Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সবাই মিলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করতে হবে

জঙ্গিরা বিদেশ থেকে দিকনির্দেশনা পাচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : সন্ত্রাসবাদ এখন একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এ সমস্যাকে সবাই মিলে মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশের সন্ত্রাসীরা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছ থেকে কোনো দিকনির্দেশনা পাচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এ ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চরমপন্থী সহিংসতা : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা বলেন। বিআইআইএসএস-এর  চেয়ারম্যান রাষ্টদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুর রশীদ। সেমিনারে অংশ নেন সেনা-নৌ-বিমান বাহিনী কর্মকর্তা, বিজিবি ও আনসার কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকরা। এছাড়াও সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, কোরিয়া, ইরানসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গি দমন দেশে ইতোমধ্যে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার দেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। তারপরও সমাজের সবাইকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্র মতবাদের চক্র ভাঙতে সরকার বদ্ধপরিকর। এই সন্ত্রাসী ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে তা  বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদবিরোধী কমিটি এবং কমিউনিটি পুলিশিং জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তরুণদের ধর্মীয় উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে পড়া থেকে রক্ষা করতে সরকার তাৎক্ষণিক এবং স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়ারও চিন্তাভাবনা করছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে দেশে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠতে শুরু করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে আমরা নাগরিক সমাজ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং  বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা করছি। সব শ্রেণীর মানুষ এগিয়ে আসছে।
মাহমুদ আলী আরো বলেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলো থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, কায়েমি একটি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং অগ্রগতি থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। তারা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক এবং নিরাপত্তীনতার ভীতি সৃষ্টি করতে চায়। তারা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ ও সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষতিগ্রস্তও করতে চায়, বলেন মন্ত্রী। এ কাজে তারা ধর্মকে ব্যবহার করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ পর্যায়ে তিনি ‘গ্লোবাল কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড এনগেজমেন্ট ফান্ডের’ (জিসিইআরএফ) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার কথা জানান। সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা জিসিইআরএফ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাস ঠেকাতে সহায়তা দিয়ে থাকে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ বলেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলোর প্রকৃতি নিয়ে অনেক সময়ই ভুল অর্থ দাঁড় করানো হয়েছে। তারা (সন্ত্রাসী) দেশীয় সন্ত্রাসী, যারা স্থানীয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছে। জঙ্গি মদদে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ১৯৯২ সালের পর  থেকে এই দু’টি দলকে কখনই হামলার লক্ষ্য করা হয়নি। আব্দুর রশীদ বাংলাদেশের সহিংসতার বর্তমান অবস্থা ও এর প্রকৃতি তুলে ধরেন।
দিনব্যাপী এ সেমিনারে বিকেলে সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। এতে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হক। সকালে সেমিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান জানান, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার  প্রেক্ষাপটেই তাদের এই সেমিনার। ওয়ার্কিং সেশনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির। এসময় বিআইআইএসএসের রিসার্চ ফেলো এম আশিক রহমান বৈশ্বিক সহিংসতার পরিবর্তনশীল অবস্থার কথা তুলে ধরেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান শাহাব এনাম খান গুলশানের আর্টিসান রেস্টুরেন্টে সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রশংসা করেন। তিনি বৈশ্বিক সন্ত্রাসের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। জামিয়া ইকরা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ চরমপন্থী সহিংসতা বিষয়ে ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্যা দেন। মনোবিদ ডা: মেখালা সরকার সহিংসতার পেছনে তরুণদের মানসিক প্রেরণা নিয়ে আলোচনা করেন।
দ্বিতীয় ওয়ার্কিং সেশনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন। এসময় প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: জিয়াউর রহমান তরুণদের গঠনমূলক কাজে অন্তর্ভুক্তকরণ বিষয়ে আলোচনা করেন। এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী (অব:) অংশীদারগণের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক কর্মকা-ের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মনজুর ব্যবসা ক্ষেত্রে সহিংসতার প্রভাব বিষয়ে আলোচনা করেন। পুলিশের এআইজি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা ও পরিবর্তনশীল চাহিদার কথা তুলে ধরেন। মুন্সী ফয়েজ আহমদ চরমপন্থা সহিংসতা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দেশ ও  দেশের বাইরের সব অংশীদারকে একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সবাই মিলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করতে হবে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ