Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশে বিদেশিরা আতঙ্কে আছেন -ডয়চে ভেলে

প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গুলশানে জঙ্গি হামলায় একসঙ্গে ১৭ বিদেশি নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক কমছে না বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জার্মান বেতার তরঙ্গÑডয়চে ভেলে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. টমাস প্রিনৎস বাংলাদেশের একটি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পহেলা জুলাইয়ের ঘটনার পর বিদেশিদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আমার অন্তত দুজন সহকর্মী গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে যাওয়ার পর আর ফিরবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে কতজন সহকর্মী আর ফিরবেন না সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ এখনও গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। ছুটি শেষ হলেই জানা যাবে কতজন আসছেন না। যাদের শিশুসন্তান রয়েছে তাদের মধ্যে আতঙ্কটা আরো বেশি।
হলি আর্টিজান বেকারিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল নীপিন গঙ্গাধরের। বিদেশি এক বেসরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে আছেন এই ভারতীয়। গুলশানে হামলার পর তার বন্ধুমহলের অনেকেই এখন ঢাকায় নেই। কয়েকদিন আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, হামলার কথা জেনে প্রথমে স্তম্ভিত হয়েছি। ওটা একটা নিরাপদ জায়গা ছিল। আমরা প্রায়ই সেখানে যেতাম। ওখানকার রুটি আমার বাসার নিয়মিত খাবার ছিল। ওই হামলা বিদেশিদের শঙ্কিত করে তুলেছে। কারণ অনেকে ওই হামলার গোলাগুলির শব্দ নিজ কানে শুনেছে, কোনো পত্রিকা পড়ে বা টিভিতে দেখে নয়।
নীপিন গঙ্গাধর আরো জানান, সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে তার বিদেশি বন্ধুরা আরো কিছুটা সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান। মূলত নিজেদের এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা কাজ করছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে একটি ভারতীয় এয়ারলাইন্সের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন শ্রীলঙ্কান নাগরিক জে এফ মার্জিয়া। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, এটা একটা সুন্দর দেশ। ২৫ বছর আগে এই দেশে এসে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এখনো ভালো লাগে। তবে সাম্প্রতিককালের ঘটনা খানিকটা উদ্বিগ্ন করেছে। এখন সতর্কভাবে চলাফেরা করি।
গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর কূটনৈতিক এলাকার বিদেশি নাগরিকদের বাড়তি নিরাপত্তা দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দূতাবাসগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। নিরাপত্তার স্বার্থে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে বিদেশিদের চলাফেরায়। তবে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেছেন, গুলশান এত জনবহুল যে এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছিদ্র করা সম্ভব নয়। কারণ অনেক মানুষ এখানে প্রতিদিন বাইরে থেকে আসেন।
পরপর দুটি বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা বিপাকে ফেলেছে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি আয়ের উৎস তৈরি পোশাক খাতকে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওই ঘটনার পর ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে চাইছেন না। পোশাক খাতে কমর্রত বেশ কিছু বিদেশি নাগরিক নিজ দেশে ফিরে গেছেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক ক্রেতা সাময়িকভাবে আসতে চাইছেন না। অনেকে তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে বৈঠক করতেও অনুরোধ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে কোনো ক্রয়-আদেশ এখনো বাতিল হয়নি। কোনো বিদেশি কোম্পানির ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তও জানা যায়নি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে কার্যাদেশ (অর্ডার) কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, আশঙ্কা করছি যারা বেশি অর্ডার দিত তারা কমিয়ে দিতে পারে। গ্রীষ্মকালীন ক্রয়াদেশের জন্য আমাদের জুলাই থেকে নেগোসিয়েশন শুরু হয়। আল্লাহ না করুক এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে আশঙ্কা তখন অ্যাবসলিউট হয়ে যাবে।
২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি বা এনএসইউ’র পাঁচ ছাত্র। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এরা সকলেই ছিল আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য। ওই ব্যবসায়ী বলেন, অনেক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের বদলে দিল্লী, ব্যাংকক ও হংকংয়ে সভা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া নিজ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ। তবে ২৮টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের জোট ‘আল্যায়েন্স’ বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট ‘অ্যাকর্ড’ বাংলাদেশে কর্মরত ইউরোপীয় কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশে বিদেশিরা আতঙ্কে আছেন -ডয়চে ভেলে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ