Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আপত্তিকর দৃশ্য দেখে ফেলায় বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়

সাভারের তিন কিশোর হত্যাকান্ড

প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে : সাভারের হেমায়েতপুরে এক ঘরের ভেতর থেকে দুই সহদোরসহ তিন কিশোরের লাশ উদ্ধারের পর তাদের মৃত্যুর রহস্য প্রায় দুই মাস পর উদ্ঘাটন করেছে র‌্যাব। গ্রেফতার করেছে মা ও তার প্রেমিককে।
গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সন্তানদের হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন নাসরিন আক্তার।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেÑ নাসরিন আক্তার ও তার প্রেমিক কেরু মানিক ওরফে কেরু ডাকাত। র‌্যাব-৪ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমন আহমেদ শাওন জানান,  গত ১৪ মে রাতে হেমায়েতপুর এলাকার মেসার্স প্রান্ত ডেইরি ফার্ম-২ এর কর্মচারী জিয়াউর রহমানের ছেলে জীবন (১৬), নাসির (১৫) ও তাদের ফুফাতো ভাই শাহাদাত  হোসেনের (১৬) মৃতদেহ একটি বদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। শাহাদাতের বাবার নাম মৃত আতিয়ার হোসেন। তাদের বাড়ি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার মাগুরা উত্তর ঝুম্মাপাড়া এলাকায়।
তবে পুলিশ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিন কিশোরের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এরই মধ্যে ঘটনাটি তদন্তে এবং হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে মাঠে নামে র‌্যাব।
ঘটনার দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা রুজু করার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিলে সন্দেহ হয় র‌্যাবের। পরে বুধবার র‌্যাব-৪ সাভার ক্যাম্পে জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তারকে ডেকে আনা হয়।
র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নাসরিন আক্তার প্রেমিকের সহযোগিতায় দুই সন্তান ও ভাগিনাকে ভাতের সাথে বিষ খাইয়ে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।
যে কারণে হত্যা করা হয় তিন কিশোরকে : র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমন আহমেদ শাওন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে নাসরিন আক্তার জানান, সাভারের জয়নাবাড়ী এলাকায় ভাড়া থাকা অবস্থায় প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া কেরু মানিকের সাথে পরিচয় হয় তাদের।
তখন নাসরিন বেগমের সাথে কেরু মানিকের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠলে তার স্বামী জিয়াউর রহমান জানতে পারলে কেরু মানিককে তাড়িয়ে দিলে সে মিরপুরে গিয়ে বসবাস শুরু করে। আর নাসরিন ও তার পরিবার হেমায়েতপুরের প্রান্ত ডেইরি ফার্মে বসবাস শুরু করে।
কিন্তু কেরু মানিক ও নাসরিনের অবৈধ সম্পর্ক চলতেই থাকে। তার স্বামীর অবর্তমানে কেরু মানিক ডেইরি ফার্মের ঐ বাসায় যেত। একদিন নাসরিনের বড় ছেলে জীবন তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে এবং কেরু মানিককে তাদের বাসা থেকে বের করে দেয়।
এরপর মানিক নাসরিনের সাথে মিলে ছেলেদের ও স্বামী জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে নিজেরা বিয়ে করার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার রাতে কেরু মানিক হেমায়েতপুরে যায় এবং মেহমান সেজে মেয়ের বিয়ের দাওয়াত নিয়ে জিয়াউরের বাসায় আসে এবং নাসরিনের কাছে একটি বিষের শিশি লুকিয়ে রাখতে দেয়।
জিয়াউরের সাথে ঘরের বাইরে গিয়ে কেরু সিগারেট খেয়ে আবার ঘরে প্রবেশ করে। ঘরে এসে নিজে নাসরিনের নিকট থেকে ভাত চেয়ে খায়। পরে আরো ভাত নিয়ে ও বিষের শিশি ফেরত নিয়ে ভাতের সাথে সেই বিষ মেশায়। তখন নাসরিন সাবধানে কাজ করার জন্য পরামর্শ দেয়।
কেরু মানিক সেই বিষ মেশানো ভাত খাওয়াবার উদ্দেশ্যে পাশের রুমে যায় এবং নাসির, জীবন ও শাহাদতকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। নাসরিন বাইরে থেকে ভাত খাওয়াতে দেখে ঘুমাতে ঘরে চলে যায়। পরদিন তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
নাসরিনের স্বীকারোক্তির পর জিয়াউর রহমান বাদি হয়ে বুধবার রাতে সাভার মডেল থানায় ৩০২/৩৪ ধারায় নাসরিন ও তার প্রেমিক কেরু মানিকের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা (নং-২৫) দায়ের করে।
পরে র‌্যাব-৪ গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে কেরু মানিককে আমিনবাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেও একই বর্ণনা দিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আপত্তিকর দৃশ্য দেখে ফেলায় বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ