভবন নির্মাণের নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর বাইরেও প্রতি বছর শত শত বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কোনো প্রকার নকশা অনুমোদন ছাড়াই। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় এই প্রবণতা অনেক বেশি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব ইউনিয়নভুক্ত এলাকায় পুরনো নিয়মে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নকশা অনুমোদন করিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। যদিও ২০১১ সালের পর থেকে কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবনের নকশা অনুমোদন করতে পারবেন না বলে রাজউকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। সে সময় রাজউকের পক্ষ থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সকলকে সাবধান করে দেয়া হয়েছিল যাতে কেউ আর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন না করায়। কিন্তু তাতে মোটেও থামেনি এই অনিয়ম। এক্ষেত্রে দেখা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ‘ব্যাক ডেটে’ ভবনের নকশা অনুমোদন করেছেন। সম্প্রতি ইউনিয়নগুলো সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত হওয়ায় এই অনিয়মের প্রবণতা কয়েক গুণ বেড়েছে। যারা আগামীতে ভবন নির্মাণ করবেন তারাও ভবিষ্যৎ ঝামেলা এড়াতে টাকার বিনিময়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ‘ব্যাক ডেটে’ ভবনের নকশার অনুমোদন করিয়ে নিচ্ছেন। ‘বিদায়ী চেয়ারম্যানদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার এখন মোক্ষম সময় চলছে’ জানিয়ে ডেমরা ইউনিয়নের এক মেম্বার বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবরা এখন খুঁজে খুঁজে বের করছেন কে কোথায় ভবনের কাজে হাত দিয়েছে। এজন্য একাধিক টিমকে মাঠে নামানো হয়েছে। তারাই খুঁজে খুঁজে ভবন মালিকদের বের করে আনছে। এরপর ব্যাক ডেটে (পেছনের তারিখ দিয়ে) ভবনের নকশার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। বিনিময়ে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়ের নজির রয়েছে। ডেমরার মতো শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়াসহ অন্যান্য ইউনিয়নেও একইভাবে ভবনের নকশার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এসব ইউনিয়নভুক্ত এলাকায় একই সাথে কয়েক হাজার বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মিত হচ্ছে।
রাজউক সূত্র জানায়, অনুমোদনবিহীন এসব ভবন একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে তেমনি বিরোধপূর্ণ। নিয়ম না মানার কারণে ভবনের মালিকরা তাদের খেয়াল-খুশিমতো জায়গা না ছেড়েই ভবন নির্মাণ করছেন। কেউবা রাস্তার জায়গা বা অপরের জায়গার উপর ভবন নির্মাণ করছেন। এসব কারণে বিরোধ লেগেই আছে। বিরোধপূর্ণ এ ধরনের ভবন নিয়ে রাজউকে প্রতিদিনই লিখিত অভিযোগ জমা পড়ছে। রাজউক এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থাও নিচ্ছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজউকের নোটিশের পরেও ভবন নির্মাণের কাজ থেমে নেই, বরং দ্রুত গতিতে চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। কদমতলী থানার নূরপুর এলাকায় আপন হোমস লিমিটেড নামে এক হাউজিং কোম্পানির বিরুদ্ধে নকশা ছাড়াই বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ জমা পড়েছে রাজউকে। রাজউক ওই কোম্পানিকে চূড়ান্ত নোটিশ প্রদানের পরেও পুলিশ পাহারায় ওই বহুতল ভবনে ছাদ ঢালাই দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল রাজউকের নকশা অনুমোদন শাখার অথরাইজড অফিসার-৮ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে (স্মারক নং রাজউক/নঅঅ-৮/২৫.৩৯.০০০০.১৩৮.৩২.০০৪.১৬) ৮২৫/বি নূরপুর, দক্ষিণ দনিয়ার আপন হোমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়। তাতে ৭ দিনের মধ্যে অবৈধ অবকাঠামো ভেঙে অপসারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে রাজউক ওই কোম্পানিকে সাত দিনের মধ্যে অনুমোদিত নকশা দাখিলের নির্দেশ দেয়। সেটি অমান্য করার পর গত ২১ মার্চ রাজউক কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়। রাজউকের এসব নোটিশের জবাব তো দূরে থাক থোরাই কেয়ার করেছে আপন হোমস লিমিটেড। উপরন্তু তারা একের পর এক ভবনের ছাদ ঢালাই দিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে রাজউকের একজন অথরাইজড অফিসার বলেন, একবার যখন ভবন ভাঙার নোটিশ দেয়া হয়েছে তখন কোনোভাবেই ওই ভবনকে কেউ আর রক্ষা করতে পারবে না। আমাদের জনবল কম। সে কারণে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কয়েকটি চূড়ান্ত নোটিশ পাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে একসাথে অভিযান চালানো হবে।
জানা গেছে, শুধু নকশা অনুমোদন করলেই চলবে না, ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বলা আছেÑইমারত নির্মাণকাজ শুরু ১৫ দিন পর পর নির্মাণকাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন রাজউকে জমা দিতে হবে। এসব নিয়ম ব্যত্যয় করার দায়ে রাজউক নকশার অনুমোদন বাতিল ও শাস্তি দিতে পারে। রাজউক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভবন নির্মাণকালে রাজউকের অথরাইজড অফিসার ও ইমারত পরিদর্শকরা ভবন নির্মাণকাজ তদারকি করেন। তদারকিকালে তারা শুধু আর্কিটেকচারাল (স্থাপত্য) দিকটি দেখভাল করেন, স্ট্রাকচারাল (কারিগরি) দিকটি নয়। কারিগরি দিকটি তদারকি না করায় নির্মাণাধীন ভবনগুলোর বিএনবিসি (গুণগত মান) ঠিক রেখে নির্মাণ করা হয় কি না, তা রাজউকের আমলে থাকে না। ভবন নির্মাণকালে প্রয়োজনীয় রড-সিমেন্টসহ অন্যান্য উপকরণ ঠিকমতো দেওয়া হয় কি না, তা তদারকি করার দায়িত্ব যারা ভবনের নকশার ডিজাইন করেন সেই স্থপতি ও প্রকৌশলীর ওপর। কিন্তু ভবন নির্মাতারা নকশার অনুমোদন পাওয়ার পরই সংশ্লিষ্ট স্থপতি ও প্রকৌশলীকে বাদ দিয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী অথবা অভিজ্ঞ মিস্ত্রির মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করেন। এতে ভবনের গুণগত মান ও অনুমোদিত নকশাও ঠিক থাকে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।