পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সংখ্যা নয়, গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে : প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
দেশে পাবলিক ও প্রাইভেট মিলে দেড়শ’রও বেশি বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই মধ্যে আবারও নতুন করে বিশ^বিদ্যালয় অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। যদিও বিদ্যমান বিশ^বিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগেরই মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষাবিদদের মধ্যে। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) তাদের প্রতিবছর প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে উচ্চ-শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তা ও বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে পাঠ্যসূচি তৈরি না করা, শিক্ষার গুণগত মানের অভাব, প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন না করার কারণে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত বেকার বাড়ছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। এ অবস্থায় কোয়ানটিটি (সংখ্যা) নয়, কোয়ালিটিতে (মান) জোর দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংকট থাকায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে সব জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। বেকারত্বের হার এবং শিক্ষার মানের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের কোনো সম্পর্ক নেই।
দেশে বর্তমানে ৪৬টি সরকারি বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনুমোদন পেয়ে অপেক্ষায় আছে তিনটি বিশ^বিদ্যালয়। নতুন করে আরও ৫টি বিশ^বিদ্যালয় অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। জরুরি ভিত্তিতে এসব বিশ^বিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য মতামত দিতে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে- নারায়ণগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নাটোর জেলার সদর উপজেলায় ডক্টর ওয়াজেদ আলী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেহেরপুরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
যদিও বিদ্যমান বিশ^বিদ্যালয়গুলোতেই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হচ্ছে না বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। এক্ষেত্রে নতুন বিশ^বিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়াকে অপরিকল্পিত বলছেন তারা। বরং নতুন বিশ^বিদ্যালয় না বাড়িয়ে যেসব বিশ^বিদ্যালয় ইতোমধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও গবেষণা খাতকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক প্রফেসর মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, এতোগুলো বিশ^বিদ্যালয় হওয়ায় কোনটিতেই মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ^বিদ্যালয়গুলোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক, সেই মানের শিক্ষকেরও সঙ্কট রয়েছে।
এদিকে বিদ্যমান যে শিক্ষা ব্যবস্থা বা পাঠ্যসূচিতে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা দেয়া হচ্ছে তা বেকারত্ব তৈরি করছে বলেও মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, বিশ^ায়নের এই যুগে বিশে^র সাথে তালমিলিয়ে এবং যুগের চাহিদা অনুযায়ি কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। শিল্প-কারখানায় কিংবা কর্মক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোর চাহিদা রয়েছে তা বুঝে সেইভাবেই কারিকুলাম ও বিষয় খুলতে হবে। তা না হলে বিশ^বিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষিত বেকার তৈরি হবে। এখন বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষারও ওপর গুরুত্বারোপ করার দাবি তাদের।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর মিজানুর রহমান বলেন, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে একদিকে যেমন দেশের মধ্যে নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারবে, অন্যদিকে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে বাইরের যেসব দেশে চাহিদা রয়েছে সেসব দেশে রপ্তানি করতে পারবো।
শুধু পাবলিকই নয়, সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা যাচাই না করেই দেশে বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে একের পর এক প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০৬টি প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে। যার অর্ধেকের বেশি গত ১০ বছরে। এসব বিশ^বিদ্যালয়ের মধ্যে- শিক্ষা কার্যক্রমে রয়েছে প্রায় ১০০ বিশ^বিদ্যালয়। যদিও অনেক বিশ^বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে সার্টিফিকেট ব্যবসার অভিযোগ। আইন না মেনে যত্রতত্রভাবে বিশ^বিদ্যালয় পরিচালনা, দিনের পর দিন বেআইনিভাবে কয়েকটি রুমে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালানো এবং ন্যূনতম মান নিশ্চিত না করার অভিযোগ খোদ ইউজিসিরই। তারপরও থেমে নেই বিশ^বিদ্যালয়ের অনুমোদন।
সক্ষমতা আর প্রয়োজনীয়তা যাচাই না করে অনুমোদন দেয়ায় ইতোমধ্যেই সঙ্কটে পড়েছে প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়গুলো। করোনাভাইরাসের এই সঙ্কটকালে শিক্ষর্থী না পেয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বিগত কয়েকবছরে অনুমোদন পাওয়া বিশ^বিদ্যালয়গুলো। বন্ধ হয়ে গেছে এসব বিশ^বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন।
সংখ্যা নয়, এখন গুণগত মানের দিকে নজর দেয়ার আহŸান জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এমনভাবে পড়াশুনা করানো দরকার যাতে তারা তাদের দক্ষতা কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে। কারণ আমরা বেশিরভাগই তাত্তি¡ক শিক্ষা দেই, ফলে যখন কোন ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের ছেলেরা যায় তখন তাদের ট্রেনিং দিতে হয়। ইন্ডাস্ট্রির সাথে একাডেমিয়ার সেতুবন্ধন দরকার। শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠা কি চায়, সেই চাহিদা অনুযায়ি, বিষয় ও কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ এখন আমাদের বেশি দরকার। যাতে যেকোন পর্যায়ে সেই শিক্ষাটা সে কাজে লাগাতে পারে।
নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, পলিসি মেকার যারা আছে, তাদের ভাবতে সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে মান বাড়ানোটা বেশি জরুরি। কারণ আমরা বাইরে থেকে টেকনিক্যাল কাজের জন্য লোক আনছি, কিন্তু আমাদের এখানে এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের মধ্যে সেই কাজের জন্য ইফিসিয়েন্ট মানুষ তৈরি করছি না। এখন আমাদের চিন্তা করার সময় এসেছে যে, দেশের প্রয়োজনে সংখ্যা না বাড়িয়ে গুণগত মান বাড়ানো। বিশ^মানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য যে মানের শিক্ষা দরকার সেটা করতে হবে। যদি মনে করি যা ইচ্ছা পড়িয়ে সার্টিফিকেট দিলাম তাহলে বেকার সংখ্যা বাড়বে।
বেকারত্বের হার ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের কোন সম্পর্ক নেই বলে মনে করছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। কমিশনের সদস্য প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, নতুন বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা এখন অনেকটা সময়ের দাবি। নতুন বিশ^বিদ্যালয়ের সাথে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কমে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। শিক্ষার মান তৈরি করা একদিনের বিষয় নয়, এতে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।