পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন। আর এ লীলাভূমির ‘ভয়ংকর সুন্দর’ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ২০১৫ সালে অক্টোবরে সবশেষ করা জরিপে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যদিও এক দশকের তুলনায় বাঘের এ সংখ্যাটা অতি নগণ্য। এ স্বল্পসংখ্যক বাঘের সংরক্ষণ ও বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে বন অধিদফতর গত বছরের জুনে সুন্দরবনে স্পেশাল মনিটরিং অ্যান্ড রিপোর্টিং টুল স্মার্ট পেট্রোলিং (জিপিএস সিস্টেমের মাধ্যমে টহল) ব্যবস্থা চালু করেছে। এতে সুন্দরবনে আবার নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, বাড়তে শুরু করেছে অস্তিত্ব সংকটে থাকা বাঘের সংখ্যা। এই স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের কারণে সুন্দরবনে চোরা শিকারির উৎপাত অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া বাঘের আবাসস্থল সংরক্ষণ করাও গেছে বহুলাংশে। এই পদক্ষেপগুলো বাঘের সংখ্যা বাড়াতে বেশ ভূমিকা রেখেছে।
গতকাল শুক্রবার ছিল বিশ্ব বাঘ দিবস। এ উপলক্ষে এমন তথ্য দিয়েছেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের কর্মকর্তারা। ‘বাঘ আমাদের জাতীয় প্রাণী, সবাই মিলে রক্ষা করি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব বাঘ দিবস’। বাঘের বিচরণ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশ এ দিবসটি পালিত হয়। ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্ব বাঘ সম্মেলন। এই সম্মেলনে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাঘ সমৃদ্ধ ১৩টি দেশকে টাইগার রেঞ্জ বা টিআরসি বলা হয়। দেশগুলো হলো, বাংলাদেশ, চীন, নেপাল, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও রাশিয়া।
জানা গেছে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাগেরহাটের কটকা, কচি খালী ও সুপতি, সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ, দোবেকি ও কৈখালী এবং খুলনার নীলকমল, পাটকোষ্টা ও গেওয়াখালী বাঘের বিচরণের প্রধান ক্ষেত্র। সম্প্রতি বন অধিদফতর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুন্দরবনের কিছু কিছু স্থানে মা বাঘের সঙ্গে শাবকেরও পায়ের ছাপ দেখা গেছে। বাঘ ও শাবকদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানগুলোর নাম প্রকাশ করছে না বন অধিদফতর। এর আগে ওই সব জায়গায় বাঘ শাবকের পায়ের ছাপ দেখা যায়নি। ওই সকল শাবকের পায়ের ছাপের নমুনা দেখে বন অধিদফতর ধারণা করছে, সুন্দরবনে আবারও বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। তবে কতগুলো নতুন শাবকের জন্ম হয়েছে তা এ মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না। আগামীতে ক্যামেরা ট্র্যাপিং মেথডে ছবি তুলে স্পষ্ট করা হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এবং বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ‘স্ট্রেইনদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন’ (এসআরসিডবিউপি) প্রকল্পের আওতায় এই স্মার্ট পেট্রোলিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোন এলাকায় হরিণের সংখ্যা বেশি, বাঘের বিচরণ বেশি, মানুষের আনাগোনা বেশি, কোন এলাকায় পেট্রোল বাড়ানো দরকার তা নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্বের ৩০টি দেশের ১৪০টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বর্তমানে এ ব্যবস্থা চালু আছে। সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা বাঘ, ডলফিন, কুমির, গিরগিটিসহ সকল বন্য প্রাণী এবং গাছপালা ও লতাগুল্ম রক্ষায় সর্বাধুনিক পদ্ধতি হিসেবে স্মার্ট পেট্রোলিং সিস্টেম চালু হচ্ছে। সুন্দরবনে ৩০০ প্রকারের পাখি, ৪০০ এর উপরে মাছ ও জলজ প্রাণী, ৫০০ জাতের গাছ, ৪৯ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৮৭ প্রকারের সাপসহ অসংখ্য জীবজন্তু রয়েছে। এ ছাড়া জেলেদের নৌকায় ও বন বিভাগের যানবাহনে ট্র্যাকিং ডিভাইস বসানো হয়েছে। পাশাপাশি চালু করা হয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা।
১৯৭৫ সালের জরিপে (বুবার্ট হ্যান্ড্রিস) সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। এরপর ১৯৮৪ সালের জরিপে (গিটিন্স ও আকন্দ) ৪৩০টি থেকে ৪৫০টি, ১৯৯২ সালে বন বিভাগের জরিপে ৩৫৯টি, ১৯৯৩ সালের পদচিহ্ন জরিপে (তামাংগ ও দে) ৩৬২টি, ২০০৪ সালের পাগমার্ক পদ্ধতির শুমারিতে (বন বিভাগ, ইউএনডিপি ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞ) ৪৪০টি (২১ বাচ্চাসহ) এবং ২০০৯ সালে রেডিও টেলিমেট্রি জরিপে (বন বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ) ৪০০টি থেকে ৪৫০টি বাঘ রয়েছে বলে জানানো হয়। সর্বশেষ বন বিভাগ ও ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার যৌথ উদ্যোগে ২০১৩-২০১৫ সালের বাঘ জরিপে ক্যামেরা ট্র্যাপিং মেথডে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।