পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতারণার অভিযোগে দেশজুড়ে আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে। নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা সাহেদ প্রতারণা করেছেন জন্মদাতা বাবার অসুস্থতা নিয়েও। করোনা আক্রান্ত বাবাকে নেগেটিভ সনদ দেখিয়ে ভর্তি করান নিজের হাসপাতাল রেখে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে তার বাবার করোনা পজিটিভ আসে। এক পর্যায়ে মারা যান সাহেদের বাবা।
সহায়-সম্পদ ও নিজেকে রক্ষায় হাইপ্রোফাইল তদবির করেছিলেন প্রতারক সাহেদ। মন্ত্রী থেকে শুরু করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের কাছে ফোন করে র্যাবের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিলেন। তবে কোন তদবিরই কাজে আসেনি। উল্টো ফেঁসেই গেছেন তিনি। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার তোলা ছবি ভেসে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চলছে নানামুখী আলোচনা সমালোচনা। অভিযানের ছয় দিন অতিবাহিত হলেও প্রতারক সাহেদ এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গোয়েন্দা তদন্তে বেরিয়ে আসছে সাহেদের নানা প্রতারণা। তবে সাহেদকে সমাজসেবক ভাবতেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমে বলেন, যেকোনো মুহূর্তে সাহেদ করিম ধরা পড়বেন। তিনি সীমান্ত পেরিয়ে গেছেন, এমন কোনো খবর এখনো নেই। আর যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলেছে, বাবা সিরাজুল করিমের মৃত্যুর পরও সাহেদ করিম পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার সিরাজুল করিম মারা যান।
সাহেদের স্ত্রী সাদিয়া আরাবী সাংবাদিকদের বলেন, শ্বশুর সিরাজুল করিমের মৃত্যুর পর তাকে হাসপাতাল থেকে সরাসরি মোহাম্মদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। মোহাম্মদপুরে সিরাজুল তার ভাইদের সঙ্গে একটি বহুতল ভবনে থাকতেন। ছেলের বনানীর বাসায় তিনি কখনই ছিলেন না। সাহেদ তার শ্বশুরের একমাত্র ছেলে। শ্বশুর মারা যাওয়ার খবর সাহেদ পেয়েছেন কি না, তিনি বলতে পারেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারিত রোগীরা র্যাবের কাছ থেকে নিশ্চিত হতে চাইছেন তাদের রিপোর্ট ভুয়া নাকি আসল। গত ৬ দিনে ৪ সহস্রাধিক ভিকটিম ফোনে জানতে চেয়েছেন তাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে। যারা করোনা উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়েছেন তারা এখন চরম আতঙ্কে। র্যাব জানিয়েছে, তাদের কাছে ৬ হাজার রিপোর্ট রয়েছে। সেগুলো এখন যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম বলেছেন, সাহেদ কিছুতেই দেশত্যাগ করতে সক্ষম হবে না। সে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। তাকে ধরতে একাধিক টিম সক্রিয় রয়েছে। তিনি এত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন যে, চাইলেও দেশ ত্যাগ করার সুযোগ পাবেন না। সাধারণ মানুষই তাকে ধরে ফেলতে পারবে। তার পক্ষে বেশি সময় আত্মগোপন করাও সম্ভব হবে না।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, নিজেকে বাঁচাতে সাহেদ বড় বড় জায়গায় যোগাযোগ করে চেষ্টা করেন। এমনকি মন্ত্রী থেকে শুরু করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের ফোন করে সহায়তা চান। তবে কোন জায়গা থেকেই তিনি কোন সহায়তা পাচ্ছেন না। বিভিন্ন কৌশলে সে প্রতারণা করতো। সরকারি দফতরগুলোতে সাহেদ নিজেকে কখনও অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত এমন নানা পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন। কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তোলার পাশাপাশি পুলিশের ইউনিটগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্পন্সর সহযোগিতা করে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতেন। তাছাড়া সে কিছু ভুয়া ছবি তৈরি করেছে। তার বিরুদ্ধে অন্তত ৩৩টি মামলা রয়েছে। তারপরও তাকে ধরার সাহস করেনি কোন সংস্থা। সে কখনো কখনো মেজর ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী, কর্নেল ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী, কখনো মেজর শাহেদ করিম হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
এদিকে, জন্মদাতা বাবার অসুস্থতা নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাহেদের বাবা গত বৃহস্পতিবার রাতে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেলে মারা যান। শুরুতে বাবার খোঁজ নিলেও রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর সিলগালা করে দেয়ার পর আর বাবার খোঁজ নেয়নি সাহেদ। শুধু তাই নয়, খোঁজ নেননি মারা যাওয়ার পরও। পরে অবশ্য তার ভাড়া বাসার কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে পাঠিয়ে বাবার লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাবা সিরাজুল করিমকে ভর্তি করাতে গিয়ে সাহেদের প্রতারণার কথা জানান মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, গত ৪ জুলাই সিরাজুল করিমকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করেন সাহেদ। সিরাজুল করিমের বয়স ছিল প্রায় ৭০ বছর। ভর্তি করার সময় সাহেদ জানান তার বাবার কোভিড-১৯ সংক্রমণ নেই। বাবার করোনা পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন দেয়ার কথা জানিয়ে ডা. আশীষ জানান, আমাদের বলা হয়েছিল, এর আগে তিনটি পরীক্ষায় সিরাজুল করিমের কোভিড-১৯ নেগেটিভ আসে। তিনটি সনদও দেখানো হয়। কিন্তু তার লক্ষণ দেখেই মনে হয়েছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত। আমাদের এখানে পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে।
হাসপাতালটির চিকিৎসক আজিজুর রহমান জানান, সাহেদের বাবার করোনা পজেটিভ আসলে তাকে আমরা ফোন দেই। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেহেতু আপনার হাসপাতাল কোভিড রোগীদের জন্য সেখানে আপনার বাবাকে নিয়ে যান। কিন্তু সাহেদ অপারগতা প্রকাশ করেন। বলেন তার ওখানে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তার ফুসফুসে সংক্রমণ ছিল। অবস্থা খারাপ হলে দুই দিন আগে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি। ভর্তির পর প্রথম দুই দিন সাহেদ তার বাবাকে দেখতে এসেছিলেন। তবে ৬ জুলাইয়ের পর থেকে এখানে তাদের আর কেউ আসেননি।
অপরদিকে, সাহেদকে চিনতেন না স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সামনাসামনি দেখাও হয়নি কখনো। তবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির শুরুর দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধি হিসেবে সাহেদকে প্রথম চোখে পড়ে তাদের। এর আগে অবশ্য তাকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আলোচক হিসেবে দেখেছিলেন। ওই সময় বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। এ সময় রীতিমতো ‘সমাজসেবক’ হিসেবে আবিভর্‚ত হন সাহেদ। তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থে তার মালিকানাধীন উত্তরা ও মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতাল দুটিতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে রাজি হন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাহেদের সম্পর্কে এসব তথ্য জানান।
তারা জানান, উত্তরা ও মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতাল দুটিতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে রাজি হওয়ার পর থেকে ‘সমাজসেবক’ সাহেদের নানা উছিলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে যাতায়াত বাড়তে থাকে। নিয়মিত যাতায়াত ছিল স্বাস্থ্য মহাপরিচালকসহ অন্যান্য শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কক্ষে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, যখন-তখন যিনি মন্ত্রী-সচিবসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টেলিফোনে সরাসরি কথা বলেন, এমন লোককে কি অবিশ্বাস করা যায়?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।