পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়া’র ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ও গোশাইবাড়ী ইউনিয়নের খাতা-কলমে থাকলেও “নিউ সারিয়াকান্দি ও পুকুরিয়া” গ্রাম দু’টি যমুনার গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে অনেক বছর আগে। অন্যদিকে শহরাবাড়ী গ্রামটির মাত্র ৩০ থেকে ৫০ ঘর পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাশে। বাকি অংশ পাশের ইউনিয়ন গোশাইবাড়ী এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। তবুও গ্রাম তিনটিকে পানিবন্দী হিসেবে দেখানো হয়েছে। এভাবেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দেয়া অন্যান্য গ্রামের ভুয়া তালিকাও করা হয়েছে শুধুই সরকারি বরাদ্দ বেশি নিয়ে লুটপাটের জন্য।
ধুনট উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা থেকে পাওয়া যায় ভান্ডারবাড়ী ও গোশাইবাড়ী ইউনিয়নে ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১১ হাজার মানুষ। ২৩৫ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। রাস্তার ক্ষতি হয়েছে ৮ কিলোমিটার। গ্রামগুলো হলো ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বৈশাখী, বানিয়াজান, উত্তর শহরাবাড়ী, দক্ষিণ শহরবাড়ী, শিমুলবাড়ি, কৈয়াগাড়ি, নিউ সারিয়াকান্দি, ভুতবাড়ী, ভান্ডারবাড়ী, পুকুরিয়া, মাধবডাঙ্গা ও গোশাইবাড়ী ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া।
সরকারিভাবে পাওয়া এই তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে তথ্যের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন জানান, নিউ সারিয়াকান্দি ও পুকুরিয়া গ্রামের অস্তিত্বই নেই। ওই গ্রামগুলো অনেক বছর আগে ভেঙে গেছে। সেখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার খর¯্রােত। রঘুনাথপুর, ভান্ডারবাড়ী গ্রামে বন্যার পানি উঠেনি। কৈয়াগাড়ী গ্রামের কিছু অংশ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই এখন বাঁধে কিংবা বাঁধের পশ্চিম পাড়ে আগে থেকেই বাড়ি-ঘর করে বসবাস করছে। ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের খাতা-কলমে লোকসংখ্যা থাকলেও বেশিরভাগ মানুষ বসবাস করে অন্য ইউনিয়নে।
মাধবডাঙ্গা গ্রামের রবিউল হাসান ভুটান জানান, মাধবডাঙ্গা গ্রামের লোকসংখ্যা হলো ১ হাজার ৩২৯ জন। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ জনের বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি উঠেছে। গ্রামের বাকি অংশ যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পশ্চিমপাড়ে। তাই বাঁধ না ভাঙলে বাকি অংশে পানি ওঠা অসম্ভব।
শহরাবাড়ী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হযরত আলী জানান, উত্তর শহরাবাড়ী ও দক্ষিণ শহরাবাড়ীর লোকসংখ্যা ৪৪৩২ জন। এর অধিকাংশ থাকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এবং পাশে গোশাইবাড়ী ইউনিয়নে।
শিমুলবাড়ী গ্রামের মহুবর জানায়, শিমুলবাড়ী গ্রামের লোকসংখ্যা ২ হাজার ২৭১ জন হলেও পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ১শ’ জনের মতো। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা রিলিফ ও সরকারি অনুদান বেশি নেয়ার জন্যই সমস্ত গ্রামের লোকজনকে পানিবন্দী দেখিয়েছে। শহরাবাড়ী গ্রামের এনামুল বারী এখন পাশের গোশাইবাড়ী ইউনিয়নে বসবাস করে। তিনি জানালেন, ভান্ডারাড়ী ইউনিয়নের অনেক গ্রামের অস্তিত্ব নেই এবং বেশিরভাগ মানুষই পাশের ইউনিয়ন গোশাইবাড়ী ও শেরপুর উপজেলায় বসবাস করছে। সরকারি খাতায় লোকসংখ্যার হিসাব থাকলেও বাস্তবে তা নেই। এছাড়াও ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা সাড়ে ১৪ হাজার হলেও তাদের বেশিরভাগই থাকে অন্য জায়গায়। ভোটের সময় ভোট দিতে আসে। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, পানিবন্দীর সংখ্যা বেশি দেখিয়ে বেশি বেশি অনুদান সংগ্রহ করে তা লুটপাটের জন্যই ভুয়া তালিকা উপজেলায় প্রদান করে।
ধুনট উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী ওই ১৩টি গ্রামের লোক সংখ্যা ১৬ হাজার। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম মোর্শেদ আপেল উপজেলায় পানিবন্দী লোকের সংখ্যা দিয়েছে ১১ হাজার।
ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আপেলের সাথে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেখেশুনেই ক্ষতিগ্রস্তের সকল তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
ধুনট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম জানায়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের দেয়া তথ্য আমরা জেলায় প্রেরণ করে থাকি। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই জেলা থেকে রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, ত্রাণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়। চেয়ারম্যানরা বেশি বেশি করে যদি তথ্য দেয় তাহলে আমাদের করার কি আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।