Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রোগীশূন্য সাহাবউদ্দিন হাসপাতাল

নিজের করোনা নিয়েও প্রতারণা করলেন এমডি ফয়সাল এমডিসহ তিনজন ৫ দিনের রিমান্ডে

খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

রাজধানীর সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন গ্রেফতার আতঙ্কে। এ কারণে তাদের উপস্থিতিও অনেক কম। প্রতারণার অভিযোগ ওঠা হাসপাতালটি এখন নিরব-নিস্তব্ধ । গতকাল গুলশান-২ এর ১১৩/এ রোডে অবস্থিত হাসপাতালটিতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

এদিকে, গত সোমবার মধ্যরাতে রাজধানীর বনানীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফয়সাল আল ইসলামকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন বলে র‌্যাবের কাছে দাবি করেন তিনি। তবে এ তথ্য মিথ্যা হওয়াতে গতকাল আদালতের মাধ্যমে ফয়সালসহ তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেন, ফয়সালকে গ্রেফতারের পর তিনি বারবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে দাবি করেন। পরে সোমবার রাতেই তার নমুনা সংগ্রহ করে, তা পরীক্ষা করা হয়। গতকাল সেই পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে। রিপোর্ট পাওয়ার পরই তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

র‌্যাব জানায়, গত রোববার সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল হাসনাত ও স্টোরকিপার শাহরিজ কবিরকে আটক করা হয়। পরদিন সোমবার দিনভর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই দিন মধ্যরাতে হাসপাতালের এমডি ফয়সাল আল ইসলামকে বনানী থেকে আটক করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন র‌্যাবের নায়েব সুবেদার ফজলুল বারী। ওই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ের আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ দন্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
ওইসব অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমামের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার এসআই মশিউর রহমান। শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, গত রোববার হাসপাতালে অভিযান চালানোর পর থেকেই রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে হাসপাতালটি। এছাড়াও হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার-নার্সরাও তাদের ডিউটিতে আসছেন না। একই সাথে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও দায়িত্ব পালন করছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সাহাবউদ্দিন হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই রোগী ভর্তির প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ওই প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অনেক ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারি রোগীদের সাথে প্রতারণা করেছেন। আবার অনেক সময় বেশি মুনাফা লাভের জন্য ডাক্তার ও সংশ্লিষ্টরা রোগীদের সাথে প্রতারণা করতেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কারণেই রোগীদের সাথে এমন আচরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, প্রতারণার কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যয়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীদের দিয়ে ভিডিও বানানো হতো। ওইসব ভিডিও ইউটবে আপলোড করা হতো। আর ভিডিও দেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা হাসপাতালে আসত। তবে হাসপাতালে আসার পর কৌশলে তাদের ভর্তি করিয়ে বাড়তি বাণিজ্য করা হতো। এভাবেই নিয়মিত রোগীরা প্রতারণার শিকার হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা কর্মী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন থেকে সাহাবউদ্দিন হাসপাতালের পাশের একটি ভবনের নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্ব পালন করছেন। এই সুবাধে তিনি হাসপাতালের অনেক কর্মকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, রোগীদের কৌশলে ভর্তি করে টাকা আদায়ের জন্য নিয়মিত হাসপাতালের সামনে চিল্লাচিল্লি শুনা যেত। তবে গত রোববারের র‌্যাবের অভিযানের পর থেকে রোগী আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে হাসপাতালে এখন নিরবতা বিরাজ করছে বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ