পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ইতালীয় রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর মাস পেরিয়ে গেলেও ক্রেতার অভাবে ভেঙে পড়েছে পুরো গুলশান এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগের চেয়ে ৭৫-৮০ ভাগ বিক্রি কমে গেছে। মূলত নিরাপত্তা শঙ্কায় ক্রেতারা আসছেন না। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পণ্যের দাম কমানোর পাশাপাশি কৌশলী ভূমিকা নিয়েও হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
গত ১ জুলাই গুলশানের অভিজাত রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন। এর মধ্যে বিদেশি নাগরিক হলেন ২০ জন। উদ্ধার অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও এক বাবুর্চি নিহত হন। এ হামলার পর থেকেই ওই এলাকার ব্যবসায় ধস নেমেছে।
পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিন পর্যন্ত দুপুরের ও রাতের বুফে খাবারের সঙ্গে গেট-ওয়ান, ফ্রি-ওয়ান নামে বিশেষ অফার দিয়েছে। তারপরেও সাড়া পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানের পণ্যের পসরা বসে গুলশান এলাকায়। সবচেয়ে দামি ও বিলাসবহুল পণ্যের জন্য এ এলাকার বিপণি বিতানগুলোতে আগে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকত। নামি ব্র্যান্ডের পোশাক পেতে এখানকার শপিং সেন্টারগুলোর ওপর ভরসা ছিল ক্রেতাদের। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লেনদেনকারী ব্যবসায়ীরা এখন অলস সময় পার করছেন। এখন একজন গ্রাহকের অপেক্ষায় তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকেন তারা। খাবারের দোকানগুলো গ্রাহক টানতে একটির সঙ্গে আরেকটি ফ্রি দিচ্ছে। গুলশান-১ ও ২ এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে এ চিত্র দেখা গেছে।
গুলশান, বারিধারা ও বনানী এলাকায় বিদেশি নাগরিকদের আবাস ও চলাফেরা। এ হামলার পর থেকে বিদেশি নাগরিকরা চলাচল একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। নিরাপত্তার কারণে গুলশান-১ পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গুলশান-২-এ সকল প্রকার বাস ও গণপরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রিকশা চলাচল পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। চলাচলে বিশেষ রিকশা এখনো নামানো হয়নি। গুলশান এলাকায় প্রবেশ করতে মুখোমুখি হতে হয় নিরাপত্তা চেকিংয়ের। এতে অনেক সময় হয়রানির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। অহেতুক হয়রানি এড়াতে গুলশান এলাকায় যাতায়াত কমিয়েছেন হাজারও সাধারণ মানুষ। গাড়িওয়ালারাও না পারলে এড়িয়ে চলছেন গুলশান। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়েছে এ এলাকার ব্যবসায়গুলোতে। সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। বিক্রি না থাকায় তারা মূলধন ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিনও ভুগছে গ্রাহক সংকটে। আপদকালীন সময়ে কোনোমতে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাহক শূন্যতায় ভুগছে হোটেলটির ক্যাফে। অতিথি আকর্ষণে দুপুর ও রাতের বেলায় বুফে খাবারের সঙ্গে একটি নিলে একটি ফ্রি দিতে গেট-ওয়ান, ফ্রি-ওয়ান বিশেষ অফার দিচ্ছে। আবাসিক রুমের ভাড়ার ওপর দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। নিয়মিত গ্রাহকদের জন্যও দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। এছাড়াও গ্রাহক টানতে ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতেও সকল সেবার ওপর বিশেষ ছাড় দিচ্ছে হোটেলটি।
গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের বিপরীতে ইন্ডিয়ান খাবারের জন্য বিখ্যাত একটি রেস্টুরেন্ট। প্রায় সারাদিন অলস সময় পার করতে হচ্ছে তাদের। সন্ধ্যার দিকে একটু কাস্টমার হয়। তা ঘণ্টাখানেকের জন্য। আগে গুলশানের রেস্টুরেন্টগুলো জমজমাট হতো রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। রাতের গভীরতার সঙ্গে কাস্টমারও বাড়ত। এখন রাত নয়টার মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় ক্রেতার অভাবে।
সকাল ৮টা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত প্রায় ১৮ ঘণ্টা ওষুধের দোকান খোলা থাকত গুলশান-২ গোলচত্বর এলাকায়। এক দোকানের মালিক জানান, তার কাছে দেশি-বিদেশি প্রায় সকল ওষুধই পাওয়া যায়। গ্রাহকদের জন্য সকাল ৮টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা হয়। গ্রাহক সামাল দিতে রয়েছে ১২ জন কর্মচারী। গুলশান হামলার পরে দোকানে বিক্রি কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশের মতো। বিদেশিরা আসছেন না একেবারেই।
সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রিত গুলশান মার্কেটেও নেই ক্রেতা সমাগম। পার্কিং এলাকায় আগে যেখানে গাড়ি দাঁড় করানো মুশকিল হতো। এখন সেখানে ফাঁকা জায়গা পড়ে রয়েছে। মার্কেটের অ্যান্টিক (দুর্লভ) জিনিসের বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কর্মী জানান, রাজা-বাদশাহদের আমলে ব্যবহৃত ও হারিয়ে যাওয়া দুর্লভ বস্তুই আমরা বিক্রি করি। এর মধ্যে পিতলের জিনিসপত্রই বেশি। শৌখিন এসব জিনিসপত্রের ক্রেতা মূলত বিদেশি ও ধনী শ্রেণির লোকজন। জঙ্গি হামলার পর থেকে বিদেশিরা আসছেন না। দেশীয়রা আসছেন, দেখছেন, চলে যাচ্ছেন। বর্তমানে বিক্রিতে চরম ধস নেমেছে।
মার্কেটের শৌখিন বস্ত্রালয়ের কর্মচারী জানান, ছোট্ট এই দোকানটিতে আগে দৈনিক পনেরো থেকে বিশ হাজার টাকার বিক্রি হতো। এখন দুই হাজার টাকাও হয় না। গুলশান হামলার পর থেকে এবারের ঈদেও বিক্রি কম হয়েছে। এ মাসে দোকান ভাড়া ষোলো হাজার টাকাও ওঠানো যাবে না।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ দশ বছর ধরে এ এলাকায় ব্যবসা করছেন কামাল। বিভিন্ন দরের বড় সাইজের তোয়ালে বিক্রি করেন তিনি। কামাল জানালেন, এখন চালান ভেঙে সংসার চালাতে হচ্ছে। আর কয়েকদিন এভাবে চললে গুলশান এলাকা ছাড়তে হবে। অন্য ব্যবসায় নামতে হবে।
এদিকে আতঙ্কের কারণে গুলশান এলাকায় চলাফেরা করছেন না সাধারণ মানুষ ও বিদেশি নাগরিকরা। এর প্রভাব পড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে। সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে গুলশান এলাকায় কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অফিস থাকবে না। অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুলশান ছাড়তে বলা হয়েছে। ফলে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়া এসব প্রতিষ্ঠান কোথায় নিয়ে যাবেন, সে চিন্তা দানা বেঁধেছে তাদের মনে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।