পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে ‘অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’ জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির মধ্যে তিনজন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ও তিনজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) অর্থদাতা খালেদ সাইফুল্লাহ্ ওরফে সগির বিন এমদাদ এ বছর দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। মনিরুল ইসলাম বলেন, কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহতদের মধ্যে তাজ-উল-হক রাশিক, আকিফুজ্জামান খান, সাজাদ রউফ ওরফে অর্ক নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র। অন্যদিকে আব্দুল্লাহ, আবু হাকিম নাইম, রায়হান খান ছিলেন মাদ্রাসা ছাত্র। আর মো. জোবায়ের হোসেন নোয়াখালীর গভর্নমেন্ট কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন ও মো. মতিয়ার রহমান চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন বলে জানা গেছে।
কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে তাজ মঞ্জিল নামের ছয় তলা একটি ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযানে গিয়ে সোমবার রাতে হামলার মুখে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। পরে মঙ্গলবার ভোরে সেখানে সোয়াটের বিশেষ অভিযানে নিহত হন সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি।
মঙ্গলবার রাতে নিহত নয়জনের ছবি প্রকাশ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে সবার কাছে তথ্য চায় পুলিশ। তাদের মধ্যে সাতজনের আঙুলের ছাপের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত আঙুলের ছাপের মিলিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় পরিচয় প্রকাশ করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
তারা হলেনÑ দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ (২৩), পটুয়াখালীর আবু হাকিম নাইম (২৪), ঢাকার ধানমন্ডির তাজ-উল-হক রাশিক (২৫), ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান (২৪), ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক (২৪), সাতক্ষীরার মতিউর রহমান (২৪) এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন (২২)।
এদের মধ্যে সেজাদ রউফ যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ এই যুবক গুলশানে ক্যাফেতে হামলাকারী নিবরাস ইসলামের বন্ধু ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল বলেন, কল্যাণপুর অভিযানে নিহত জঙ্গি আকিফুজ্জামান (পিতা সাইফুজ্জামান) পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েম খানের নাতি। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। অর্ক এবং রাশিকও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর রায়হান, আব্দুল্লাহ ও নাঈম পড়াশোনা করেছেন মাদ্রাসায়। রায়হান কবিরের ছদ্মনাম তারেক। সে আশুলিয়ার বারুইপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত ছিল এবং পুলিশের খাতায় তার নাম লেখা ছিল তারেক বলে। তাকে পুলিশ খুঁজছিল। গত বছর ৪ নভেম্বর আশুলিয়ার বারুইপাড়া এলাকার একটি পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির সময় ছুরিকাঘাতে এক কনস্টেবলকে হত্যা ও চারজনকে জখম করে জঙ্গিরা।
ব্রিফিংয়ে মনিরুল বলেন, রায়হান কবির গুলশান হামলাকারীদেরও প্রশিক্ষক ছিল। তাকে আমরা তারেক নামে চিনতাম। গুলশানে হামলার আগে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের একটি চরে সাতজনকে ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল, যাদের মধ্যে গুলশান হামলাকারীরাও ছিল। তাদের দুই প্রশিক্ষকের একজন ছিল রায়হান ওরফে তারেক। মনিরুল ইসলাম জানান, সাইফুল্লাহ ও তার সহযোগীরা ঢাকা থেকে ওইসকল সদস্যর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হতে আর্থিক সাহায্য সংগ্রহ করে। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে ৫১টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তার তালিকা পাওয়া গেছে।
মনিরুল জানান, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-পূর্ব) ২১ জুলাই হুজি ঢাকা মহানগরীর কমান্ডার মাওলানা মো. নাজিমুদ্দীন শামীমসহ তিন সক্রিয় সদস্যকে বই ও প্রচারপত্রসহ আটক করে। তাদেরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, হুজি ঢাকা মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ্ ওরফে সগির বিন এমদাদ। খালেদ সাইফুল্লাহর বাংলাবাজারে মাকতা বাবুল কোরআন নামে একটি নিজস্ব প্রকাশনা রয়েছে। ওই প্রকাশনীর মাধ্যমে সে উগ্রপন্থী বই প্রকাশ ও প্রচার করে হুজির সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করে আসছে। তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ ঐ প্রকাশনায় অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার জিহাদী বই জব্দ করে বলেও জানান তিনি।
মনিরুল জানান, খালেদ কৌশলে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যায়। তিনি মিরপুর এলাকার মসজিদের ঈমাম ছিলেন। গ্রেফতারকৃতরা মিরপুর এলাকার সাংবাদিক কলোনিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত।
সাধারণ মানুষকে ধর্মের কথা বলে আর্থিক সহায়তা নিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্যরা। এ অর্থ দিয়ে সংগঠন পরিচালনাসহ জিহাদে হতাহত সদস্যদের পরিবারকে সহায়তা করত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।