পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : মরা পদ্মায় বান ডেকেছে। ক্ষণিকের জন্য প্রাণ ফিরে পেয়ে হয়ে উঠেছে যৌবনবতী। বর্ষণ আর ওপার থেকে আসা পানিতে এখন থৈ-থৈ করছে। ঘোলা পানিতে ডুবে গেছে মাইলের পর মাইলজুড়ে থাকা বিশাল বালিচর। যদিও নগরীর দক্ষিণে নদীর মাঝখানে মধ্যচর জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব। মধ্যচর বাদ দিয়ে পদ্মায় এখন শুধু পানি আর পানি। বাতাসে ঢেউ খেলছে। ঢেউয়ের মাথায় মাছ ধরা ডিঙ্গি নৌকার নাচন প্রাণে দোলা দিচ্ছে। হাজারো মানুষ ছুটে আসছে পদ্মার ভর যৌবন দেখতে। যন্ত্রচালিত নৌকায় পদ্মার বুকে ভেসে রেড়াচ্ছে মনের সুখে। কেউ হয়তো আনমনে গেয়ে উঠছেন মরহুম আব্দুল আলীমের সেই দরাজ কণ্ঠের গান স্বর্বনাশা পদ্মা নদী তোর কাছে শুধাই...তোর কি কূল-কিনারা নাই। কিংবা ফেরদৌসি রহমানের কণ্ঠে ‘পদ্মার ঢেউরে মোর শুন্য হৃদয় নিয়ে যারে’। প্রবীণরা এমন ভরা পদ্মা দেখে এ প্রজন্মের কাছে স্মৃতি হাতড়ে বলছেন দীর্ঘস্বাস ছেড়ে নানা কথা। বলছেন সারা জনম পদ্মাতো এমনি ছিল। কত বড় বড় জাহাজ আর মালবাহী গুণ টানা নৌকা চলতো রং-বেরংয়ের পাল তুলে। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল নৌপথ। রূপালী ইলিশের ছিল ছড়াছড়ি। ঘাড়িয়াল, শুশকের নাচন কম ছিল না। ছিল কত রকমের সুস্বাদু মাছ। আজ সবি অতীত স্মৃতি। পদ্মায় যৌবন আসায় প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে হাজারো মানুষ এসে ভিড় করছে পদ্মার তীরে। সিটি কর্পোরেশন পদ্মার তীরজুড়ে রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনা করায় বিনোদন পিয়াসী মানুষ ভিড় করছে। ছুটির দিনগুলোয় থাকছে বেশী মুখরিত। টি-বাধের পশ্চিম থেকে নদীর দিকে তাকালে মনে হচ্ছে নদীতো নয় যেন সমুদ্র। প্রায় চার কিলোমিটার দক্ষিণের চরাঞ্চলের সবুজ দৃশ্য জানান দিচ্ছে তাদের কথা। নদী ভরে যাওয়ায় এখন নৌকা ভাসিয়ে চরের হাজারো মানুষ ছুটে আসছে শহরে। অন্য সময় বিশাল বালিচর পাড়ি দেয়া সবার সম্ভব হয় না। বছরের দশটা মাস তারা দ্বিপান্তরের মত থাকে। গতকাল বড়কুঠির পার্শ্বের বসানো পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি মাপা স্কেলের কাছে গিয়ে দেখা যায় এখনো বিপদসীমার প্রায় একমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন জানালেন ২০০৩ সালে একবার বিপদসীমার লালদাগ ছুয়েছিল। এখনো পানি বাড়ছে। ভয়ের কারণ হলো ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে পানির চাপ বেড়ে গেলেও ওপারে বন্যা দেখা দিলে ফারাক্কার একশো নটি গেটের সবকটি খুলে দিয়ে ওপারের চাপ কমাতে বিপুল পরিমাণ পানি একসাথে এপারে ঠেলে দেয়া হয়। বার বার এমনটি করে। প্রতিদিন প্রায় আঠারো লাখ কিউসেক হারে পানি বের হতে থাকে। এক সাথে এতপানি পদ্মা ধারন করতে পারে না। কেননা এক তরফাভাবে পানি প্রত্যাহার আর এপারে টন টন বালি ঠেলে দেয়ায় নদীর মরণ দশা শুরু হয়েছে সে কবেই। বিশাল বালিচরের নীচে চাপা পড়েছে পদ্মা নামের নদীটি। এর শাখা নদ-নদীগুলোও মরে গেছে। ফলে পানির ধারন ক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে একসাথে পানির এতচাপ সামলাতে না পেরে দুকূল ভেঙ্গে ঘরবাড়ি ফসলের ক্ষেত ডুবিয়ে হাজারো মানুষকে সর্বশান্ত করে ছুটে চলেছে। এবারো শ্রাবণের শুরুতে নদী দাপট দেখাতে শুরু করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের পাংখা পয়েন্টে যেখান থেকে পদ্মার শুরু সেখান থেকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ছুটে চলেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পবার চরাঞ্চল, নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট চারঘাট, বাঘা হয়ে হার্ডিঞ্জ পয়েন্ট পর্যন্ত দুকূলের মানুষকে কাঁদাচ্ছে। গ্রাস করতে করতে ছুটছে। ইতোমধ্যে বহু জমি-জিরাত ঘরবাড়ি নদীর পেটে গেছে। সবচেয়ে আতংকে রয়েছে দক্ষিণের চরাঞ্চলের মানুষ। বেশ ক’বছর ধরে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেশী। ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ সব হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। সীমান্ত চৌকি আর পিলারও গেছে। আঠারোটি সীমান্ত পিলারের মধ্যে চোদ্দটি নদীতে চলে গেছে। বাকী চারটি বিলীন হলেই মালিকানা চিহ্ন হারাবে। চরাঞ্চলে ভাঙ্গন এলাকাগুলো হলোÑ চরতারানগর, চরকিদিরপুর, দিয়াড় খিদিরপুর, চরতিতামারি, দিয়াড় শিবনগর, চরবুন্দাবন, কেশবপুর, চরশ্রীরামপুর ও চররামপুরের প্রায় সব জমি ভেঙ্গে গেছে। বাকী যেটুকু আছে তা ভেঙ্গে গেলে বাংলাদেশের ভূমির কোন অস্তিত্ব থাকবে না। এলাকার চেয়ারম্যান জানালেন এসব চরে প্রায় দশ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। এখন সব মিলিয়ে হাজার খানিক লোক বসবাস করছে। বাকি সব হয়েছে উদ্বাস্ত। জমি ভেঙ্গে নদীর পেটে যাওয়ায় এখন আন্তর্জাতিক নদী আইনের দোহায় দিয়ে ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নদীতে তাদের দখল স্বত্ব¡ কায়েম অপতৎপরতা শুরু করেছে। অনেক স্থানে বাংলাদেশীদের চলাচলে বাধা দিচ্ছে। ভারত তাদের অভ্যন্তরের পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে ক্যাম্প সরিয়ে এনে বাংলাদেশের সীমান্তে এসে বসিয়েছে। নদী ভাঙ্গনের সুযোগে তারা এখন এপারের পদ্মারও দখল নিতে চায়। দক্ষিণের মাঝার দিয়াড়, খিদিরপুর, খানপুর রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড রক্ষা প্রকল্প পাঠালেও তাও নাকচ হয়ে গেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়। এনিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই চরবাসীর। গত বছর নগরীর বুলনপুরে টিবাধের পশ্চিম পাশের বাধের একটা বড় অংশ হঠাৎ করে বসে যায়। হুমকীর মুখে পড়ে পুলিশ লাইন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সারা বছর হাত গুঁটিয়ে বসে থাকলেও ফের এ বছর বর্ষার সময় তা প্রায় এককোটি একচল্লিশ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামতের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। এনিয়েও অভিযোগ কম নয়। নদীতে পানি বাড়তে থাকে আর শুরু হয় যেনতেনভাবে ব্লক বসানো। তাও আবার ধসে যায়। শুরু হয়েছে বালির বস্তা দেয়া। পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্পর্কে মন্তব্য রয়েছে এরা যখন নদী ভাঙ্গে তখন কাজ শুরু করতে পছন্দ করে। তাদের ব্লক আর বালির বস্তা ফেলার হিসেব নাকি নদীর ঢেউ গোনার মত। পরিকল্পনা মাফিক কাজের চেয়ে জরুরী কাজে আগ্রহী বেশী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি নিয়ে ভারতের চন্ডনীতির বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার হতে হবে। তেমনি আমাদের জমি-জিরাত আর পরিবেশ রক্ষায় সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। শুকনো মওসুমে নায্য পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারা আর বর্ষার সময় ওপারে বন্যার চাপ সামলাতে বিপুল পরিমাণ পানি একসাথে ঠেলে দিয়ে ভাটির অঞ্চলের মানুষকে ডুবিয়ে মারার যে কুৎসিত খেলা খেলছে বছর বছর। এ থেকে বাঁচতে হলে এখনি বহুল প্রতিক্ষিত গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। সাথে সাথে পদ্মায় প্রয়োজন ক্যাপিট্যাল ড্রেজিং করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে প্রবাহ একটা খাতে নিয়ে আসা। তাহলে এমন বন্যা আর ভাঙন থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির কারণে বিশেষ করে গঙ্গানদীর পানি নিয়ে যে মহাযজ্ঞ শুরু করেছে তাতে করে আমাদের নদ-নদীগুলো অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। নৌযোগাযোগ প্রায় বিলুপ্ত। কৃষি মৎস্য পরিবেশ জীববৈচিত্র নদী কেন্দ্রীক মানুষের জীবনযাত্রা পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আগ্রাসী নীতি পরিহার করে দাদাগিরি নয় পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থায় রেখে বহুপাক্ষিক সমঝোতার ভিত্তিতে এ সংকটের সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে যেখানে গঙ্গা একটা আন্তর্জাতিক নদী। এর পানি বণ্টন ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও চীনের পানি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পানি কমিশন গঠন করা যেতে পারে। ভারতের পানি বিশেষজ্ঞরা ও পরিবেশবিদরাও গঙ্গার পানি নিয়ে যে লংকাকা- হচ্ছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পানি নিয়ে সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা না নেয়া হলে এদেশের বড় ধরনের সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হবে যা প্রতিবেশী ভারতকেও আক্রান্ত করতে পারে। বিষয়টি প্রতিবেশী দেশটির যতদ্রুত বোধদয় হবে তাতে সবার মঙ্গল হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।