পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৃষ্টি আর ভারতের ঢলে তিস্তা, পদ্মা, যমুনা, সুরমাসহ প্রধান প্রধান নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এখনো অনেক স্থানে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর এবার দেশের মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত হচ্ছে বন্যা। রাজধানী ঢাকার পূর্বাঞ্চলের নিচু এলাকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বিশেষজ্ঞরা দ্রুত ভ্রাম্যমাণ পাম্প বসানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বন্যার পানি ঢাকার চারপাশের জেলাগুলোতে পৌঁছে গেছে। ঢাকার নবাবগঞ্জ, দোহার ও মানিকগঞ্জের নিম্নাঞ্চল এখন বন্যার পানির নিচে। গতকাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী চার পাঁচ দিনের মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে পানি চলে আসতে পারে।
ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলে বেড়িবাঁধ থাকলেও পূর্বাঞ্চলে বন্যা ঠেকানোর মতো বাঁধ বা অন্য কোনো অবকাঠামো নেই। পূর্বাঞ্চলে বেশির ভাগ নিচু এলাকার জলাভূমি ভরাট করে আবাসিক এলাকা করা হয়েছে। ফলে পানি এসে সেই আবাসিক এলাকাগুলোকে প্লাবিত করবে সহজেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঢাকা ওয়াসা পানিনিষ্কাশনের জন্য পাঁচটি স্থানে পাম্প স্থাপন করলেও তা পূর্বাংশের নিম্নাঞ্চলকে বন্যামুক্ত করতে পারবে না। গোড়ান, বনশ্রী, বাসাবো, আফতাবনগর, সাঁতারকুলসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় কমপক্ষে ৫০ লাখ মানুষের বসবাস। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মধ্যবর্তী ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও ডিএনডি বাঁধ এলাকাতেও বন্যার পানি আসতে পারে। বিস্তীর্ণ এলাকায় একবার পানি ঢুকে পড়লে তা নামতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ লাগবে।
বর্তমানে দেশের প্রায় ২০টি জেলার কমপক্ষে ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। এদের জন্য প্রায় ১ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেগুলোতে প্রায় ২১ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ১৪টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে। বন্যার পানি ১৭ জুলাই সর্বোচ্চ বাড়বে। সেই বৃদ্ধিটা আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ স্থায়ী হবে। ২৩টি জেলায় বন্যা বিস্তৃতি লাভ করবে। ভারতের মেঘালয়, চেরাপুঞ্জী, আসাম, ত্রিপুরা এবং চীন ও নেপালের পানি এসে দেশে এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় আক্রান্ত জেলার সংখ্যা এখন ১৭। বন্যায় আক্রান্ত মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৪৬৪।
ঢাকার চারপাশের নদীর পানি গত তিনদিন ধরে বাড়ছে। পদ্মার পানি প্রতিদিনই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। জেলার হরিরামপুরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ উপজেলার দৌলতপুরের প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখনো জেলায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র চালু হয়নি। শীতলক্ষ্যার পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এভাবে পানি বাড়লে আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে জেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উজানে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গে গতকালও ভারি বৃষ্টি হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদিনই ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি আগামী দু’তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে আগামী তিন-চার দিন উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, পদ্মার অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে ঘর-বাড়ি গুটিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে বাঘা, চারঘাট উপজেলার নদী তীরবর্তী মানুষ। বাঘার চরকালিদাসখালি গ্রামের ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গ্রাম কিংবা নিকট আত্মীয়দের কাছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধির সাথে ভাঙন শুরু হয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চক রাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর এলাকায়। প্রায় দুই কিলেমিটার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে শতাধিক একর জমিসহ গাছপালাও। ভাঙনের কবলে পড়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে কালিদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। হুমকিতে রয়েছে লক্ষীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। গতকাল সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১০১ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কুড়িগ্রামে ধরলার পানি কিছুটা কমলেও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্রের পানি।
দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার ৬০ ইউনিয়নের ৫২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নতুন করে তলিয়ে গেছে সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা, ঘোগাদহ ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। জেলার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়ক, রৌমারী-তুরা সড়ক, সোনাহাট-মাদারগঞ্জ সড়ক, ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট সড়ক ও ভিতরবন্দ-মন্নেয়ারপাড় সড়কের কিছু অংশ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
উলিপুর থেকে হাফিজুর রহমান সেলিম জানান, কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার সদর এলাকায় পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে প্রায় দেড় শতাধিক বাড়ির উঠানে পানি জমে আছে।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, যমুনা নদীর পানি অবিরাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েক জায়গায় সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলার ৫২ ইউনিয়নের ৫ লক্ষাধিক বানভাসীদের। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে গতকাল যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জামালপুর- দেওয়ানগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে বিপাকে পড়েছে ট্রেনের যাত্রীরা।
নওগাঁ থেকে এমদাদুল হক সুমন জানান, রাণীনগরে ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর ঝুঁকিপূর্ণ বেরিবাঁধটি ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ। পানিতে প্লাবিত হয়ে নষ্ট হওয়ার পথে আউশ ও আমন ধানের বীজতলা। এছাড়াও পানিতে প্লাবিত হয়েছে সবজির ক্ষেত।
এছাড়া বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট। সুরমার পানিতে তলিয়ে গেছে তালতলা এলাকা। গুলশান সেন্টারেও উঠে গেছে পানি। তালতলা-জামতলা সড়কের অর্ধেক অংশ পানির নিচে। সুরমার পানি না কমলে এই পানি কমবে না। একই অবস্থা নগরীর উপশহরেও। সুরমার পানি উপচে ডুবে গেছে উপশহরের অর্ধেক এলাকা। বি,ডি এবং ই-ব্লকের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি।
সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার, সিলেট বরইকান্দি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যায় সুনামগঞ্জে সবকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট। এতে করে জেলা শহরের সাথে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। অনেক এলাকায় বসত বাড়িসহ টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অন্যান্য জেলার মধ্যে- নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল এবং ফেনীতেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।