Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের অবস্থা

প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। কিন্তু সন্ত্রাসের আশঙ্কা সেখানকার মুসলমানদের ভবিষ্যৎ জটিল করে তুলেছে।
বহু আমেরিকান কীভাবে মুসলমান?
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলমানদের সংখ্যা ৩৩ লাখ। ফলে ইসলাম হচ্ছে খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মের পর যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বহু জাতি-গোষ্ঠির দেশ যাদের মধ্যে আফ্রিকান-আমেরিকান, দক্ষিণ এশীয় ও আরবরা। আমেরিকানদের ২৯ শতাংশের যেখানে কলেজ ডিগ্রি আছে সেখানে মুসলমানদের ৪০ শতাংশের কলেজ ডিগ্রি রয়েছে। মুসলিমরা যদিও মার্কিন জনসংখ্যার এক শতাংশ মাত্র, দেশের চিকিৎসকদের ১০ শতাংশ তারা। তাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছেন মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলি, নগর স্থপতি ফজলুর রহমান খান, কার্ডিওথোরাসিক সার্জন ও টিভি ব্যক্তিত্ব মাহমুদ ওজ। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার সময় থেকে আমেরিকার মুসলমানদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হয়। ইসলামিক স্টেটের উত্থান এবং সান বার্নার্দিনো, অরল্যান্ডো এবং ইউরোপের ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে হামলার ঘটনায় তা আরো জোরালো হয়েছে। কিছু উগ্রপন্থীর ঘৃন্য কাজের জন্য দায়ী করা হচ্ছে আমেরিকান মুসলিমদের ক্ষোভকে। পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সুয়াদ আবদুল খাবির বলেন, মুসলমানরা আলাদা কিছু নয়। আমরা আমেরিকান যাদের ইতিহাস শুরু হয়েছে এ দেশের ইতিহাসের সময় থেকে।
আমেরিকায় প্রথম ইসলামের আগমন
এদেশে সর্বপ্রথম যে মুসলমান আসেন বলে জানা যায় তিনি হলেন মরক্কোর একজন দাস। তার নাম এস্তেভানসিও। তিনি জাহাজডুবি হয়ে স্প্যানিয়ার্ডদের সাথে ১৫২৮ সালে টেক্সাসের অধুনা গ্যালভেস্টনে আসেন। তিনি আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অভিযানে সাহায্য করেন। যুক্তরাষ্ট্রে যেসব আফ্রিকান দাস আসেন তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ছিলেন মুসলমান। ঊনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের প্রথম দিকে তুরস্ক, সিরিয়া ও লেবানন থেকে মুসলমানরা আমেরিকায় আসেন। তারা ব্যাপক সংখ্যায় মধ্যপশ্চিমে বসতি স্থাপন করেন। তারপর বসনিয়া, আলবেনিয়া ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকেও আমেরিকায় আসেন মুসলমানরা। সরকার কোটা পদ্ধতি তুলে নিলে গত শতকের ’৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম আগমন বাড়তে থাকে। অনেক আফ্রিকান-আমেরিকান ইসলাম গ্রহণ করে। গত শতকের শেষদিকে মুসলান আগমন আবার বৃদ্ধি পায়। আজকের আমেরিকান মসিলিমদের ৪৫ শতাংশই আসে ১৯৯০-এর পর। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের সংখ্যা যেখানে ছিল ৯৬২, ২০১১-সালে তা এসে দাঁড়ায় ২০১৬-তে।
মুসলিমরা কি ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে?
২০১১ সালে পিউ-এর এক জরিপে দেখা যায়, মুসলমানরা আমেরিকার সমাজে অত্যন্ত ভালোভাবে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। ৮০ শতাংশের বেশী মুসলিম আমেরিকার জীবনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ৬৩ শতাংশ মুসলিম বলেন যে, ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আধুনিক জীবনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আগত ৭০ শতাংশ মুসলমানই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পেরেছেন যেখানে অন্যান্যদের হয়েছে ৫০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীতে ৬ হাজার মুসলমান কর্মরত রয়েছেন। এফবিআই বলে, মুসলিম উগ্রপন্থীদের সম্পর্কে অধিকাংশ তথ্যই আসে মুসলমানদের কাছ থেকে।
উগ্রপন্থা কি উদ্বেগজনক নয়?
হ্যাঁ, এ ইন্টারনেট যুগে তা অবশ্যই উদ্বেগজনক। এফবিআইর ডেট্রয়েট অফিসের সাবেক পরিচালক অ্যান্ডি অ্যারেনা বলেন, ইসলামিক স্টেট ও অন্যান্য সন্ত্রাসী সংস্থাগুলো তরুণদের প্রলুব্ধ করার জন্য সামাজিক মাধ্যম ও ভিডিও ব্যবহার করছে। বিশেষ করে অভিবাসী কিশোর-তরুণরা তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। যেমন বোস্টন ম্যারথনে বোমা হামলাকারী তামের লান ও জোহার সারনায়েভ, সান বার্নার্দিনোর ঘাতক সৈয়দ রিজওয়ান ফারুক ও অরল্যান্ডো হামলাকারী ওমর মতিন। সাবেক সিআইএ পরিচালক মাইকেল হেডেন বলেন, এ দ্বিতীয় প্রজন্মের আমেরিকানরা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ব্যাপারে বিভ্রান্ত। তারা না শিকড় গাড়ে অতীতে না গহণ করতে পারে বর্তমানকে। ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসরণ করলে তারা এ বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হতে পারে।
সমস্যা কতটা গুরুতর
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা যে, ২৫০ জন আমেরিকান তরুণ ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়ার চেষ্টা করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে যত মুসলমান ইরাক ও সিরিয়ায় গেছে তাদের তুলনায় এ সংখ্যা অনেক কম। এ আমেরিকান তরুণদের অধিকাংশই অভিবাসী সোমালি সম্প্রদায়ের। তারা বেশীরভাগই গেছে টাকার লোভে, বলেন মিনেসোটার সোমালি আমেরিকান পিতা-মাতা সমিতির পরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদ।
মুসলমানরা কি গৃহীত হবে?
এটা এখনো দেখার বিষয়। উচ্চ জন্মহারের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ আমেরিকান মুসলিদের সংখ্যা ৮০ লাখে দাঁড়াবে। ইহুদিদের ছাড়িয়ে তারা তখন হবে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়। তবে এই সন্ত্রাসের সময়, অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্য রাজনীতিকদের যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অভিবাসন নিষিদ্ধ বা মুসলিমদের মনিটর করার আহ্বানের প্রেক্ষিতে মুসলমানরা উদ্বিগ্ন। অনেক মুসলমান বলছেন, তারা স্কুল ও আশপাশের স্থানে মুসলিমবিরোধী মনোভাবের শিকার হচ্ছেন এবং তা বাড়ছেই, কমছে না। নিউইয়র্কের ১৬ বছরের কিশোরী হেবহ জামাল বলে, আমাকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, গোটা বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে। সূত্র দি উইক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের অবস্থা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ