বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
নবী কারীম সা. এর একটি বড় সুন্নত হচ্ছে ইয়াদাতুল মারীয। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাওয়া, তার খোঁজ-খবর নেয়া, হালপুরসী করা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় ইয়াদাতুল মারীয। এটি এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের একটি হক। হাদীস শরীফে এর অনেক ফজিলত বিবৃত হয়েছে।
ইয়াদাতুল মারীযের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ হয়। দিল নরম হয়। আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। নেক আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এমনকি খোদ এ আমলের মাধ্যমেই অনেক সওয়াব হাছিল হয়। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক সুন্দর হয়। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। অসুস্থ ব্যক্তি প্রবোধ লাভ করে। তার সুস্থতা ত্বরান্বিত হয়। যিনি এ আমলে এগিয়ে আসেন ফেরেশতাগণ তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দুআ করতে থাকেন। আসমানে তার জন্য জান্নাতের ঘোষণা হতে থাকে। যতক্ষণ সে রোগীর সেবায় ব্যস্ত থাকে ততক্ষণ সে আল্লাহর রহমতের বেষ্টনীতে থাকে। আল্লাহর দৃষ্টিতে সে জান্নাতের বাগানে বিচরণ করতে থাকে। সর্বোপরি হাদীস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী রোগীর সেবা যেন আল্লাহরই সেবা। তাই মুসলিম মাত্রই কর্তব্য হচ্ছে মহিমান্বিত এ আমলের প্রতি যতœবান হওয়া।
হাদীস শরীফে যেভাবে এ আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে তেমনি তা আদায় করার পদ্ধতি ও আদবও উল্লেখিত হয়েছে।
কেউ অসুস্থ হলে তার ইয়াদতে যাওয়া: নবীজীর সাধারণ রীতি এমনটাই ছিল, কেউ অসুস্থ হলে তার ইয়াদতে চলে যেতেন। সীরাতে এরকম উদাহরণ অনেক। হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন, আল্লাহর কসম, আমরা সফরে ও হযরে (এলাকায় অবস্থানকালীন সময়ে) রাসূলুল্লাহ সা. এর সংশ্রব লাভ করেছি। তিনি আমাদের অসুস্থদের ইয়াদত (খোঁজ খবর) করতেন। আমাদের জানাযার সাথে সাথে যেতেন। আমাদের সাথে জিহাদ করতেন। অল্প হোক বেশি হোক যা থাকত তা দিয়েই আমাদের প্রতি সহানুভ‚তি প্রদর্শন করতেন, পাশে দাঁড়াতেন। (মুসনাদে আহমাদ: হাদীস ৫০৪)। তাই আমাদেরও এ সুন্নতের প্রতি যত্মবান হওয়া উচিত।
অসুস্থ ব্যক্তির হালপুরসী করা: ইয়াদতের একটি আদব হচ্ছে, অসুস্থ ব্যক্তিকে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা, তার হালপুরসী করা। এতে অসুস্থ ব্যক্তি প্রবোধ লাভ করে। হিজরতের পর মদীনা মুনাওয়ারার আবহাওয়া অনেকের শরীরে খাপ খাচ্ছিল না। হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. যখন হিজরত করে মদীনায় আসলেন হযরত আবু বকর রা. ও হযরত বেলাল রা. জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। হযরত আয়েশা রা. বলেন, তখন আমি তাদের নিকট গেলাম। বললাম, আব্বাজী! আপনার শরীরটা কেমন লাগছে? বেলাল! আপনার কেমন লাগছে?
এভাবে তিনি তাদের হালপুরসী করতেন। হযরত আয়েশা রা. বলেন, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট বিষয়টি জানালাম। তখন নবীজী দুআ করে দিলেন, আয় আল্লাহ! আপনি মদীনাকে আমাদের নিকট প্রিয় করে দিন; মক্কার মতো বা তার চেয়ে বেশি। মদীনার পরিবেশকে ঠিক করে দিন। মদীনার স-মুদে (মাপের পাত্রগুলোতে) আমাদের জন্য বরকত দিন। এর জ্বর ও অসুখ বিসুখকে এখান থেকে সরিয়ে দিন। তা জুহফায় নিক্ষেপ করুন। (সহীহ বুখারী: হাদীস ২৯২৬, ৫৬৭৭)।
তাই অসুস্থ ব্যক্তির হালপুরসী করা ইয়াদতের একটি গুরুত্বপ‚র্ণ বিষয়। তবে এক্ষেত্রে এ আদবটির প্রতিও লক্ষ করা জরুরি যে, অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থা জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে বিনা কারণে তার রোগ সম্পর্কে খুঁটে খুঁটে জিজ্ঞাসা না করা। কেননা এতে রোগীরও কোনো ফায়দা নেই এবং ইয়াদতকারীরও না। উপরন্তু এতে অনেক সময় রোগী বিব্রত বোধ করে এবং সংকোচে পড়ে যায়। তাই এভাবে জিজ্ঞাসা করা শোভনীয় নয়।
হযরত শেখ সাদী রাহ. বলেন, আমার শরীরে একটি ক্ষত ছিল। শায়েখ রাহ. প্রতিদিন আমার খোঁজ নিতেন। জিজ্ঞাসা করতেন, কী অবস্থা? এভাবে জিজ্ঞাসা করতেন না যে, তোমার ক্ষত কোথায়? বুঝতে পারলাম, তিনি এজন্য এভাবে জিজ্ঞাসা করছেন যে, শরীরের সব অঙ্গের উল্লেখ সঙ্গত নয়। (গুলিস্তাঁ, পৃ. ২৩৭)।
অবশ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর বিস্তারিত অবস্থা জানবেন এবং রোগীও তাকে সব খুলে খুলে বলবে। কেননা যথাযথ চিকিৎসার জন্য এর বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।