Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

টোলের নামে চাঁদাবাজি

পরিবহন সেক্টরে বন্ধ : ঢাকা সিটিতে চলছে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

পরিবহন সেক্টরে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ। এই সুযোগে সিটি টোলের নামে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। কোথাও গাড়ি দাঁড়ালেই দৌড় নিয়ে রসিদ নিয়ে হাজির হন টোল আদায়কারীরা। এই টোলের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। আগে ৩০ টাকার টোল এখন ৬০ টাকা। পরিবহন মালিক শ্রমিকরা জানান, রাজধানীর রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করলে পৃথক টোল দিতে হয়। কিন্তু রাস্তার উপর দিয়ে গাড়ি চললে টোল দিতে হয়-এটা একেবারেই নতুন। এতে করে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, যাত্রী সবাই বিব্রত। কারা কিভাবে এই টোল আদায় করছে সে সম্পর্কে পরিবহন মালিকদেরকে কিছুই জানানো হয়নি। এ বিষয়ে গুলিস্তান, জয়কালি মন্দির, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় চলাচলকারি বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানীর মালিক নেতৃবৃন্দ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ৬ জুলাই মেয়রের কাছে লিখিত আবেদনে তারা সিটি টোলের পরিমাণ কমিয়ে ২০ টাকা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেন এলাকায় বিভিন্ন গণপরিবহন থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে। সিটি করপোরেশনের টোলের নামে এই চাঁদাবাজির জন্য মোড়ে মোড়ে নামানো হয়েছে উঠতি বয়সী তরুণসহ শতাধিক যুবককে। তাদের হাতে থাকে টোলের রসিদ। কোথাও গাড়ি দাঁড়ানো মাত্রই টোল আদায়কারীরা দৌড়ে এসে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রসিদ ধরিয়ে দিয়ে টাকা দাবি করে। কয়েকজন চালক জানান, আগে এই টাকার পরিমাণ ছিল ৩০ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। এই চাঁদার হার কে নির্ধারণ করেছে তাও জানে না কেউই। সায়েদাবাদ টার্মিনালের একজন মালিক বলেন, করোনার মধ্যে এমনিতেই গাড়িতে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। তার উপর সিটি টোলের নামে যে টাকা আদায় করা হচ্ছে তা আমাদের জন্য ‘মরার উপর খাড়ার ঘায়ের’ মতো। এটা বন্ধ না করলে আমাদেরকে বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। আমরা আর পারছি না। ডেমরা রোডের টেম্পু চালক হানিফ বলেন, এখন মালিক ও শ্রমিক কমিটির চাঁদাবাজি বন্ধ। কিন্তু টোলের নামে চাঁদাবাজি তো বন্ধ হচ্ছে না। করোনার মধ্যে এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করা উচিত।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা সরাফত হোসেন জানান, কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে খবর ছাপানোর পরে কয়েকদিন বন্ধ ছিলো এই চাঁদাবাজি। এখন বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। যারা টোলের নামে চাঁদা নিচ্ছে তারা রসিদও দিচ্ছে। ফলে সবাই মনে করছে এই বৈধ টোল আদায়। তিনি বলেন, যারা এভাবে চাঁদা আদায় করছে তারা বিভিন্ন এলাকার চি‎িহ্নত চাঁদাবাজ। তারা পুলিশের চোখের সামনেই এই চাঁদা আদায় করছে। কিন্তু পুলিশ কিছুই বলছে না।

মতিঝিল এলাকায় দেখা গেছে রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং করলে দিতে হচ্ছে পার্কিং টোল। আবার একই সাথে দিতে হচ্ছে সিটি টোল। সিএনজি অটোরিকশা চালক ছালেক মোল্লা জানান, মতিঝিল থেকে যাত্রাবাড়ী গেলে টোল আদায়কারীরা একেবারে জেঁকে বসে। চলন্ত গাড়ি থামিয়ে তারা টোল আদায় করে। দিতে না চাইলে তারা গাড়ি আটকিয়ে রাখে। এতে করে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, বাবুবাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা, সদরঘাট ও কমলাপুরে রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন টার্মিনালে ঘুরে দেখা গেছে, সিটি টোলের নামে এই চাঁদা আদায়ের দৃশ্য। যাত্রাবাড়ীর মোড়ে টোল আদায়ে সক্রিয় বেশ কয়েকদল। এদের একদল ডেমরা রোডে, একদল মাওয়া রোডে, একদল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে, আরেকদল গোল চত্ত¡রে টোল আদায় করছে। দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ছাড়াও এরা চলন্ত গাড়ি থামিয়ে টোল আদায় করছে। এ নিয়ে গাড়ির শ্রমিক ও যাত্রীরা খুবই বিরক্ত। কিন্তু কার কথা কে শোনে। কয়েকজন বাস চালক জানান, মতিঝিলে একবার টোল দিয়ে শনিরআখড়ায় আবার দিতে হয়। টোলের রসিদ দেখালে বলা হয়, ওটা মতিঝিলের টোল। আমাদেরটা দিতে হবে। চালকদের প্রশ্ন এক শহরে টোল কয়বার দিতে হয়?

পরিবহন শ্রমিকরা জানান, সিটি টোলের নামে এই চাঁদার পরিমাণ কিছু দিন আগেও ২০ টাকা ছিল। এখন সর্বনি¤œ হচ্ছে ৩০ টাকা। ¯িøপে লেখা রয়েছে, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, পোস্তগোলা, শ্যামপুর, গুলিস্তান, জয়কালি মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) মতিঝিল, কোনাপাড়া, মেরাদিয়া, স্টাফ কোয়ার্টার, হাজীনগর, বড়ভাঙ্গা, শনির আখড়া, স্টপ ওভার টার্মিনাল সংশ্লিষ্ট যানবাহন হতে টোল ফি আদায়ের রসিদ।’ ইজারাদারের নাম লেখা আছে মো. মতিন মৃধা। গুলিস্তান এলাকায় টোল আদায়কারী এক যুবক বলেন, আমি চাকরি করি মাত্র। ইজারাদার মতিন মৃধার সাথে কথা বলতে বলেন তিনি। টোল আদায়ের রসিদে মতিন মৃধার যে নম্বর দেয়া আছে ওই নম্বরটি সচল পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে ওয়ারী জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সিটি টোল সিটি করপোরেশন থেকে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।

 



 

Show all comments
  • Salah Uddin ১৭ জুলাই, ২০২০, ৫:৪৬ এএম says : 0
    কেন এসব টোল নেওয়া হবে শহরের মধ্যে নাগরিক সুবিধা তৈরি সরকারের দেওয়া উচিত তোদের নামে চাঁদাবাজি করে কার পকেট ভারী করা হচ্ছে পোস্তগোলা ব্রিজ ছোট্ট একটা বেশি ব্রিজের মধ্যে যারা বাইক চালায় তাদের কাছ থেকে 15 টাকা নেওয়া হচ্ছে কিসের জন্য 15 টাকা নেওয়া হবে বাইক মানুষের যাতায়াতের জন্য সহজ যানজট কমানোর জন্য ছোট্ট একটা ব্রিজ পার হতে 15 টাকা করে চাঁদা দিচ্ছে এটা কোন অবস্থাতেই ঠিক নয় অন্যায় জুলুম অভিলম্বে বন্ধ করা হোক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাঁদাবাজি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ