Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রফতানিতে গতিশীলতার সম্ভাবনা

প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেনাপোল অফিস : বেনাপোল ও পেট্রাপোলে সমন্বিত চেকপোস্ট উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। আমদানি-রফতানি ব্যবসা প্রসারে এ উদ্যোগ সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে এবং দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে এমনটি আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্বোধন করেন বেনাপোল বন্দর। সময়ের পরিক্রমায় বন্দরের অবকাঠামো গড়ে উঠলেও সীমান্তের ওপারের পেট্রাপোলে তেমন অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। যে কারণে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। সম্প্রতিকালে দু’দেশের মধ্যে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছিল। যে কারণে পেট্রাপোলে পূর্ণাঙ্গ বন্দর গড়ে তোলার দাবি ছিল ব্যবসায়ীদের।
২০০১ সালে ভারত সরকার ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও তা চালু হতে পার হয়ে গেছে ১৫ বছর। দেরিতে হলেও পেট্রাপোলে বন্দর নির্মাণ ও সমন্বিত চেকপোস্টের উদ্বোধন হওয়ায় দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ইতিপূর্বে ভারত থেকে আমদানিটা বেশি হতো। কিন্তু এখন বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন প্রায় তিনশ’ ট্রাক পণ্য রফতানি হয় ভারতে কিন্তু পেট্রাপোল বন্দরের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বাংলাদেশ ব্যবসায়ীদের খুব সমস্যা হচ্ছিল। উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের দাবির কারণে আজ নতুনভাবে বেনাপোল পেট্রাপোল সমন্বিত ইন্ট্রিগেটেড চেকপোস্টের বন্দর উদ্বোধন হলো। এটা ব্যবসার ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করবে। তবে এর পাশাপাশি বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নও প্রয়োজন। আর সেটি সম্ভব হলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ বন্দর দিয়ে সরকারের ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় সম্ভব।
ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের বন্দর সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, নতুন এ চেকপোস্টের ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দু’দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। ফলে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ৮/৯ দিন ধরে আমদানিকৃত কোনো পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে থাকবে না। বাংলাদেশী আমদানিকারকদের ট্রাক ড্যামারেজের নামে আর হাজার হাজার টাকার লোকসান গুনতে হবে না। পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় কালিতলা পার্কিং ও মক্কেলের পার্কিংয়ে দিনের পর দিন পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে রেখে প্রতিদিন ট্রাকপ্রতি ২ হাজার টাকা করে ড্যামারেজের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে।
আমদানিকারক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন আগে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ ট্রাক মালামাল আমদানি হতো সমন্বিত চেকপোস্ট উদ্বোধনের ফলে ৫শ’ থেকে ৬শ’ ট্রাক মালামাল আমদানি সম্ভব। পেট্রাপোল বন্দরে যদি বহিরাগত চাঁদাবাজদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যায়। আগে একটি ট্রাক বেনাপোল বন্দরে আসতে দশ দিন সময় লাগত। রফতানির ক্ষেত্রেও একই সমস্যা ছিল। তবে এ চেকপোস্টের ফলে আমরা ব্যাপক সুফল পাব বলে মনে করছি।
তবে বাংলাদেশী ট্রাক চালকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, নতুন চেকপোস্ট ও টার্মিনালের কারণে তাদের ভোগান্তি বেড়েছে।
আ: ওয়াহিদ নামে এক ট্রাক চালক বলেন, পেট্রাপোলে নতুন বন্দর বাংলাদেশী চালকদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। সেখানে পানি খাওয়ার টিউবয়েল নেই। সেখানে কোনো খাবার ক্যান্টিন নেই। রাতে থাকারও ভালো ব্যবস্থা নেই। অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশ দেখিয়ে দেশে ফিরে আসারও কোনো সুযোগ নেই।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মারুফ হোসেন জানান, নতুন সমন্বিত ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট উদ্বোধনের ফলে দু’দেশের মধ্যে আমদানি রফতানি বাণিজ্য দ্রæত সম্পন্ন হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। ফিরে আসবে কাজের গতিশীলতা। তিনি বলেন ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা সেখানে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ৯০ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, ২ হাজার ৪৭২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, আদায় হযেছে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ২৯ রাখ টাকা। ৮৫ কোটি ৬১ লাখ টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক আ. জলিল জানান, ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৩ মে. টন পণ্য আমদানি হযেছে ভারত থেকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রফতানিতে গতিশীলতার সম্ভাবনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ