পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ইনকিলাব ডেস্ক ঃ সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য প্রণীত আইন দিয়েই চলছে দেশের আটটি ইসলামী ব্যাংক। দেশে ‘ইসলামী ব্যাংকিং আইন’ না থাকায় নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী লেনদেনসহ অন্যান্য সব কর্মকাÐ চালাচ্ছে এই ব্যাংকগুলো। শুধু তাই-ই নয়, পৃথক আইন না থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারছে না। আবার ইসলামী শরিয়ার কথা বলে এই ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিচ্ছে বিশেষ সুবিধাও। এ কারণে প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও ক্রমেই এ ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে। সুদভিত্তিক ব্যাংক থেকে অনেকেই ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রূপান্তর হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। অনেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দ্বারস্থও হয়েছেন।
ইতোমধ্যে পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং করতে অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড (এসবিএল)। এর আগে সরকারি খাতের রূপালী ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের এনসিসি ব্যাংকসহ ডজন খানেক ব্যাংক পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে রেখেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১২ থেকে ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং করতে চায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই সক্ষমতা নেই। সেই ধরনের লোকবলও নেই। তিনি বলেন, যারা ইসলামী ব্যাংকিং করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মূলত তাদের কাছ থেকেই প্রথমে শিখছে। এ প্রসঙ্গে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকগুলোকে দেখে দেখে শিখেছেন। আমাদের কাছ থেকেই তারা শিখেছেন। তিনি জানান, প্রচলিত আইনেই ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিষয়ে বলা আছে। এ কারণে ইসলামী ব্যাংকিং করতে তাদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য একটি গাইডলাইন আছে। সেই গাইডলাইন অনুযায়ী ব্যাংক চলছে কি না তা দেখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং ব্যবস্থাও রয়েছে। জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক চালু হওয়ার এক বছর আগে ‘ইসলামী ব্যাংকিং আইন’ চালু করেছিল থাইল্যান্ড। অথচ বাংলাদেশে গত ৩৩ বছর ধরে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত আইন চালু করা যায়নি। তবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি গাইডলাইন প্রস্তাব করে ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য, যা ২০১১ সালে সংশোধন করা হয়। ২০১১ সালে অর্থবিষয়ক স্থায়ী কমিটির কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি খসড়া আইন চূড়ান্ত করে জমা দিয়েছিল। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে এখনও তা আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে, ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিকাশের জন্য শিগগিরই ইসলামিক ব্যাংকিং আইন হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত জুন মাসে ‘ইসলামিক ব্যাংকিং’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান। হোটেল সোনারগাঁওয়ে ওই সেমিনারটির আয়োজন করে ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরাম (আইবিসিএফ)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকিং আইন না থাকলেও ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে পুরো ব্যাংক খাতের মোট আমানতের মধ্যে ২২ শতাংশ আমানত রয়েছে ইসলামী শাখাগুলোতে। একইভাবে মোট ঋণের ২৩ শতাংশেরও বেশি পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে এই ইসলামী ব্যাংকগুলো। এছাড়া মোট রেমিট্যান্সের ৩০ শতাংশ এসেছে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ২৫টি ব্যাংক ১ হাজার ১২টি শাখার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। এর মধ্যে আটটি ব্যাংক পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং করছে ৯৬৬টি শাখার মাধ্যমে। নয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ২১ ইসলামী শাখা এবং আটটি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ২৫ ইসলামী ইউন্ডোর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলোর সেবা যথেষ্ট স্বচ্ছ নয়। সেখানে কীভাবে মুনাফা নির্ধারণ হয়, সেটাও স্পষ্ট নয়। প্রথাগত ব্যাংকে এটি নির্ধারিত থাকলেও ইসলামী ব্যাংকগুলো কীভাবে গ্রাহককে মুনাফা দিচ্ছে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে আটটি ইসলামী ব্যাংক পূর্ণাঙ্গভাবে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড ও আইসিবি ব্যাংক। - ওয়েবসাইট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।