পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বদলে গেছে দৃশ্যপট। এতোদিন মানুষ কাজের জন্য হতো ঢাকামুখী। যে ভাবেই হোক রাজধানী ঢাকায় থেকে কাজ যোগার করা, লেখাপড়া করার প্রচলন দীর্ঘদিন থেকে ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারী বদলে দিয়েছে সবকিছু। দীর্ঘ আড়াই মাস সবকিছু বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে সীমিত আকারে সবকিছু চালু হলেও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন; যারা কাজ করছেন তাদের বড় অংশের বেতন কমানো হয়েছে। ফলে হাজার হাজার মানুষের পক্ষে ঢাকায় বাসাভাড়া দিয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে তারা রাজধানীর মায়া ত্যাগ করে গ্রামে ছুটে যাচ্ছেন। এতে করে রাজধানীর শত শত ভবন-ফ্ল্যাটই এখন ভাড়াটিয়াশূন্য।
যারা রয়েছেন তাদের বড় একটা অংশ নিয়মিত বাসাভাড়া দিতে পারছেন না। ফলে ব্যাংক ঋণ ও হাউজ বিল্ডিংয়ের ঋণ নিয়ে যারা বাড়ি করেছেন, ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা পড়ে গেছেন মরণদশায়। আবার যে সব বাড়ির মালিক বাসাভাড়ার ওপর নির্ভরশীল তারাও পড়েছেন বিপর্যয়ের মুখে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হোল্ডিং ট্যাক্স (কর) আদায়ে দুই সিটি কর্পোরেশন নমনীয় হলে বাড়ির মালিকরা কিছুটা হলেও রেহাই পাবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিলেও কিছুটা ছাড় দেয়া যেতে পারে।
জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এনবিআর বাড়ির মালিকদের আয়কর কিছুটা মওকুফ করতে পারে; যাতে তারা তাদের দরিদ্র ভাড়াটিয়াদের বাসা ভাড়ার বোঝা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করতে পারে।
রাজধানীর শনির আখড়ায় একটি বাড়ির মালিক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। তার বাসায় ৬টি পরিবার ভাড়া থাকেন। মিজানুর রহমান জানালেন, করোনার শুরু হওয়ার পর থেকে তিনজন ভাড়াটিয়া বাসা ভাড়া দিতে পারছেন না। তাদের কি বলা যায়? কেউ কেউ বিদ্যুতের বিলও দিতে চায় না। আমাদের বাড়ির ট্যাক্স, গ্যাস-পানির বিল দিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি বাড়ির মালিক বলেন, দেড় কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছি। দেড় লাখ টাকা মাসিক কিস্তি দিতে হয়। অথচ করোনার কারণে কয়েকটি ফ্ল্যাট খালি। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।
খিলগাঁয়ের এক বাড়ির মালিক বলেন, ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাড়ির মালিকই বাড়িভাড়ার টাকায় তাদের সংসার চালান। আবার বাড়ি নির্মাণকালে নেয়া ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করতে হয়। তারপরও আমরা মানবিক কারণে বাড়িভাড়া মওকুফ বা অর্ধেক নিতে রাজি আছি। সে ক্ষেত্রে সরকার ব্যাংকঋণের কিস্তি, ইউটিলিটি বিল ও সিটি কর্পোরেশনের পাওনাদির বিষয়ে সহানুভ‚তিশীল হলে বাড়িওয়ালাদের পক্ষেও মানবিক হওয়া সহজ হবে।
শুধু শনির আখড়া আর খিলগাঁও নয়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, কমলাপুর, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মতিঝিল, ফকিরেরপুল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, আজিমপুর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে করোনার কারণে অসংখ্য মানুষ বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। এ সব এলাকার মোড়ে মোড়ে সাঁটানো হয়েছে শত শত বাড়িভাড়ার টু-লেট। বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা খুবই চাপের মুখে পড়েছেন। একাধিক বাড়ির মালিক বলেন, করোনা আমাদের রুটি-রুচির ওপর আঘাত করেছে। বাসা ভাড়া না দিতে পারলে খেতে পারবো না। আর যাদের ব্যাংক ঋণ আছে তাদের মরণদশা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার লোক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে মনের মতো একটি বাসা পেতে নাভিশ্বাস অবস্থা হতো ভাড়াটিয়াদের। অনেক বাড়ি-ফ্ল্যাটের মালিকদের নানা যন্ত্রণা ভোগ করেও থাকতে হয়েছে ভাড়াটিয়াদের। সেই মালিকরাই এখন পাচ্ছেন না ভাড়াটিয়া। গত তিন মাসে রাজধানীজুড়ে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে ট্রাকে মালামাল নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজধানীতে বসবাস করা অসংখ্য ভাড়াটিয়ারা মে-জুন মাসে ঢাকার পাঠ চুকিয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। রাজধানীর আবাসিক ভবনগুলোর গেটে এখন খুবই সাধারণ দৃশ্য ‘ভাড়া হবে’ বা ‘টু-লেট’ সাইনবোর্ড।
যারা রাজধানী ছাড়ছেন তাদের কেউ বেসরকারি খাতের চাকরি হারিয়ে, কেউ বা ছোটখাটো ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছেন। ভাড়াটিয়ারা বলছেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আর হয়তো আসা হবে না ঢাকায়। আর এতে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর ভবন মালিকেরা। কেউ চিন্তিত ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের চুক্তি নিয়ে, কেউ চিন্তিত সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে।
তবে রাজধানীর স্থানীয় প্রশাসন তথা ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এক রকম সাময়িক সুবিধা দিয়েছে ভবন ও ফ্ল্যাট মালিকদের। স¤প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে, বিলম্ব ফি বা জরিমানা ছাড়াই হোল্ডিং ট্যাক্স জমা দেয়ার মেয়াদ বাড়িয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা পাবেন ভবন ও ফ্ল্যাট মালিকরা। অন্যদিকে নতুন করে হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। অথচ হোল্ডিংগুলো থেকে পাওয়া কর দুই সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় একটি খাত।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুদল হামিদ মিয়া বলেন, করোনার কারণে আমাদের কর আদায় কম হয়েছে। আমরা ভবন-ফ্ল্যাট মালিকদের কর রেয়াত দিচ্ছি। যাদের ভবন বা ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া একেবারেই নেই, খালি পড়ে আছে তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স ৫০ শতাংশ পর্যন্ত রেয়াত করা হবে। তারা ছয় মাসের জন্য এই কর রেয়াত সুবিধা পাবে। হোল্ডিং ট্যাক্স প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, বিনা বিলম্ব ফিতে হোল্ডিং ট্যাক্স জমা দেয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে হোল্ডিং ট্যাক্স ফি বাড়বে না এটা নিশ্চিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।