পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তদন্ত ডিপফ্রিজে : এখন শিরোনাম সাহেদ, ডা. সাবরিনা, পাপুলরা : দুদক ৮ মাসেও সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি
দেশ-বিদেশের তোলপাড় করা খবর এখন রিজেন্টের সাহেদ করিম, জিকেজির ডা. সাবরিনা। প্রতিদিন মিডিয়ার শিরোনাম হচ্ছেন তারা। রিমান্ডে বেরিয়ে আসা তাদের নানা অপকর্ম নিয়ে চলছে আলোড়ন। তাদের অপকান্ডের ভয়াবহ চিত্র প্রতিদিন খবরের হেড লাইন হচ্ছে। এর আগেও এমন চিত্র দেখা গেছে ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট, নরসিংদীর যুবলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া, জিকে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভুইয়াকে গ্রেফতারের পর। প্রতিদিন তাদের অপকান্ড ও অবৈধ অর্থসম্পদের ভয়াবহ চিত্র নিয়ে মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত এখন হিমঘরে। ৮ থেকে ১০ মাসেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে শুধুই কী ঢাকঢোল পিটিয়ে গ্রেফতার করে ‘প্রচারণায়’ বাহবা নেয়া! ওদের বিচার শুরু হবে কবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থেকে দুর্নীতি করা ভয়ঙ্কর অপরাধীদের তদন্তে ধীরগতির এবং বিচার না হওয়ায় অপরাধ ঘটনা বেড়ে যায়। যার কারণে গ্রেফতারের পরও রিজেন্ট হসপিটালের মালিক প্রতারক সাহেদ করিমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হুমকি দিয়ে বলতে পারে, ‘আমাকে ৬ মাসের বেশি আটক রাখতে পারবেন না। আপনাদের সঙ্গে আমার আবার দেখা হবে’।
সম্রাট, পাপিয়া, খালেদ, জিকে শামীম গ্রেফতারের পর সংবাদ মাধ্যমের প্রায় পুরোটাজুড়েই ছিল তাদের খবর। কখন কি অপরাধে তাদের গ্রেফতার করা হলো। কিভাবে গ্রেফতার হলো। কী কী অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িত, কেমন করে তারা রাতারাতি হয়ে উঠলেন ‘প্রভাবশালী’, ‘বিখ্যাত’ এবং ‘ধনকুবের’-ইত্যাদি রোমাঞ্চকর কাহিনীর ফলাও করে প্রচার হতো। থাকত তাদের নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য আর চুলচেরা বিশ্লেষণ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের নিয়ে প্রতিদিন জানাত আপডেট। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই নতুন ইস্যুতে চাপা পড়ে যাচ্ছে তাদের সেই লোমহর্ষক কাহিনী। যুক্ত হচ্ছে নতুন মুখ। আসছে নতুন কাহিনী। সময়ের ধুলোর প্রলেপ পড়ছে পুরনোদের কান্ড-কীর্তির। ফলে শেষ পর্যন্ত কি ঘটল- তা আর কেউ জানতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ক্যাসিনোকান্ডের খালেদ, জিকে শামীম, সম্রাট, পাপিয়ারা বহাল তবিয়তে কারাগারে রয়েছেন। ওই গ্রেফতারকৃত ‘ভয়ঙ্কর অপরাধীর’ এখনও বিচার শুরু হয়নি। এরই মাঝে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন মুখ। এখন মিডিয়ায় পাপুল-সাহেদ-সাবরিনা চৌধুরীরা শিরোনাম হচ্ছেন।
অগ্রগতি নেই পাপিয়ার অনুসন্ধান-তদন্তে : নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয় গত ১৮ মার্চ। অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার পৃথক তিন মামলায় গ্রেফতার শামীমা নূর পাপিয়ার রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এরপর করোনা প্রকোপে সাধারণ ছুটি ঘোষিত হয়। থেমে যায় পাপিয়ার মামলার তদন্ত। দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করতে দেখা যায়নি। এ ছাড়া গত ২৮ জুন দুদকের উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ জানান, পাপিয়া দম্পতির অবৈধ সম্পদ অর্জনের সকল তথ্য এখন দুদকের হাতে। পাপিয়ার প্রায় ৪ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে। তবে অনুসন্ধান শেষ হলেও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়নি অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা। তবে পাপিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। পাপিয়াকে ৩ মামলায় গত মার্চে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। কিন্তু রিমান্ডে থাকা অবস্থায় পাপিয়ার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। পাঁচ দিনের মাথায় তাকে আবার কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
৮ মাসেও জিজ্ঞাসাবাদ হয়নি সম্রাটের : ক্যাসিনোকান্ডের আলোচিত চরিত্র ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় এ নেতার বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে ২০১৯ সালের অক্টোবরে। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন দেয় আদালত। ২৪ নভেম্বর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা ছিল। কিন্তু গত ৮ মাসেও সম্রাটকে দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই ‘অসুস্থ’ সম্রাট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখনও তিনি সেখানেই ‘জামাই আদরে’ রয়েছেন। করোনার ডামাডোলে দুদকে চাপা পড়ে আছে সম্রাটের ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অনুসন্ধান। অস্ত্র মামলাসহ অন্যান্য মামলায়ও সম্রাটকে আদালতে হাজির করতে দেখা যায়নি গত ৬ মাসে।
জামিন হয়েছিল খালেদ-জিকে শামীমের : সর্বশেষ অস্ত্র মামলায়ও জামিন দেয়া হয়েছিল আলোচিত যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে। দুই মামলায় গত ৪ ও ৬ ফেব্রæয়ারি জামিন লাভের পর তার কারামুক্তিও ছিল চূড়ান্ত। কিন্তু সেই গোপন জামিনের বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারণা শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ‘নাম বিভ্রাট’ হয়েছে দাবি করে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ গত ৮ মার্চ জামিন বাতিল করে। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে ওঠা ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানও বন্ধ রয়েছে। এ অভিযোগে সর্বশেষ ৪ মার্চ জি কে শামীমের স্ত্রী শামীমা সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
গত ৪ মাসেও এটির কোনো অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায় না। গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর র্যাব গ্রেফতার করে কথিত যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচার আইনে পৃথক মামলা রয়েছে। মাদক ও অস্ত্র মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যেই বার বার জামিনের চেষ্টা চালাচ্ছেন জি কে শামীম। ভার্চুয়াল আদালতেও তিনি জামিনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাই যে কোনো দিন তারা বেরিয়ে আসতে পারেন বলে ধারণা আইনজ্ঞদের।
ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযানে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুইয়াকে গ্রেফতার করা হয় গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচার আইনে পৃথক মামলা করে র্যাব। ৫ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছর ২১ অক্টোবর মামলা করে দুদক। মামলার তদন্ত শেষ হয়নি ৯ মাসেও। সর্বশেষ এ মামলায় গত বছর ১২ জানুয়ারি খালেদ মাহমুদ ভুইয়ার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার, খালেদের ভাই মাসুদ মাহমুদ ভুইয়া এবং ভাইয়ের স্ত্রী মনসুরা ইয়াসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
ক্যাসিনোকান্ড নির্মূূল অভিযান নিয়ে দেশ-বিদেশে তোলপাড় হয়েছিল। ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযান ২ মাস চলার পর ক্রমেই স্তিমিত হয়ে যায়। দুই মাসে পরিচালিত হয় ৫০টির মতো ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযান। গ্রেফতার করা হয় ২৭৫ জন বিতর্কিত ব্যক্তিকে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এসব অভিযানে ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নগদ, ১৬৬ কোটি টাকার এফডিআর, ১৩৩টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ৮ কেজি সোনা, ২৭টি অস্ত্র এবং সাড়ে ৪ হাজার বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। অভিযানের পর ৫টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। দুর্নীতি দমন কমিশন প্রভাবশালী ২৩ ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৬শ’ ব্যাংক হিসাব তলব করে। ৩৪ জনের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। তবে এখনও কোনো মামলায় চার্জশিট দেয়নি সংস্থাটি।
নতুন মুখ সাহেদ-ডা. সাবরিনা-পাপুল : করোনার মধ্যে ক্যাসিনোকান্ড নিয়ে ফলাও প্রচার থিতিয়ে গেছে। তবে হালের করোনা-বাস্তবতা ছাপিয়ে বড় সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত এমপি দম্পতি কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামের কান্ড-কীর্তি। এর মধ্যে অর্থপাচার মামলায় পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এমপি এবং শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক। আগামী ২২ জুলাই তাদের দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে অর্থপাচার এবং ঘুষ প্রদানের ঘটনায় কুয়েত কারাগারে রয়েছেন কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল এমপি। তাদের বিষয়ে গণমাধ্যমের আগ্রহে ভাটা না পড়তেই যুক্ত হয়েছে অপরাধ জগতের আরো তিন নতুন মুখ।
সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদ, আরিফ চৌধুরী ও ডা. সাবরিনা চৌধুরী। তাদের বিরুদ্ধে কোডিভ-১৯ এর পরীক্ষার ‘নেগেটিভ সনদ’ দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা এবং কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মামলা হয়েছে। প্রথমে জিকেজি হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশনের মালিক আরিফ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। অতঃপর মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় জিকেজি হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিজেন্ট হসপিটালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদকে ৯ দিন পর গ্রেফতার করা হয়। ১৭ জনের বিরুদ্ধে র্যাবের দায়ের করা মামলায় সাহেদসহ ১০ জন কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এবং দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মইদুল ইসলাম বলেন, দুদকের অনুসন্ধান এবং তদন্ত প্রক্রিয়াটি প্রমাণভিত্তিক। তাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করাটা সময়সাপেক্ষ। তাই নতুন কোনো ঘটনা উদঘাটিত হওয়ার আগে ঝটপট করে যেনতেন একটি প্রতিবেদন দাখিল করে দেয়া দুদকের পক্ষে সম্ভব হয় না। তবে হ্যাঁ, আদালতের কাছ থেকে সময় নিয়েও কেন সম্রাট এতদিনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি- এ প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। যেটির উত্তর সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধানকারী দলই ভালো দিতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।