পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতারক সাহেদ রিমান্ডে গিয়েও নানা নাটক সাজাচ্ছেন। অসুস্থতার ভান করে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সাথে প্রতারণা করছেন। মূলত তদন্ত কর্মকর্তাদের দূরে রাখতেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা বলছেন। এমনকি নাকের ভেতর টিস্যু পেপার ঢুকিয়ে বারবার হাঁচি দেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং মাঝে মধ্যে কাশিও দিয়েছেন।
তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার নাটক বুঝতে পেরে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তার শেল্টারদাতাদের নাম ফাঁস করছেন। তাছাড়া গ্রেফতারের পরও তাদের নাম বলেছেন সাহেদ। সাহেদ ধরা পড়ার পর আতঙ্কে আছেন শেল্টারদাতারাও। সাহেদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ডিএমপির (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, সাহেদ খুব চালাক। সে অসুস্থতার ভান করছে বলে মনে হয়েছে। তারপরও তার ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। তাকেসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সে কৌশলে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। তবে সে বেশিরভাগ প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, ভিন্ন কৌশলে সে প্রতারণা করতো। সরকারি দফতরগুলোতে সাহেদ নিজেকে কখনও অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত এমন নানা পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন। কৌশলে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। অপকর্ম করতেই ওইসব ছবি কাজে লাগাতেন। গ্রেফতারের পর এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বীকার করেছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতারের পর থেকেই সে নানা নাটক করেছে। সে বারবার বলেছে, আমি অসুস্থ, হার্টের সমস্যা আছে। আমি কিন্তু মরে যেতে পারি। আমাকে মারধর কইরেন না। সর্বশেষ সে আদালতে পর্যন্ত মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। যদি দেড় মাস ধরে সে করোনায় আক্রান্ত থাকতো তাহলে তার তো বেঁচে থাকার কথা ছিল না। সবই তার নাটক। তদন্তকারী কর্মকর্তারা যাতে তার সামনে যেতে না পারেন সেই জন্য সে এই নাটক করছে বলে মনে হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত বৃহস্পতিবার ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে সাহেদ, মাসুদ পারভেজ ও তারেক শিবলীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। রাতভর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আলাদাভাবে সাহেদকে নানা প্রতারণার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। করোনার পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা করার কথা স্বীকার করেছে। এতে বেশি দোষ চাপাচ্ছেন রিজেন্ট হাসপাতালের এমডি মাসুদ ও আইটি প্রধান তারেক শিবলীর ওপর। তাদের পরামর্শে এসব অপকর্ম করা হয়েছে। আবার মাসুদ ও শিবলী তারেককে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তারা জানায়, চেয়ারম্যানের নির্দেশেই তারা এসব করেছেন। চেয়ারম্যান অনেক লোভী। প্রতিটি সেক্টরেই তিনি প্রতারণা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে র্যাব ও পুলিশের দুই কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা বলে প্রতারক সাহেদ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সাহেদ টাকা পরিশোধ করেননি। ঋণগুলোও নিয়েছেন প্রতারণা করে। ভুয়া ঠিকানা ও প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ওইসব ঋণ নিয়েছেন সাহেদ। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা পাবে এনআরবি ব্যাংক। এই ব্যাংকটি পাবে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। কিছু ব্যাংক তার নামে মামলা করেছে। ওইসব মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হলে কৌশলে জামিন নিয়ে নিতেন। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা বা নামিদামি ব্যক্তিদের কথা বলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের শাসাতেন।
রিজেন্টের সাবেক কর্মকর্তা সোহাগ আরেফিন গতকাল বলেন, এমন কোন অপকর্র্ম নেই যে সাহেদ করেননি। তার হার্টে কখনো সমস্যা নেই। তার করোনা হয়নি। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাথেও প্রতারণা করছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। কেউ ঋণ না দিলে ওপরের মহল থেকে ফোন করে ঋণ আদায় করে নিতেন।
ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে আনার পর সাহেদের নাটকের শেষ নেই। নাকের ভেতর টিস্যু পেপার ঢুকিয়ে বারবার হাঁচি দেয়ার চেষ্টা করে। আবার প্রায়ই জোর করে কাশি মারে। রুমের মধ্যে থুথু নিক্ষেপ করে। জিজ্ঞাসা করতে গেলেই বলতে থাকে আমি কিন্তু করোনা রোগী। আমার কাছে আসলে আপনাদেরও করোনা হতে পারে। আসলে এসব হচ্ছে তার নাটক। সে সম্পূর্ণ সুস্থ। আমরা যাতে তার কাছে না যাই সেজন্য এসব নাটক করছে। তিনি আরও বলেন, রাতভর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাকে যারা শেল্টার দিয়েছে তাদের নাম বলছে। যাদের কথা বলছে সবাই সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি। তার তথ্যেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।
র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, সাতক্ষীরায় গ্রেফতারের পর ঢাকায় আনার পর সাহেদকে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কাদের শেল্টারে থেকে এসব অপকর্ম করেছে তাদের নাম বলেছে। আমরা নামগুলো যাচাই করছি। প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, হাসপাতালে অভিযানের পর থেকে সাহেদ আর নিজের বাড়িতে থাকেননি। প্রথম দিন তিনি ঢাকায় একটা হোটেলে ছিলেন। পরদিন তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার (পিএস) নরসিংদীর বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকে কুমিল্লা হয়ে কক্সবাজার যান সাহেদ। কুমিল্লা ছাড়ার আগে নানা জনকে ফোন করে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। কক্সবাজার থেকে ঢাকায় এসে একটি গাড়ি ভাড়া করে চলে যান সাতক্ষীরায়।
এদিকে, সাহেদের বিষয়ে যেকোন তথ্য জানাতে এবং যারা সাহেদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাদের সাহায্য করতে ‘সেবা লাইন’ নম্বর চালু করেছে র্যাব। গতকাল থেকে সাহেদের যে কোন কু-কর্মের তথ্য ফোনে, ক্ষুদে বার্তা অথবা ইমেইলের মাধ্যমে জানানো যাবে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, যারা সাহেদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাদের সহায়তা করার জন্য র্যাব একটি সেবা লাইন চালু করেছে। এর মাধ্যমে নানা সময় বিভিন্নভাবে যারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাদের আইনগত বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এছাড়া সাহেদের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মন থেকে ভয় দূর করতে র্যাব কাজ করছেও বলে তিনি জানান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, প্রতারক সাহেদ শুধু করোনা টেস্ট নিয়েই প্রতারণা করেননি তিনি বালু, পাথর, সিমেন্ট সাপ্লাইয়ের নামে অনেকের সঙ্গে প্রতরণা করেছেন। লাখ লাখ টাকা আটকে মানুষকে হয়রানি করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে ৫৭টির বেশি মামলা রয়েছে। এছাড়া টঙ্গী, তুরাগ ও উত্তরাতে রিকশা-ভ্যানের লাইসেন্স দিয়ে মাসিক ও এককালীন টাকা আদায় করতেন তিনি।
র্যাব জানিয়েছে, সাহেদের বিভিন্ন অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ প্রতিনিয়ত আসছে। তার মাধ্যমে আরও যারা প্রতারিত হয়েছেন, তারা যাতে আমাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারে সেজন্য একটি সেবা লাইন নম্বর খোলা হয়েছে। এছাড়া ই-মেইলের মাধ্যমেও র্যাবকে তথ্য দেয়া যাবে। র্যাবের ইনভেস্টিগেশন উইং, র্যাব সদর দফতর। মোবাইল- ০১৭৭৭৭২০২১১। এছাড়া ইমেইল- ৎধনযয়.রহাবংঃ@মসধরষ.পড়স।
গ্রেফতার হওয়া সাহেদ একাধিক পরিচয়পত্র ব্যবহার করছেন, এমন আলোচনা ওঠায় নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সাহেদ ২০১৯ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করেন। তাকে এনআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করার বছরখানেক আগে সাহেদ একটি নতুন পরিচয়পত্র করতে এসেছিলেন। সে সময় তার আঙুলের ছাপ নেয়ার পর দেখা যায়, তার নামে একটি পরিচয়পত্র আছে। তাই আরেকটি পরিচয়পত্র করার সুযোগ পাননি। তবে নাম সংশোধনের জন্য প্রমাণ হিসেবে কেমব্রিজের ও লেভেলের একটি সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ব সনদ ও পাসপোর্টের কপি দাখিল করেছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে তার দেয়া জন্ম নিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদ যথাযথ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, আশুলিয়ায় চেয়ারম্যানের সিল ও স্বাক্ষর করা ৪৮টি চেক বইয়ের পাতাসহ রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজের ভায়রা গিয়াস উদ্দীন জালালীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। এসময় তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকারসহ চালক মাহমুদুল হাসানকেও আটক করা হয়। গতকাল তাদের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গিয়াস ও তার গাড়ির চালক মাহমুদুল হাসানকে আটক করে র্যাব-১। পরে রাতে র্যাব-১ এর কর্মকর্তা সুবেদার কিরণ চন্দ্র সরকার বাদী আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে ওই দু’জনকে পুলিশে হস্তান্তর করেন। গিয়াস উদ্দিন জালালীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার রুপসাদী গ্রামে। আর মাহমুদুল হাসান শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার ছোট কৃষ্টনগরের ফয়জুল মাতবরের ছেলে। এছাড়া তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকারে তল্লাশি করে ১০ বোতল ফেন্সিডিল ও ২১২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ বলেন, দুপুরে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আসামি গিয়াস ও তার গাড়ির চালককে আদালতে পাঠানো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।